লালপুরে বিএনপির কমিটি স্থগিত ও শোকজ গঠনতন্ত্র পরিপন্থী
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত করেছে জেলা বিএনপি। একই সঙ্গে ১০টি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি কেন বাতিল করা হবে না এবং উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। লালপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি ঘোষণার এক সপ্তাহ পর বঞ্চিত নেতাদের অভিযোগের কারণে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ।
শনিবার (৬ মে ২০২৩) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি এ কমিটি স্থগিত ও শোকজ গঠনতন্ত্র এবং বিএনপির কনভেনশনাল রাজনীতির পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন ও সদস্য সচিব হারুনার রশিদ পাপ্পু।
লালপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনার রশীদ পাপ্পু বলেন, তারা কোনো অনিয়ম করেননি। সব নিয়ম অনুসরণ করেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। শোকজ নোটিশের জবাবও জেলা নেতাদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই দেবেন।
লালপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডাক্তার ইয়াসির আরশাদ রাজন বলেন, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতিটি ইউনিয়ন এ কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে থানা আহবায়ক কমিটির সকল যুগ্ম আহবায়ক এবং সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি স্থগিত ও শোকজ গঠনতন্ত্র এবং বিএনপির কনভেনশনাল রাজনীতির পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এটি দলীয় অভ্যন্তরীন বিষয় হওয়া সত্বেও বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হওয়ায় সাংবাদিক ও বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যার কারণে শোকজের জবাব দেওয়ার আগেই তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদের নিকট এই প্রেস রিলিজ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল বলেন, ‘আমি চিঠি দেখেছি এবং বিষ্মিত হয়েছি। গত ২৪ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে লালপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কমিটি অনুমোদন দেওয়া পর্যন্ত নাটোর জেলা কমিটি কর্তৃক কোন ইউনিয়ন সম্পর্কে কোন ধরনের অভিযোগ লিখিত কিংবা মৌখিকভাবেও লালপুর উপজেলা আহবায়ক কমিটিকে জানানো হয়নি। কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টি ইউনিয়নে কিছুটা দ্বিমত থাকায় ওই ২টি ইউনিয়নের কমিটি এখনো দেওয়া হয়নি। গত ২৮ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রদ্ধাভাজন রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু চাচা আমাকে কল করে ইউনিয়ন কমিটি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জেলা নেতৃবৃন্দ আলোচনা করতে চান মর্মে জানালে আমি তৎক্ষনাত সম্মতি জানাই। এর পর আমি কয়েক বার উনাকে কল করেছি এবং জেলা নেতৃবৃন্দের সাথে বসার জন্য তারিখ চেয়েছি। প্রতিবারই দুলু চাচা জেলা নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে তারিখ ও সময় জানাবেন বলে আমাকে জানান। এর মাঝে হঠাৎ গত বৃহস্পতিবার (৪ মে ২০২৩) উক্ত চিঠি ইস্যু করা হয় যা অনভিপ্রেত এবং অপ্রত্যাশিত! এভাবে কোন বিষয়ে সঠিকভাবে লালপুর উপজেলা বিএনপিকে অবহিত না করে, তাদের কোন প্রকার বক্তব্য না শুনে কিভাবে এবং কি কারনে নাটোর জেলা কমিটি লালপুর উপজেলার ইউনিয়ন কমিটি স্থগিত করতে পারেন সে বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার না।’
শোকজ নোটিশের বিষয়ে ফারজানা শারমিন পুতুল বলেন, দেখুন যে কোন বিষয়ে যে কোন নেতা কর্মীর অভিযোগ থাকতেই পারে। সে ধরনের কোন ইস্যু থাকলে জেলা নেতৃবৃন্দ উপজেলা আহবায়ক/ সদস্য সচিবকে বিষয়টি অবগত করে সমস্যা নিরসনের ব্যবস্থা করবেন সেটাই নিয়ম। চিঠিতে দেখলাম উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে কমিটি স্থগিত করেছেন। অথচ উপজেলা আহবায়ক কমিটিকে না কোন অভিযোগ সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে, না তাদের কোন মন্তব্য নেওয়া হয়েছে। তাহলে তাঁরা কিসের অভিযোগের ভিত্তিতে কাদের মাধ্যমে তদন্ত করে আহবায়ক কমিটির আহবায়ক অথবা সদস্য সচিবের বক্তব্য না জেনেই কমিটি স্থগিত করলেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়। দেশের এই দুর্দিনে দলকে শক্তিশালী করার জন্য লালপুর-বাগাতিপাড়ার সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। সব বাধা অতিক্রম করে কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসূচী লালপুর-বাগাতিপাড়ার সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী সফলভাবে পালন করেন, তারা হামলা-মামলার শিকার হয়েও পিছ পা হননি। সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য শুধু জেলা কেন আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি এবং ভবিষ্যতেও করবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, বিষয়টি আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবং দলের মহাসচিব জনাব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরকে অবহিত করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানাবো।
এদিকে নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, ২০২১ সালে কমিটি গঠনের পর থেকে উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি পরিচিতি সভা ছাড়া কোন সভা করেননি। নিয়ম অমান্য করে সম্মেলন ছাড়া আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে অযোগ্য লোক দিয়ে গত ২৪ এপ্রিল ১০টি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পদ বঞ্চিতদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা বিএনপি তদন্ত করে ব্যাপক অনিয়ম পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (৪ মে ২০২৩) এসব কমিটি স্থগিত ও উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন ও সদস্য সচিব হারুনর রশিদ পাপ্পুকে শোকজ করা হয়েছে। অসাংবিধানিক ও নিয়ম বর্হিভূতভাবে কমিটি গঠন করায় কেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা আগামী সাত দিনের মধ্যে স্বশরীরে জেলা কার্যালয়ে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য