logo
news image

কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বে স্কুলে আসায় বাধা

কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বে স্কুলে আসায় বাধা
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে ও রাস্তায় স্কুলে আসতে ভয়-ভীতি এবং বাধা প্রদান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের ঢুষপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি মো. আফজালুর রহমানকে সভাপতি করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদন দেয় রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষা বোর্ড।  বিষয়টি জানতে পেরে একজন অভিভাবক এই কমিটি বাতিল চেয়ে গত বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এ দিকে মাহবুবুর রহমান মিলন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর নাম বাদ পড়ায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। তাঁরা ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে ও রাস্তায় স্কুলে আসতে ভয়-ভীতি এবং বাধা প্রদান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অপর দিকে শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যালয়ে আনার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি ২০২৩) সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারে কম। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের বাড়িতে গিয়ে ও রাস্তায় স্কুলে আসতে ভয়-ভীতি এবং বাধা প্রদান করা হচ্ছে। আজকে সকালে স্কুলে আসতে বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত। শিক্ষার্থীরা জানায়, গত সপ্তাহে তারা স্কুলে কেউ আসেনি। স্কুল বন্ধ ছিল। গতকাল রোববার কিছু শিক্ষার্থী স্কুলে আসে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে এই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নির্বাচনে সভা হয়। এরপর অভিভাবক সদস্যদের সম্মতিক্রমে আফজালুর রহমানের নাম প্রস্তাব করে পাঠানো হলে বোর্ড গত ৫ জানুয়ারি তা অনুমোদন দেয়। স্থানীয় মাহবুবুর রহমান মিলন সভাপতি হতে না পারায় তিনিসহ মো. আব্দুর রশিদ, মো. আব্দুস সাত্তার, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আকছেদ আলী, শ্রী রঞ্জিত সরকার সবাই মিলে ম্যানেজিং কমিটি গঠিত হওয়ার পর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে এবং রাস্তায় স্কুলে আসতে ভয়-ভীতি এবং বাধা প্রদান করছেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, স্কুলটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠি বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে নিয়মিত দেড়শ জনের মতো উপস্থিত থাকে। কমিটি গঠন নিয়ে মতবিরোধে গত সপ্তাহ শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছেন।
সভাপতি প্রার্থী মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, প্রধান শিক্ষক নিজের সুবিধা হাসিল করতে দূরের একজনকে সভাপতি করেছেন। স্থানীয়রা কমিটি বাতিল ও প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। কমিটি বতিলের জন্য শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক কাউকে না জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার কথা বলে গোপনে অভিভাবকদের থেকে কাগজে স্বাক্ষর করে একজন অযোগ্য লোককে সভাপতি করেছেন।
আড়বাব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি ও স্কুলের নতুন কমিটির সভাপতি আফজালুর রহমান বলেন, স্থানীয় এমপির ডিও লেটার নিয়ে তিনি সভাপতি হয়েছেন। এজন্য ওই এলাকার কিছু লোক ষড়যন্ত্র করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে বাধা দিচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত দুই মেয়াদে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নতুন সভাপতি অন্য গ্রামের করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। কমিটির দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কাম্য নয়।
আড়বাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, এলাকাবাসীর সাথে তিনিও স্থানীয়ভাবে সভাপতি করার পক্ষে মত দেন। সে প্রেক্ষিতে এমপি মহোদয় মাহবুবুর রহমান মিলনকে ডিও দিতে চান। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তাঁকে না চাওয়ায় আফজালুর রহমান নাম দিয়ে ডিও দেন। বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে সমাধান না হলে এলাকায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিউলী আহমেদ বলেন, স্কুলের কমিটি নিয়ে সমস্যা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা শুরু করেছে। তবে কমিটি অনুমোদন কিংবা বাতিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, কমিটি নিয়ে সমস্যা নীতিমালা অনুযায়ী সমাধান করা হবে। স্কুলে শিক্ষার্থীদের আসতে বাধা দেওয়া ও তাদের পড়াশুনার ক্ষতি কাম্য নয়। শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে উপস্থিত নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top