logo
news image

রবীউল স্যারের সাথে শেষ সেলফি

ইমাম হাসান মুক্তি, লালপুর (নাটোর)
গত বছর ২৬ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. কে এম রবীউল করিম স্যারের সাথে ক্যাম্পাসে শেষ দেখা হয়। লন্ডন প্রবাসি বন্ধু তৌহিদ চৌধুরী স্বপরিবারে লালপুরে আসার সময় ডিপার্টমেন্টে আমরা দেখা করি। আতিথিয়তা শেষে আমাদেরকে হাসি মুখে বিদায় দেন। যা চোখের সামনে স্মৃতি হয়ে থাকে আজীবন।
শাবিপ্রবিতে প্রথম কর্মজীবন থেকে একান্ত সহকর্মী, বর্তমান রাবি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও  সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফখরুল ইসলাম জানান, ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত অধ্যাপক ড. কে এম রবীউল করিম (৫১) বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর ২০২২) সকাল সাড়ে ৯টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতের কলকাতার টাটা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন))। তিনি ২০১৯ সাল থেকে বিরল ধরনের ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। সর্বশেষ ভারতের টাটা মেডিকেল সেন্টারে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত ২৯ আগস্ট ফেসবুক স্ট্যাটাসে রবীউল করিম বলেন, ‘বিগত ১০ দিনেরও বেশি উঠতে দাড়াতে ও হাটতে পারি না। এগুলো ২টা মাল্টিড্রাগ ড্রাগের ২১ দিন নেওয়ার ফল। অথচ অনেক টেস্ট করেও আমার ইনফেকশন নেই।’
ড. করিম খুলনার ডুমুরিয়ার সাজিয়াড়ার আরাজি ডুমুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাবির সমাজকর্ম বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে ১৯৯১ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৯২ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯৭ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সমাজকর্ম বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন (০৮/০৬/১৯৯৭-০১/০৮/১৯৯৮)। এরপর ১৯৯৮ সালে নিজ বিভাগে (রাবি) প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৩ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান।
তিনি ২০০৫ সালে থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এআইটি) থেকে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ের ওপর এমএসসি করেন। ২০১১ সালে হংকং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্মের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
এছাড়াও ২০১৮ সালে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট থেকে পাবলিক হেলথ সায়েন্স বিষয়ের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি সুইডেনের লিনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো রির্সাচার ও শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন। উচ্চমানের গবেষণার জন্য তার রয়েছে বেশ কৃতিত্ব। বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন জার্নালে তার বর্তমানে ৩৫টিরও বেশি গবেষণা নিবন্ধ রয়েছে।
আমরা শাবিপ্রবি সমাজকর্ম বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। স্যার ১৯৯৭ সালে সমাজকর্ম বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। মাস্টার্সে আমাদের ক্লাস নেন। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে সব স্যারের সাথেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। যা এখনো বিরাজমান। এর কারণ হলো ছাত্র হিসেবে আমরা যেমন প্রথম, তেমনি শিক্ষক হিসেবে সবাই ছিলে নবীন। স্যারদের ভালবাসায় প্রথম ব্যাচের আমরা সবাই সফল। দেশ-বিদেশে যার যার কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
গত বছর ২৬ ডিসেম্বর লন্ডন প্রবাসি বন্ধু তৌহিদ চৌধুরী স্বপরিবারে লালপুরে আসার সময় ডিপার্টমেন্টে আমরা স্যারের সাথে ক্যাম্পাসে দেখা করি। সাথে অধ্যাপক ড. মো. ফখরুল ইসলাম স্যারও ছিলেন। আন্তরিকতার সাথে স্যার আমাদেরকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। আপ্যায়ন শেষে আবার দেখা হবে বলে সেই মিষ্টি হাসি মুখে বিদায় জানান।
কিন্তু আর দেখা হওয়ার সুযোগ রইলো না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তবে অবশ্যই দেখা হবে ওপারে। দোয়া করি আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস বেহেস্ত দান করুন। ভাবী ও মামনীদের প্রতি সমবেদনা।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top