লালপুরে আ.লীগ নেতা হত্যায় গ্রেপ্তার ৫
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান গনিকে কুপিয়ে ও হাত পায়ের রগ কেটে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩) আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেলা হতে পাঠানো হয়েছে।
নিহত ওসমান গনির ভাতিজা কুতুব উদ্দিন বাদি হয়ে রোববার রাতে ২৫ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। সেই মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তরকৃতরা হলেন, এজাহার নামীয় আসামি উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের পুকুরপাড়া চিলান গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে মো. মহসিন আলম (২৮), মৃত তৈয়ব আলী সরদারের ছেলে মো. মোখলেসুর রহমান, ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মৃত নসিম উদ্দিন প্রামানিকের ছেলে মো. আব্দুল লতিফ প্রামানিক (৫৫) এবং তদন্তে প্রাপ্ত আসামি দুয়ারিয়া গ্রামের নওশাদ আলীর ছেলে মো. নাদিম (৩৪), আফসার আলীর ছেলে মোহা. জাকিরুল ইসলাম।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, এই গ্রামে কিছুদিন আগে একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খুন হয়েছিলেন। ওই ঘটনার জের ধরে আজ একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ওসমান গণির মরদেহ উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ খুনের ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে সোমবার আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেলা হতে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত
ব্যক্তিদের আটকে অভিযান চলছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
উল্লেখ্য নাটোরের লালপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান গণি প্রামাণিককে (৪৫) হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩) সকালে উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের ডাঙ্গাচিলান গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তি ডাঙ্গাপাড়া চিলান গ্রামের
মৃত আখের আলীর ছেলে, কদিমচিলান ইউনিয়নের
৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কদিমচিলান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক মৃধা হত্যা মামলার ১নং আসামি ছিলেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ৭টার দিকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলের তেল কেনার জন্য বের হন ওসমান গণি প্রামানিক। স্থানীয় একটি দোকানে তেল কিনে জাহাঙ্গীরের চায়ের দোকানে চা খেয়ে বের হওয়ার পর তাঁকে ঘিরে ধরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তারা ওসমান গণিকে কুপিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে ও
লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এদিকে ঘটনার আকস্মিকতায় চায়ের দোকানদারসহ আশপাশের লোকজন সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। ওসমান গণির মৃত্যু নিশ্চিত হলে হামলাকারীরা চলে যান।
নিহতের ভাই আফছার আলী বলেন, এ বছরের জানুয়ারিতে স্থানীয় কদিমচিলান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক মৃধা খুন হন। ওই খুনের মামলায় ওসমান গণিকে আসামি করা হয়। মামলাটি এখন চলমান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করি। আমরা বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামের অনুসারী। অন্যদিকে, হামলাকারীরা সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালামের অনুসারী। সাবেক চেয়ারম্যান খুনের পর থেকেই তাঁর অনুসারীরা আমাদের খুন–জখমের হুমকি দিয়ে আসছিল। রোববার সকালে আচমকা হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষ নুর বক্সের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল করিম (৪৫), আব্দুস সাত্তারের ছেলে সাইফুল ইসলামসহ (২৫) কয়েকজন আমার ভাইকে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, উভয় পক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের পাল্টাপাল্টি হত্যার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, হামলাকারিরা ওসমানের প্রতিপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছিলেন।সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউলের নেতৃত্বে হামলা হয় বলে তিনি লোকমুখে শুনেছেন।
এদিকে নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম, লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা সুলতানা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) আরাফাত আমান আজিজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এর আগে কদিমচিলান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মৃধা ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ১ জানুয়ারি বেলা তিনটার দিকে উপজেলার ডাঙ্গাপারা চিলান এলাকায় সন্ত্রাসীরা তাঁকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বনপাড়া আমিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল করিম বলেন, ডাঙ্গাপাড়া চিলান গ্রামের ওসমান গনির সঙ্গে মোজাম জোয়ার্দ্দারের জমি-সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধ নিরসনের জন্য কদিমচিলান ইউনিয়ন পরিষদে সালিস হয়। ওই সালিসে প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক মৃধা। এ ঘটনায় গত ৪ জানুয়ারি এজাহার নামীয় ৭ জনের নামে থানায় মামলা হয়।
সাম্প্রতিক মন্তব্য