logo
news image

পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ: সাড়ে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত সমাবেশে যোগ দেওয়ার পথে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ১২ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপি দাবি করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ সাড়ে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এজাহার নামীয় দুইজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর ২০২২) বিকেলে উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়নের পালিদেহা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
দলীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদলের সভাপতি নূরে-আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিমকে হত্যার প্রতিবাদে দীর্ঘ ১৫ বছর পর মঙ্গলবার প্রকাশ্যে সমাবেশের ডাক দেয় লালপুর উপজেলা বিএনপি। উপজেলার গৌরীপুরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম ফজলুর রহমান পটলের বাসভবন চত্বরে ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে আসেন নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, জেলা যুবদলের সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন, সদস্য সচিব ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ পাপ্পু, ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল, গোপালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির আহবায়ক মো. নজরুল ইসলাম মোলাম, বাগাতিপাড়া বিএনপির আহবায়ক মো. মোশারফ হোসেন, বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিদ্দিক আলী মিষ্টু, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. সুইটসহ বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে যোগদানের জন্য আসার পথে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে পালিদেহা মোড়ে পুলিশের চেকপোষ্টে বাধার মুখে পড়লে উত্তেজিত বিএনপির কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল মারা শুরু করে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে  ২ রাউন্ড গ্যাস ও ৩ রাউন্ড শটগানের গুলি বর্ষণ করে তাদের ছত্রভঙ্গ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সমাবেশে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার লোকের সমাগম হয়।
এ সময় সংঘর্ষে আহতরা হলেন, আব্দুল মজিদ, আমির হোসেন, আলি আহমেদ (৬০), আনোয়ার (৫০),  জিল্লুর রহমান (৩৮), আসতাব আলী, আফসার, জিল্লুর রহমান, জাহাঙ্গীর, জামিরুল, আব্দুর রহিম ও খলিল উদ্দিন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্থানীয় বিএনপি ৬ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিলে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওই সমাবেশ প্রতিহত করতে ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে লালপুর ত্রিমোহিনী চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে যেকোনো মূল্যে বিএনপির কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ। ঘোষণা অনুযায়ী বিএনপির সমাবেশস্থল গৌরীপুরে প্রবেশ মুখের বিভিন্ন মোড়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছিল পুরো এলাকাজুড়ে। দুপুরের পর এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করতে আওয়ামী লীগের সাথে পুলিশ পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে ১২ নেতাকর্মীকে আহত করেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, উত্তেজিত বিএনপির কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল মারা শুরু করলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ২ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ৩ রাউন্ড শটগানের গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ডিবি পুলিশের গাড়ির পেছনের কাঁচ ভেঙ্গে ফেলে। পুলিশের কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে এজাহার নামীয় ৫৮ জনসহ অজ্ঞাত ২০০ থেকে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় এজাহার নামীয় গ্রেপ্তারকৃত দক্ষিণলালপুরের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে গোলাম মোস্তফা তুহিন (৪২) ও পালিদেহা গ্রামের ছইর উদ্দিনের ছেলে মহির উদ্দিনকে (৫৮) বুধবার আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব বলেন, বিএনপি অনুমতি নিয়ে সমাবেশের নামে পুলিশ ও আশপাশের বাড়িঘরে হামলা চালায়। তারা এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নাটোরের লালপুরে পুলিশ নৃশংস হামলা ও গুলি চালিয়ে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করেছে। আহতদের মধ্যে অনেকেই মুমূর্ষ। পুলিশের এই নৃশংস হামলা ও নেতাকর্মীদের আহত করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার হীন চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বেপরোয়া বাধা প্রদান করছে। এরই অংশ হিসেবে আজ নাটোর জেলাধীন লালপুর উপজেলায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বর্বরোচিত হামলা ও গুলি চালিয়ে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করেছে। গুরুতর আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসা চলছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top