logo
news image

দুই শতাধিক গ্রাহকের টাকা নিয়ে পলাতক এনজিও কর্মী

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি:
নাটোরের লালপুরে ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন’ নামে দাতা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত এক এনজিও পরিচয়ে হতদরিদ্র দুই শতাধিক গ্রাহককের ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছে বলে জানা গেছে। ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই প্রতারণা চক্র।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) সমিতির সদস্য ও চাকরী প্রত্যাশী কচুয়া-হাবিবপুর গ্রামের সুমি আক্তার চাঁদনী বলেন, ওই এনজিওতে চাকরী দেওয়ার কথা বলে শাখা ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান ১০ হাজার টাকা জামানত দাবি করেন। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা বলেন। এই প্রস্তাবে প্রতিবেশি নীলা বেগমের বাড়িতে মিটিং করে ১৩ জন সদস্য করে প্রত্যেকের নিকট থেকে ৫০০ টাকা করে ভর্তি ফি নেন। সেই সাথে প্রত্যেককে লোন প্রস্তাব করতে বলেন। সে ক্ষেত্রে প্রতি লাখ টাকা লোনের জন্য ১০ হাজার টাকা হারে জামানত দাবি করেন। বুধিরামপুর এনজিওর অফিসে এসে জানতে পারেন প্রতারক এনজিওর লোকজন পালিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতরক চক্রটি ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন’ নামে একটি বিদেশি সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সরকার অনুমোদিত এনজিও দাবি করে উপজেলার বুধিরামপুর এলাকার মোজের প্রামাণিকের মেয়ে শরিফা খাতুনের বাড়ি ভাড়া নিয়ে এনজিওর নাটোর জোনাল অফিস গড়ে তোলেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি ৬ রুমের বাসা ১২ হাজার টাকায় ওই এনজিওর কর্মকর্তারা পরিচয়ে ঢাকার গাজীপুর চৌরাস্তার ৪ জন বাড়িটি ভাড়া নেন। উপজেলার বিলমাড়িয়া, মোহরকয়া, হাবিবপুর, কচুয়া, বুধিরামপুর, রসুলপুর গুচ্ছগ্রাম, পদ্মার চরাঞ্চলে ও আশ্রয়ণ প্রকল্প ও আশেপাশের এলাকায় প্রতরণার জাল বিস্তার করেন ওই প্রতারক চক্রটি। তারা এলাকায় নির্দিষ্ট বাড়িতে শিশুদের পড়ালেখা করানোর ৫ হাজার টাকা বেতনে শিক্ষক নিয়োগ দেন। সেই সাথে সদস্যদের পরিবার প্রতি ৫ কেজি করে চাউল বিতরণ করেন। এভাবে হতদরিদ্র দুই শতাধিক মানুষকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। পরে তালাবন্ধ এনজিওর অফিসে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ভীড় করে পাওনা টাকা চেয়ে আন্দোলন করেন।
রসুলপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আলতাফ হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিদ্যুৎ না থাকায় সৌর বিদ্যুৎ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৯ হাজার টাকা নিয়েছেন। তিনি ছাড়াও আরো কয়েকজনের থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চক্রটি।
বিলমাড়িয়ার হামিদুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাড়িতে কেন্দ্র গঠন করে দুই বছর মেয়াদে ২ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের থেকে ২০ হাজার করে টাকা জামানত নিয়েছেন। পরে অফিসে ঋণ নিতে এসে দেখেন অফিসে তালা দেওয়া। কর্মকর্তাদের ফোন বন্ধ।
বুধিরামপুর গ্রামের নবীর উদ্দিনের ছেলে লিটন হোসেন বলেন, ওই এনজিও কর্মীরা এলাকায় নির্দিষ্ট বাড়িতে শিশুদের পড়ালেখা করানোর ৫ হাজার টাকা বেতনে শিক্ষক নিয়োগ দেন। সেই সাথে সদস্যদের পরিবার প্রতি ৫ কেজি করে চাউল বিতরণ করেন। এক পর্যায়ে  তাঁকে ব্যবস্থাপক পদের গাজীপুর শাখায় চাকরীর জন্য জীবনবৃত্তান্ত চান। গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিলমাড়িয়া গ্রামের যাওয়ার জন্য তার ডিসকভার ১১০ সিসি একটি মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি ৮ ফেব্রুয়ারি লালপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক বুধিরামপুর গ্রামের মোজের প্রামাণিকের মেয়ে শরিফা খাতুন বলেন, এনজিও কার্যালয় বলে ঢাকার গাজীপুর চৌরাস্তার কয়েকজন জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি ৬ রুমের বাসা ১২ হাজার টাকায় ওই এনজিওর কর্মকর্তারা পরিচয়ে ৪ জন বাড়িটি ভাড়া নেন। হঠাৎ দেখেন বাড়ির রুমগুলো তালা দিয়ে তারা পালিয়েছে। বিষয়টি পুলিশে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. এমদাদুল হক ইনতা বলেন, এনজিও কার্যক্রম বলে তারা বিভিন্ন পন্য সামগ্রী গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতো। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিল। হঠাৎ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে চলে গেছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোতালেব সরকার বলেন, এই এনজিও কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তারা কোন অনুমোদন নেননি বা অবগত করেননি।
লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহা. মেনোয়ারুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য