logo
news image

প্রতিশ্রুতির জালে আটকে বাসটার্মিনাল

ইমাম হাসান মুক্তি, লালপুর (নাটোর)
নাটোরের লালপুরে বাস টার্মিনাল স্থাপন ৩০ বছর ধরে প্রতিশ্রুতির জালে আটকে আছে। টার্মিনাল ও যাত্রী ছাউনী না থাকায় মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চোর-প্রতারকদের খপ্পরে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের জিনিসপত্র খোয়া যাচ্ছে।
সড়করের দুপাশে সিএনজি, অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট, স্বাভাবিক চলাচলে দুর্ভোগ ও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, এই রুটে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিদিন শতাধিক বাস চলাচল করে। ব্যবসা প্রধান এলাকা লালপুর থেকে ঈশ্বরদী, বাঘা, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বিভিন্ন রুটে প্রায় ৫ হাজার যাত্রী এ সকল বাস যাতায়াত করেন। এছাড়াও ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন মালবাহী শতাধিক যানবাহন চলাচল করে।
বাস টার্মিনাল কিংবা যাত্রী ছাউনী না থাকায় যাত্রীদের রাস্তার উপর অথবা দোকানের সামনে এলোপাতাড়ি যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী ও মালামাল উঠানো-নামানো হয়। বাস থামার নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় বাসে উঠার জন্য যাত্রীদের ছুটে বেড়াতে হয়।
যাত্রী ছাউনী না থাকায় ঝড়-বৃষ্টি ও প্রখর রোদে খোলা আকশের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। ভোর রাতে নাইট কোচগুলোর যাত্রীরা নিরাপত্তা হীনতায় ভোগেন। অনেক সময় ছিনতাইকারীর কবলে মালামাল ও টাকা-পয়সা হারান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মরহুম ফজলুর রহমান পটল ১৯৯১ সালে লালপুর বাস টার্মিনাল ও ত্রিমহোনীতে ওভার ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি।
জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবু তালহা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৮ সালে টার্মিনাল নির্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সড়ক বিভাগ বরাবর ডিও দেন। সেই পর্যন্ত শেষ, তা বাস্তব প্রতিফলন দেখা মিলেনি।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়ন সহসভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ সংসদ সদস্য হওয়ার পর ২০১৪ সালে একই প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তা প্রতিশ্রুতির জালে আটকে বাস্তবায়িত হয়নি।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুল ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বাস টার্মিনাল নির্মানের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন বা অগ্রগতি নেই।
ঢাকা থেকে আসা সুপার সনি পরিবহনের যাত্রী পাইকপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেন বলেন, সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তায় বাড়ি যেতে চোর-ডাকাতের ভয় আছে। এখানে থাকার মতো কোন স্বজন না থাকায় সমস্যায় পড়েছেন।
ঈশ্বরদী ট্রাভেলসের যাত্রী চকনাজিরপুরের কামাল উদ্দিন ভোররাতে বাস থেকে নেমে বলেন, এত রাতে বাড়ি যাওয়া সম্ভব না। টার্মিনাল থাকলে বসে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেত। এখন খোলা আকশের নিচে ভোর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আরেক যাত্রী সালামপুরের আব্দুল মজিদ বলেন, রাত করে বাড়ি যাওয়া কোন গাড়ি না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সম্প্রতি যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, গত ১০ জানুয়ারি ২০২২ আইন-শৃংখলা সভায় লালপুরের যানজট, বাইপাস সড়ক ও বাস টার্মিনাল বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, লালপুর বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জায়গা সংকট রয়েছে। চলমান সংসদ অধিবেশন শেষে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনদের নিয়ে পরামর্শ করে স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top