logo
news image

হযরত বাগু দেওয়ান মাজারের দুর্নীতি প্রতিবেদন

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরের ভেল্লাবাড়ীয়া হযরত বাগু দেওয়ান (রা.) মাজার ও মসজিদে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোতালেব সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১২ অক্টোবর ২০২২ ইউএনও বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেল্লাবাড়ীয়া হযরত বাগু দেওয়ান (রা.) মাজার মসজিদের অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটির মাধ্যমে ২৩-০৯-২০২২ ও ৩০-০৯-২০২২ খ্রি. তারিখ পরপর দুইটি শুক্রবার ভেল্লাবাড়ীয়া হযরত বাগু দেওয়ান (রা:) মাজার মসজিদের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তদন্ত করা হয়। তদন্ত কালীন সময়ে বিভিন্ন বিষয় পরিলক্ষিত হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট সমস্যা ও সমাধান উল্লেখিত হয়েছে:
১. ভেল্লাবাড়ীয়া আস্তনার মোট জমির পরিমান- ৬ একর বা ১৮ বিঘা (৫ দাগে)। এই জমি কে বা কারা বাৎসরিক ইজারা দেয় তার কোন সঠিক হিসাব নেই।
মতামত: সঠিক নিয়মে ইজারা প্রয়োজন। এতে করে অর্থের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব।
২. রান্না করে খাওয়ানোর চূলার পরিমান ৫০-৬০ টি। রান্না করে সিন্নি/মানত খাওনোর জন্য যারা আসেন তারা নিজেরা চূলা তৈরী করেন। কমিটির লোকজন প্রতি চূলা থেকে ইচ্ছামত অর্থ আদায় করে।
মতামত: চূলা প্রতি অর্থ আদায়ের নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
৩. দুই শুক্রবারের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রায় ৫০-৬০ টি দোকান বসে।
৪. মসজিদের দান বাক্স পাওয়া যায় ১৪ টি । নির্দিষ্ট পরিমান দান বাক্স না থাকায় কত টাকা দান বাক্স হতে আসে সেটার সঠিক হিসাব নাই।
মতামত: নির্দিষ্ট পরিমান দান বাক্স এবং তার সিরিয়াল নম্বর দরকার।
৫. মাজারের কেচি গেটের চাবি, সদস্য আজবারের নিকট থাকে। মূল মাজারের কেচি গেটের ভিতর থেকে ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা দান স্বরুপ পাওয়া যায়। মাজারের মেঝেতে কেচি গেটের ফাক দিয়ে দান স্বরুপ নিক্ষেপ করা টাকা, বাহির থেকে কৌশলে বের করে নেয়।
মতামত: কেচি গেটের চাবি, ঈমাম সাহেবের নিকট থাকলে ও একজন দারোয়ান থাকলে সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে।
৬. মসজিদ কমিটির সদস্য সংখ্যা স্থানীয়ভাবে চারজন। জনপ্রতি প্রতি শুক্রবারে ৫০০ টাকা করে ২ হাজার টাকা সম্মানী নেন। চারজন সদস্যকে দেখে মনে হয়েছে তাদের মধ্যে ইসলামের পরিপূর্ণতা নেই। সেখানে তারা অবৈধভাবে মসজিদের টাকা ভাগাভাগী করে নেন।
মতামত: স্থানীয় জনগনের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে টাকা নেওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন।
৭. গ্রাম পুলিশের সংখ্যা তিনজন। জনপ্রতি প্রতি শুক্রবারে সম্মানী ২৫০ টাকা মোট ৭৫০ টাকা নেন।
মতামত: এই ব্যয়টি অযথা তবে একজন প্রতি শুক্রবারে গ্রাম পুলিশ রাখা যেতে পারে।
৮. মৌসুমি আম গাছের পরিমান ৫০-৬০ টি, কাঁঠাল গাছের পরিমান ১০-১২ টি। মৌসুমে প্রতিবছর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করা সম্ভব কিন্তু এর কোন হিসাব নেই। বর্তমান কমিটি হিসাব দিতে পারেনি।
মতামত: এটাকে সুষ্ঠুভাবে মৌসুমে ইজারা দিলে প্রাপ্ত অর্থ মাজার মসজিদের তহবিল হতে পারে।
৯. মাজারের সামনে দুইটি পুকুর, একটি মসজিদের, একটি মাদ্রাসার। পুকুরে সরকারীভাবে মাছ ছাড়া হয়েছে এখানে সুনির্দিষ্ট পাহারাদার না থাকায় গ্রামের আশেপাশের লোকজন পুকুর থেকে মাছ মেছে নিয়ে যায়। কমিটি এ বিষয়ে কোন কর্ণপাত করেন না ।
মতামত: এখানে মসজিদের আয় থেকে সার্বক্ষণিকভাবে একজন গার্ড রাখা যায় তাহলে প্রকৃত আয় বাড়বে।
১০. খাদেম মুখেভাত দেন কিন্তু ইসলামী শরীয়াহ্ মোতাবেক তার কোন যোগ্যতা নেই। এখানে
প্রচুর লোকের সমাগম হয়। ৫০-১০০ জন বাচ্চা নিয়ে আসেন প্রতি শুক্রবারে মুখেভাত দেওয়ার জন্য। সেখানে আয় হয় প্রায় ১-৫ হাজার টাকা। নামধারী খাদেম তার কোন হিসাব দেন না।
মতামত: ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী মসজিদের বিষয় সর্বঅভিজ্ঞ আলেম দ্বারা করা উচিত। এ বিষয়ে প্রাপ্ত আয় মসজিদের কোষাগারে জমা হওয়া দরকার।
১১. প্রতি শুক্রবারে আয় গড়ে ১৫হতে ৩০ হাজার টাকা অর্থাৎ মাসিক আয় ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু তদন্তকালীন সময় দেখা যায়, রশিদ ছাড়া কমিটির লোকজন টাকা আদায় করেন এবং সপ্তাহে আয় দেখান ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ নিজ দায়িত্বে ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রথম সপ্তাহে ২৪ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় সপ্তাহে ২৬ হাজার টাকা আয়ের হিসাব পাওয়া গেছে। চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি যারা আছেন তারা ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যয় দেখিয়ে যেটা খরচ করেন সেটা অযৌক্তিক। সেখানে যে ধরনের খাদেম প্রয়োজন তা না থাকায় মাজারের সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। খাদেমের বিরুদ্ধে সেক্রেটারি মাজার মসজিদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগরা করেন এবং একপর্যায়ে থানায় জিডি করেন।
মতামত: উপরে উল্লেখিত যে অনিয়ম দেখা যায় সেটা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে যোগ্যতা সম্পন্ন কমিটির প্রয়োজন। প্রতি সপ্তাহের আয় সরাসরি ব্যাংকে জমা করা প্রয়োজন এবং খরচ মেটানোর জন্য ব্যাংক থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন করলে অপচয় কম হবে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য