logo
news image

শ্রীলংকায় সাফ অনূর্ধ ১৭ দলে বাঘার স্বপন


বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি 
শ্রীলংকায়“সাফ অনূর্ধ-১৭ দলে ভালো খেলা উপহার দিবেন বলে আশা বাঘা উপজেলার স্বপনের।
প্রায়দিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে আসতো খেলার মাঠে। স্কুল ফাঁকি দেয়ার কারনে কখনো-কখোনো খেয়েছেন শিক্ষকদের কানমলাও। ছেলের দুরন্তপনায় মা-বাবা ছিল দুঃচিন্তায়! অজপাড়াগাঁয়ের সেই ছেলেটির নাম স্বপন হোসেন। সেই দুরন্ত ছেলেটিই এখন মাঠ মাতাচ্ছেন ফুটবলে।
সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৭ জাতীয় ফুটবল দলে। আজ-৫ সেপ্টেম্বর হতে ১৫ সেপ্টেম্বর-২০২২ তারিখ পর্যন্ত শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত হবে“সাফ অনূর্ধ-১৭ চ্যাম্পিয়নশীপ-২০২২।   সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। স্বপন হোসেনের মতো রাজশাহীর আরো তিন তরুন ফুটবলার সেই খেলায় সুযোগ পেয়েছেন। স্বপন হোসেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। সে দুলাল হোসেনের বড় ছেলে।
স্থানীয় শিক্ষক মাহফুজুর রহমান জানান,যখন সে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র তখন থেকে পা রাখে ফুটবলে। সেই থেকে ফুটবলই যেন তার ধ্যান-জ্ঞান! স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে আসতো পানিকুমড়া সবুজ সংঘ খেলার মাঠে। ওই এলাকার ইউপি সদস্য তারিকূল ইসলাম জানান,স্বপন হোসেন স্কুল থেকে ফিরে বই-খাতা রেখেই চলে আসতো খেলার মাঠে। প্রথম প্রথম খেলার সুযোগ মিলত না। এলাকার বড়রা যখন খেলতেন,কখন বলটি সীমানার বাইরে আসবে-এ আশায় দাঁড়িয়ে থাকতো ছাইড লাইনের বাইরে। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক ও ক্রীড়া শিক্ষক জাফর ইকবাল বলেন, স্বপন হোসেন বাঘা উপজেলা ফুটবল দল,পানি কুমড়া সবুজ সংঘ,রাজশাহী লীগ,ঢাকা লীগ খেলেছে। উপজেলার বাইরেও অসংখ্য মাঠে খেলায় সুনাম অর্জন করেছে। বলরামপুরের সেই ছেলে স্বপন আজ থেকে বাংলাদেশ অনুর্ধ -১৭ জাতীয় দলে খেলবে। তিনি আরো বলেন, এর আগে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন সময়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার দুরে থেকে উপজেলা সদর বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আসতো প্র্যাকট্রিস করার জন্য। পরে উপজেলা বয়স ভিত্তিক খেলায় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে বাঘা উপজেলা ফুটবল দলের অধিনায়ক করা হয়। পরে সে খুলনা বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পায়।
প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিঞা বলেন,স্বপন হোসেন শুধু বাঘার নয়,একদিন সে দেশের সুনাম অর্জন করবে আশা করছি।
 স্বপন জানান,“ক্লাসের জানালা দিয়ে খেলার মাঠ দেখা যেত,তখন বড় ভাইদের মাঠে খেলতে দেখলে ক্লাসে মন বসত না। এজন্য শাস্তিও পেয়েছি। অনেক সময় মা-বাবা বলছেন, ‘পড়াশোনার নাম নাই,সারাক্ষণ শুধু ফুটবল আর ফুটবল। ফুটবল কি ভাত দেবে’?” এর পরেও বাবার চাইতে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি মায়ের।
তিনি জানান,কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়ে বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য রাজশাহী স্টেডিয়ামে যায়। বাংলাদেশ এলিড একাডেমী কর্তৃক বাছাই পর্বে টিকে গেলাম। ৬ মাস এর ক্যাম্পিং ট্রায়ালের পর খুলনায় বিকেএসপিতে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হই। এখনো সেখানেই পড়ছি দশম শ্রেণীতে। মিড ফিলডার হিসেবে লেফট সাইডে খেলোয়াড় স্বপন জানান, মাগুরায় আসাদুজ্জামান ক্লাবে থার্ড ডিভিশনে খেলেছি। তার জাসিং নম্বর ৮। স্বপন হোসেন বলেন, দলের অগ্রগতিতে ভূ’মিকা রেখেছেন বাংলাদেশ ক্রীড়া ডিরেক্টোর পলস মনি,কোচ সাবেক ফুটবলার রবিউল ইসলাম,আবুল হোসেন ও মেহেদী স্যার।
স্বপনের মা রোকেয়া বেগম বলেন,ছেলে ফুটবলে নাম কুড়াবে,সেই স্বপ্ন নিয়ে শ্রীলংকায় গেছে। বাবা দুলাল হোসেন বলেন,আমি কখনো ভাবতেই পরিনি আমার ছেলে বিদেশে খেলার সুযোগ পাবে। এখন আমার খুব আনন্দ লাগছে।
পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ জানান,সবাইকে চমকে দেয় বল কুড়ানো সেই ছেলেটি! এভাবে খেলতে খেলতে একসময় নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়ে বিকেএসপি ফুটবলে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো শহরের রেসকোর্স ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে “সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২”খেলায় অংশ গ্রহন করছে। আমি মনে করি শুধু বাঘার নয় সে এখন দেশের জন্য গর্ব।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top