মায়ের কান্নায় অভিমানে প্রাণ বিসর্জন
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৮০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় মোছা. মুসলিমা আক্তার মোমো। এই ফলাফলে তার মা কান্নাকাটি করতে থাকেন। মায়ের কান্না দেখে সে নিজেও কাঁদতে থাকে। অভিমানে প্রাণ বিসর্জনের পথ পেছে নিয়ে একপর্যায়ে নিজেদের ঘরে তীরের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
শুক্রবার (২৮ জুলাই ২০২৩) নাটোরের লালপুরে এসএসসির ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় উপজেলার জৈতদৌবকী গ্রামের মো. মহসিন আলীর মেয়ে মোছা. মুসলিমা আক্তার মোমো (১৬) ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
নিহতের বাবা মো. মহসিন আলী বলেন, তাঁর মেয়ে মোমো দীর্ঘদিন ধরে পেটের পীড়ায় অসুস্থ ছিল। এই অবস্থাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৩.৮০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। বেলা সোয়া ১০টার দিকে ফলাফল পেয়ে তারা অনেক খুশি হন। কিন্তু তার স্ত্রী ফলাফল খারাপ হওয়ায় আত্মীয়দের কাছে কান্নাকাটি করতে থাকে। তা দেখে মেয়েও কান্নাকাটি করতে থাকে। তবে এ নিয়ে মেয়েকে কোন রকম কটু কথা বলেননি। দুপুরে খবর পেয়ে বাড়িতে এসে দেখেন ঘরে তীরের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আদরের সন্তান এভাবে চলে যাবে ভাবতেই পারেননি।
স্থানীয়রা জানায়, নিহতের বাবা মো. মহসিন আলী একজন স্বর্ণকার। লালপুর কলেজ মোড়ে তাঁর দোকান। একমাত্র ছেলে এইচএসসি পাশ করে একটি কোম্পানীতে চাকুরী করেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে সুষ্ঠুভাবেই জীবনযাপন করেন। মেয়ে মোমো শান্ত স্বভাবের। একাকী থাকতে পছন্দ করতো। এ মেয়ে এমন কাজ করতে পারে কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না।
লালপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী তপন কুমার রায় বলেন, এ বছর বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ১৭৭ জনের মধ্যে ১৪৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫ জন। পাশের হার শতকরা ৮৩.৬১ ভাগ। বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল মোছা. মুসলিমা আক্তার মোমো। অসুস্থতার জন্য নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতো না। মধ্যম ধরণের শিক্ষার্থী ছিল সে। তার জন্য প্রাপ্ত ফলাফল সন্তোষজনক।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুরুজ্জামান শামীম বলেন, উপজেলায় সম্প্রতি উদ্বেগজনক হারে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষ করে তরুণ-যুবদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, তুচ্ছ বিষয়ে আত্মহত্যা করছে ছেলে-মেয়েরা। এ সমস্যা প্রতিরোধে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও সামাজিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। তা না হলে তরুণ সমাজকে এই অপরাধ থেকে রক্ষা করা সম্ভব না।
সাম্প্রতিক মন্তব্য