logo
news image

খুদে চিকিৎসকদের স্বপ্নবীজ

ইমাম হাসান মুক্তি, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর আগে অ্যাপ্রোন পরে ফাইরুজ ইমাম প্রসঙ্গ, জান্নাতুল ফেরদৌস লাবন্য, আফসানা খাতুন, শাহরিন আফরিন সারিকাসহ ১৮ জনের খুদে চিকিৎসক দল মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। তারা একেকটি দলে বিভক্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে প্রবেশের পর সবাইকে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। কেউ শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করছে। আরেক দল গভীর মমতায় মনোযোগ দিয়ে থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপছে। একজন ওজন মাপছে, অপর জন তা পর্যবেক্ষণ করে খাতায় লিপিবদ্ধ করছে। আবার কেউ উচ্চতা পরিমাপ স্কেলে দাঁড় করিয়ে তা লিখছে। এসব শেষে ক্লাসে নিদিষ্ট দূরত্ব নিশ্চিত করে বসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আরেক দল শিক্ষার্থীদের মাঝে কৃমিনাশক ওষুধ বিতরণ করছে।
সোমবার (১ নভেম্বর ২০২১) নাটোরের লালপুর বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ‘ক্ষুদে চিকিৎসক’ শিক্ষার্থীদের মহাকর্মজজ্ঞ। সবাই যেন তটস্থ। মনের আনন্দে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, এই বিদ্যালয়ে মোট ৪৬৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। দুই শিফটে ক্লাস নেওয়া হয়। পঞ্চম শ্রেণির ১১১ জন শিক্ষার্থীর তিনটি শাখায় ক্লাস নেওয়া হয়।  বিদ্যালয়ে পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী ২০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি ‘খুদে চিকিৎসকের’ দল গঠন করা হয়েছে। করোনার পর খুদে চিকিৎসকের এই দলটি ‘রোগীদের’ নাম তালিকাভুক্ত করা, প্রতিদিন থার্মোমিটার দিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা, ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ করা, স্যানিটাইজার ব্যবহার, মাস্ক পরা ও কিছুক্ষণ পরপর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কাজ তদারকি ও কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোসহ নানা কাজ করে।
শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস লাবন্য উৎসাহের সাথে বলে, সাদা অ্যাপ্রোন পরে ডাক্তারের কাজ করতে খুব মজা লাগে। সে ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হয়ে সেবা করার ইচ্ছে প্রকাশ করে।
রহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. সবেদা খাতুন বলেন, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির চটপটে এবং বাকপটু শিক্ষার্থীদের ‘খুদে চিকিৎসক’ বানাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। প্রতি শ্রেণি বা শাখার জন্য তিনজনের একটি দল কাজ করছে। শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে এ কার্যক্রম খুবই ফলপ্রদ। পাশাপাশি রোগজীবাণু সম্পর্কে ধারণা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা শিক্ষা পাচ্ছে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রেহানা পারভিন বলেন, একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি বিদ্যালয়ের ‘খুদে চিকিৎসকেরা’ অন্য শিক্ষার্থীদের সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া, বিভিন্ন স্বাস্থ্যবার্তা, বিভিন্ন অনুশীলনে সহায়তা ও তদারকি করে।
লালপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌসী বলেন, উপজেলায় ১১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১১ সাল থেকে উদ্ভাবন করা হয় এই ‘খুদে চিকিৎসক’ কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিশুদের রোগ নিয়ন্ত্রণে কৃমি নিয়ন্ত্রণ, জলাতঙ্ক, ম্যালেরিয়া, পুষ্টিহীনতা, ভিটামিন এ-প্লাস ক্যাম্পেইন, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রমে ক্ষদে চিকিৎসকদের সম্পৃক্ত করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম সাহাব উদ্দীন বলেন, শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতন করা, সামাজিক সচেতনতা, দেশ ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ কার্যক্রম প্রসংশনীয়। সেই সাথে এই খুদে চিকিৎসকদের মধ্যে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নবীজ বপন হচ্ছে। তারা একদিন দেশ ও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করায় অভ্যস্ত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top