আমার দেখা সাস্টিয়ান: ২২-শামীম
।।হিমাংশু শেখর সূত্রধর।।
সময় (?) বড়ই অদ্ভুত একটা ব্যাপার। অনেকদিন ধরেই এই গল্পের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশটুকু জমা হচ্ছিল, আর নোট রাখছিলাম কিছুটা মনে, কিছুটা কলমে গেঁথে। সাস্ট সপ্তম ব্যাচের অনেকগুলো মুখই স্মৃতিপটে ভেসে উঠে। আমি মোটেও সাহিত্যিক নই। তবু মনে হয়, গল্প লিখার জন্য না হোক, গল্প শেষ করার প্রয়োজনেই হয়ত, গল্প গল্পের জন্য সময় খোঁজে। যাই হোক, কথা দিলে কথা রাখার প্রাণপন চেষ্টা করতে হয়। সম্ভবত Mohammad Jahirul Hoque শাকিলের স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেছিলাম যে, ২২তম গল্পটি তাকে নিয়েই লিখব৷ এর কারণ হলো, স্মৃতিচারণ মুলক গল্পের এই ক্রমিক লিখন চলাকালেই কিছুদিন আগে সরকারের নিউক্লিয়াস কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে Azizul Islam শামীম যোগদান করার পরেই সামাজিক মাধ্যমে তাকে নিয়ে অভিনন্দনের জোয়ার সৃষ্টি হয়। ৪র্থ ব্যাচে আমরা থাকায়, সাস্ট ক্যাম্পাসে ১ম ব্যাচ থেকে ৮ম ব্যাচ পর্যন্ত সরাসরি টাচ করতে পেরেছিলাম। আর যদি ব্যাচ হিসেবে ৭ম ব্যাচ একটা প্যারামিটার হয়, তাহলে আমার স্মৃতিচারণটি অবশ্যই অধিকার বলে একই ব্যাচের সমাজবিজ্ঞানের N Alam Milton মিল্টনের পাওনা ছিল। তাকে দিয়েই শুরু করা উচিত ছিল, কিন্তু ওই যে নিজ মাথায় নিজেরই কথা দেওয়ার পোকা ঢুকেছে, তাই অপেক্ষার পালা একটু দীর্ঘতর হচ্ছে এই যা। যদি ভুল না হয়, তাহলে সপ্তম ব্যাচের মিল্টন, মাসুদ, কামাল, রেজা, শিহান, ব্যাপারী মাসুদ প্রমুখদের সাথেই আমার বা আমাদের সর্বাধিক ঘনিষ্ঠতা ছিল। এই মুহুর্তে আর অন্যান্যদের নাম মনে করতে পারছি না।
আমাদের সময়ে ক্যম্পাসে আরো দুইজন শামীম নামে পরিচিত ছিলেন। তাদের মাঝে অবশ্যই এক নম্বরে থাকবেন বহুল পরিচিত চাচা শামীম ভাই Aminul Islam Shamim । চাচা শব্দযুক্ত বিশেষনটি-ই তাঁকে মনে রাখার জন্য যথেষ্ট। তিনি সাস্ট ফার্স্ট ব্যাচ, রসায়নের। তিনি এবং তার রুমমেট শাহেদ ভাই Islam Shahed এর একাডেমিকও এক, তিনিও রসায়ন ফার্স্ট ব্যাচ। দুজনেই আমার ক্রমিক স্মৃতিচারণের গল্পেরও রসায়ন। লিখব তাদের নিয়েও, যখন ঈশ্বর ইচ্ছা হবে, ব্যাটে বলে সংযোগের অপেক্ষায়। অন্য যে জনকে শামীম নামে চিনি বা ঘনিষ্ঠ, তিনি হলেন সুনামগঞ্জের জয়শ্রী গাঁয়ের, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার বসবাসরত অধুনা বিজ্ঞানী শামীম, মুহাম্মদ জে. এ. সিদ্দিকী । তিনিও রসায়ন সিক্সথ ব্যাচের। এই জুনিয়র শামীমও আমার গল্পের ক্রমিকের অবশ্যই একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র হওয়ার দাবী, আমার নিজের কাছেই রাখে। অনেক হল ভনিতা, এবার আজকের শামীমের কথাই বলি।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে আমাদের অনেক সাস্টিয়ান কর্মরত। প্রশাসনে এসি ল্যাণ্ডের কথা বাদই দিলাম, ইউএনও পর্যায়ে কর্মরত সাস্টিয়ানদের সংখ্যাও চোখে পড়ার মত। সিভিল সার্ভিসসহ সরকারি চাকুরীর বিভিন্ন সেক্টর সাস্টিয়ানদের পদচারণায় মুখরিত। সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ইত্যাদি মিলিয়ে কোথায় নেই সাস্টিয়ান? আছেন স্বমহিমায় যার যার ক্ষেত্রে, মাটি থেকে নাসা পর্যন্ত। বলছিলাম আজকের শামীমের কথা, তার সাথে পুনরায় রিকানেক্টের কথা। ২০১২ সালে ক্যাম্পাসে যে তিনদিন ব্যাপি রিইউনিয়ন হয়, তার পেছনে যে হাতগুলি ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিল, তার মধ্যে শামীম একজন। এই রিইউনিয়ন উপলক্ষে তৎকালীন ভিসি স্যারের সভাপতিত্বে ঢাকায় যে মিটিং হয়, সেখানেই তার সাথে আবার ক্যাম্পাস পরবর্তী দেখা। একই উদ্দেশ্যে কিছুদিন পরে যখন ঢাকা থাকে আমি আর সাদিক সিলেট নামলাম, সে রাতেও অন্যদের সাথে যে কয়জন রিসিপশনে ছিলেন, তাদের একজন কালো চাদর গায়ে দেওয়া শামীম। যাই হোক সে-বার সিলেট রেষ্ট হাউসে রাত কাটালাম।
অসাধারণ জুনিয়র সুলভ, অমায়িক ও ভদ্র, পরোপকারী এই ছেলেটি একই সাথে নিরহঙ্কারী। পদ-পদবী ব্যবহারের যে শোডাউন আজকাল দেখতে পাওয়া যায়, এর ব্যতিক্রম হিসেবে তার আচরণ, সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
সাস্ট সমাজকর্ম বিভাগের এই ছেলেটি হবিগঞ্জের সদর উপজেলার বাসিন্দা। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভকারী, স্কুলজীবনের স্কাউট লিডার ছেলেটি সাস্টের শিক্ষা জীবন শেষে ২৫তম বিসিএস-এর মাধ্যমে ২০০৬ সালে, সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কক্সবাজারে যোগদান করেন। কর্মজীবনে ট্রায়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কগনিজেন্স ম্যাজিস্ট্রেট, এনডিসি, আরডিসি, জিসিও এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে গোয়াইনঘাট, সিলেট এবং নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাকুরীরত ছিলেন। ২০১৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় বৃক্ষরোপন পদক লাভ করেন। ২০১৬ সালে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হন। এছাড়া সচিবালয়ে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৫ জন সিনিয়র সচিব/সচিবের পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে উপসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালনরত ছিলেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সাভারে অনুষ্ঠিত সকল বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এ প্রথম দশ জনে স্থান লাভ করায় ভারত, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর ও অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। শামীম যুক্তরাজ্য থেকে ডিস্টিংশনসহ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এ মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ২৫তম বিসিএস প্রশাসন এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সাথে তিনি ২৫তম বিসিএস অল ক্যাডার ফোরামের কার্যিনির্বাহী কমিটির সদস্য।
সাস্ট সমাজকর্ম এলামনাই এসোসিয়েশনের পর পর তিন বারের সাধারণ সম্পাদক। শাবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় সমাজকর্ম সমিতির প্রচার সম্পাদক ছিলেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম ব্যাচ, প্রথম ব্যাচ ভিত্তিক পুনর্মিলনী করে। ২০১৭ সালে ব্যাচের ২০ বছর পূর্তিতে এ পূনর্মিলনীর কনভেনার ছিল শামীম । এছাড়া অত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অন্তর্ভূক্তিতে সে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এজন্য সিন্ডিকেট সভায় তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়। বর্তমনে সে সাস্ট ক্লাব লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
কেন জানি না, বিসিএস প্রশাসনের এই ছেলেটিকে আমার খুবই ভালো লাগে। কারণে-অকারণে প্রয়োজনে- অপ্রয়োজনে যখনই তাকে ফোন দেই, সে রেসপন্স করে। কখনোই বিরক্তি প্রকাশ করে না। সাস্ট, সাস্টিয়ান সম্পর্কিত যে কোন কাজে সে এগিয়ে আসে, সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করে। অনেকদিন পর একজন সাস্টিয়ান এর স্মৃতিচারণ করলাম। আমি ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ। গল্পের শুরুতেই 'সময়' এর কথা উল্লেখ করেছি। সারা বিশ্বেই একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর রেশ ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও প্রভাব ফেলছে। কথাটা হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু মনেমনে ভাবছি এই গল্পটি সামাজিক মাধ্যমে পোষ্ট করতে পারলেই বুঝি একটু স্বস্তির বাতাস পাব। গল্পের শামীম পরিবার পরিজনসহ ভালো থাকুক, তার কর্মক্ষেত্রের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি। শামীমরা ভালো থাকুক। সকল সাস্টিয়ানদের সুন্দর জীবন কামনা করি।
* হিমাংশু শেখর সূত্রধর: সহকারী অধ্যাপক (রসায়ন), বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ; সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
সাম্প্রতিক মন্তব্য