logo
news image

অবৈধ সুবিধা না পাওয়ায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন

লালপুর( নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অবৈধ সুবিধা না দেওয়ায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন নৌকার পরাজিত প্রার্থী।
বুধবার (১ ডিসেম্বর ২০২১) উপজেলার ঈশ্বরদী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলাম জয় নিজ বাড়ি পালিদেহা গ্রামে সম্মেলনে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ এনে পুন:নির্বাচনের দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিএনপি প্রার্থীর সাথে আঁতাত করে লালপুর থানার এসআই হিমাদ্রী হালদার ও এএসআই রানা মিয়া আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। নৌকার ব্যাচ খুলে নিয়েছেন ও বাড়ি বাড়ি ঢুকে তাঁর সমর্থকদের পিটিয়েছেন।
এ দিকে ভোটের দিন (২৮ নভেম্বর ২০২১) ওই নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা গৌরীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জোরপূর্বক ভোট কেটে নেওয়ার চেষ্টা করলে প্রশাসন ৬৯টি অবৈধ ভোট বাতিল করে।
প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের সহকারী ব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ) শাহীন উদ্দিন বলেন, সোয়া ১টার দিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলাম জয়ের সাথে তাঁর সমর্থকরা তাৎক্ষণিক ভোট কেন্দ্রের ৪নং কক্ষে প্রবেশ করেন। কোন কিছু বোঝার আগেই সীল ও স্বাক্ষর বিহীন ব্যালট পেপার জোরপূর্বক ভোট কেটে নিয়ে বাক্সে ঢোকানোর চেষ্টা করে। খবর পেয়ে প্রশাসনের লোকজন আসলে তারা পালিয়ে যায়। পরে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ব্যালট পেপারে সীল ও স্বাক্ষর না থাকলে তা স্বাভাবিকভাবেই বাতিল বলে গণ্য হবে। এ ঘটনায় ৬৯ ভোট বাতিল করা হয়েছে।
নাটোরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. রনী খাতুন বলেন, প্রার্থীর উপস্থিতিতে ব্যালট কেটে বাক্সে ফেলার চেষ্টা চালায় সমর্থরা। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণে তৎপর ছিল প্রশাসন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলুর রহমান বলেন, এটা একটি ভোট উৎসব। সবাই আনন্দের সঙ্গে যার যার ভোটকেন্দ্র ভোট দিয়েছে, খুবই ভালো লেগেছে। ভোটগ্রহণ নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জয় বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ তা প্রতিহত করায় পরাজিত হয়ে পুলিশের ওপরই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ভোটের দিন এসআই হিমাদ্রী হালদার ও এএসআই রানা মিয়া ওই ইউনিয়নে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। আইন-শৃংখলা রক্ষায় তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ভোট দিতে পেরে মানুষের মধ্যে প্রশাসনের প্রতি আস্থা ফিরেছে। অবৈধ সুবিধা বঞ্চিত কেউ অভিযোগ করলে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর ২০২১ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অপরাধে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমিনুল ইসলাম জয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাম্মী আক্তারের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়ায় গত ২৫ নভেম্বর ২০২১ রিটার্নিং কর্তকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ঈশ্বরদী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. আব্দুল আজিজ রঞ্জু। তাঁর ঘোড়া প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণার মাইক ২৪ নভেম্বর ২০২১ দুপুরে মো. আমিনুল ইসলাম জয়ের সমর্থকরা লক্ষ্মীপুর থেকে ফিরিয়ে দেন। বিকেলে অপর একটি প্রচারণা মাইক পুরাতন ঈশ্বরদী হতে লক্ষ্মীপুর নির্বাচনী কার্যালয়ে আসার পথে গৌরীপুর কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে রাস্তায় কয়েকজন সমর্থক পথ রোধ করে মাইকের তার ছিড়ে ফেলে প্রার্থীর ছোট ভাই রাকিবুল ইসলামকে চড়-থাপ্পড় মারে।
উল্লেখ্য, তৃতীয় ধাপে নাটোরের লালপুরের ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৮ নভেম্বর ২০২১) সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ছিল ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। তবে পুরুষ ভোটার চেয়ে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
একজনের কোলে চড়ে ভোট দেন মজু ফকির (৭৪)। লালপুর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে ফেরার সময় তিনি বলেন, অনেক দিন নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি। এবার নিজের ভোট দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে, নিজের ভোটটি পছন্দ মতো প্রার্থীকে দেওয়া গেছে।
বিদিরপুর কেন্দ্রের ভোটার সুফিয়া খাতুন (৬৮)। বয়সের ভারে ন্যূজ হয়ে হাঁটেন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছি। কোনো রকম বিপত্তির মুখে পড়তে হয়নি।
আড়বাব ইউনিয়নের কচুয়া কেন্দ্রে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা রোদে দাঁড়িয়ে ভোটের উৎসবে মেতেছিলেন। ভোটার নিলাঞ্জনা রানী (২৮) বলেন, কোনো ঝামেলা ছাড়া সবার আগে ভোট দিয়েছেন।
চংধুপইল ইউনিয়নের শোভ কেন্দ্রে আঙুলের কালি দেখিয়ে হাসি মুখে করিমন বেওয়া (৫৭) বলেন, মানুষ লাইনে দাঁড়ানোর আগেই ভোট দিয়ে ফেলেছেন। আর চিন্তা নেই।
আড়বাব প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গৃহবধূ আলেয়া খাতুন (২৭) বলেন, এক মিনিটে ভোট দিয়ে খুশিতে বাড়ি ফিরছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করেছেন। এভাবে ভোট দিতে পারবেন, কোনো দিন ভাবতেও পারেননি। নিজের পছন্দমতো প্রার্থীতে ভোট দিয়ে এসেছেন।
প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের পাশে টোকেন দিচ্ছেন প্রার্থীদের লোকজন। রিক্সা/ভ্যানে বাড়ি বাড়ি লোক আনা নেওয়া করেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে সদস্য প্রার্থীদের কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতির তাগাদা লক্ষ্য করা গেছে।
ভোট উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিটি কেন্দ্রের পাশে বসে অস্থায়ী দোকান। এ যেন আনন্দ মেলা। মজা করে গরম জিলাপী খাচ্ছিলেন অনেকে। হরেক রকম পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা। অনেক কেন্দ্রে মিষ্টির দোকানে ভোটারদের ভিড়। মানুষ হেসেখেলে ভোট দিচ্ছেন। ভোটের দিন কেউ কোনো কাজ করে না। কেন্দ্রের বাইরে এসে আড্ডা দেয়। দোকানে নিজে মিষ্টি খান, অন্যদের খাওয়ান।
কেন্দ্রে নির্বাচনের সরঞ্জামাদি শনিবার পাঠানো হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে রোববার কেন্দ্র সমূহে ব্যালট পেপার পৌঁছানো হয়। বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের রহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়য়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, সকাল সাড়ে ৬টার সময় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে।
দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের বেরিলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষ উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top