logo
news image

বাবা-মেয়ের একসঙ্গে এসএসসি পাশের স্বপ্ন পূরণ

ইমাম হাসান মুক্তি, লালপুর (নাটোর)
নাটোরের লালপুরে বাবা-মেয়ের একসঙ্গে এসএসসি পাশের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলে মেয়ে জিপিএ ৩.৭২ পেয়ে ও বাবা জিপিএ ৪.০৭ পেয়ে কৃতকার্য হন।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট ২০২৩) তাঁদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার গোপালপুর রেলগেটের চা বিক্রেতা মো. আব্দুল হান্নান (৪০) ও তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুন (১৫) এ বছর (২০২৩) এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। হালিমা খাতুন নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুলের মানবিক বিভাগ থেকে লালপুর শ্রী সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। আর আবদুল হান্নান রুইগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি (ভোকেশনাল) শাখায় লালপুর থানা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন। গত ২৮ জুলাই প্রকাশিত পরীক্ষা ফলাফলে মেয়ে জিপিএ ৩.৭২ পেয়ে কৃতকার্য হলেও বাবা পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে অকৃতকার্য হন। ফলাফলে মন খারাপ হলেও নির্ধারিত সময়ে অনলাইনে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে খাতা পূন:মূল্যায়নের আবেদন করেন। গত সোমবার (২৮ আগস্ট ২০২৩) প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ ৪.০৭ পেয়ে কৃতকার্য হন।
উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হান্নান বলেন, তিনি ২৫ বছর আগে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন। পড়াশোনা ছেড়ে তখন চায়ের দোকান দেন। একপর্যায়ে সংসার  পাতেন। পরিবারে এখন হান্নানের স্ত্রী, দুই ছেলে ও একমাত্র মেয়ে রয়েছে। মেয়ে হালিমা খাতুন এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এসএসসি পাস না করা আক্ষেপ থেকে দুই যুগ পর এবার তিনিও পরীক্ষা দেন।
আবদুল হান্নান আরও বলেন, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাইস্কুলের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। আর্থিক টানাপোড়েনে পড়াশোনা ছেড়ে পেটের তাগিদে গোপালপুর রেলগেটে চায়ের দোকান খুলে বসেন। বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখের সংসার পেতেছেন। কিন্তু এসএসসি পাস করার ইচ্ছা থেকে রুইগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোকেশনাল শাখায় ভর্তি হয়ে এসএসসির ফরম পূরণ করেন। চা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে পরীক্ষার প্রস্তুতিও নেন। ঠিক পরীক্ষা শুরুর আগের দিন পরিবারের সবাইকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা জানান। দীর্ঘদিন পর আশা পূরণ হওয়ায় তিনি অত্যন্ত খুশি।
বাবার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে পাস করায় আনন্দিত মেয়ে হালিমা খাতুন বলে, ‘যখন শুনলাম বাবা আমার সঙ্গেই পরীক্ষা দিচ্ছে, তখন থেকেই আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। এখন লোকজনকে বলতে পারব, আমার বাবাও এসএসসি পাস। সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
প্রতিবেশি উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, মেয়ের সঙ্গে বাবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে যেন গ্রামের মানুষের কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। তাদের এই সফলতায় গ্রামের মানুষ অনেক খুশি হয়েছেন। তারা ব্যতিক্রম উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, বাবা-মেয়ের একসঙ্গে এসএসসি পাস প্রশংসার দাবিদার। এটা আনন্দের খবর। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মনোবলের জন্য মেয়েকে শিক্ষিত করার পাশাপাশি বাবা নিজেও আবার পড়াশোনা শুরু করে কৃতকার্য হয়েছেন। তাদের দুজনের জন্য শুভকামনা।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top