পরোকিয়া প্রেমের বিরোধে জুয়েলকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরের পরোকিয়া প্রেমের বিরোধে দিলালপুর গ্রামে দুই পা ও হাতের রগ কেটে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে কৃষক মো. জুয়েল হোসেন (৩০) হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১১ মার্চ ২০২২) দুপুরে জুয়েল হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা বিপিএম, পিপিএম-বার।
বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে দিলালপুর (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের মো. জিয়ারুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. সেলিনা খাতুন (২৮), মো. আবেদ আলীর ছেলে মো. মেহেদী হাসান লিটন (২০) ও মো. জিয়ারুল ইসলামের ছেলে মো. মেহেদী হাসান (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কুড়াল, চাকু ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রেস ব্রিফিং এসপি লিটন কুমার সাহা বলেন, গত ৪ মার্চ ভোর রাতে লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া ইউনিয়নের দিলালপুর গ্রামের মো. সাকেম আলীর ছেলে মো. জুয়েল আলীকে ডেকে নিয়ে গিয়ে দুই পায়ের রগ কেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে বাড়ির উত্তর পাশে গম ক্ষেতের পাশে পতিত জমিতে ফেলে রেখে যায়। ভোরে তার চাচাতো ভাই মো. লিখন আলী খেজুর গাছ থেকে রস নামাতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। তার চিৎকারে আত্মীয়-স্বজন মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সোয়া ৮টার দিকে তিনি মারা যান।
হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে মাঠে নামে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা।
এসপি লিটন কুমার সাহা বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় নিহত জুয়েল হোসেনের আপন চাচী গ্রেপ্তারকৃত সেলিনা খাতুনের সাথে অবৈধ পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি পারিবারিকভাবে জানাজানি হলে উভয়কে শতর্ক করে সম্পর্কে নিষেধ দেওয়া হয়। জুয়েল নিষেধ না মেনে যাতায়াত করতে থাকলে ক্ষিপ্ত হয়ে সেলিনা খাতুনের সৎ ছেলে মো. মেহেদী হাসানের সাথে শত্রুতা ও হাতাহাতি হয়।
অপর দিকে মেহেদী হাসান লিটনের বড় ভাই সুমন এক রাতে কু-মতলবে সেলিনা খাতুনের ঘরে ঢুকার অভিযোগে সামাজিকভাবে বিচার-শালিশে সাত হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং সুমনকে নিহত জুয়েল মারপিট করে। এ ঘটনায় জুয়েলের সাথে মেহেদী হাসান লিটনের পরিবারের শত্রুতা সৃষ্টি হয়।
প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে মেহেদী হাসান লিটন এক পর্যায়ে কৌশলে সেলিনা খাতুনের সাথে পরকিয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে। জুয়েলের সাথে সেলিনা খাতুনের সম্পর্কের অবনতি হলে বাড়িতে যাতায়াত করতে নিষেধ দেয়। কিন্তু তা অমান্য করে যাতায়াত করতে থাকে।
এরপর সেলিনা খাতুন, মেহেদী হাসান লিটন ও মেহেদী হাসান মিলে জুয়েলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন গত ৩ মাচ রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সেলিনা খাতুন মোবাইলে জুয়েলকে তার বাড়িতে ডেকে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বলে কৌশলে কয়েকটি ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর বাড়ির পেছনে মেহেদী হাসান লিটন ও মেহেদী হাসানের কাছে রেখে আসলে দুজনে মিলে হত্যাকান্ড ঘটায়।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলুর রহমান বলেন, গত ৪ মার্চ নিহত জুয়েল আলীর বাবা মো. সাকেম আলী বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় মামলা করেন। শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃতদের নাটোর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য