দিঘি দখল নিয়ে হামলায় নিহত ১
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরে দীঘি দখলকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় মখলেছুর রহমান (৪০) নামে এক কৃষক খুন হয়েছেন। ছাপাত মন্ডল (৫৫) নামে অপরজন চিকিৎসাধীন আছেন। শুক্রবার (২৯ অক্টোবর ২০২১) চংধুপইল ইউনিয়নের ঈশ্বরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার জেরে বাড়িতে আগুন ও ভাংচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গ্রামটিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
লালপুর থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরপাড়া গ্রামে ৫ একর ও ৩ একর দুইটি সরকারি দীঘি রয়েছে। দীঘির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে গ্রামের বাদশা প্রামাণিক ও সাহাবুল ইসলামের নেতৃত্বে দুটি পক্ষ গড়ে উঠেছে। প্রায় সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছে আসছে। এবার পুলিশ প্রশাসন সামাজিকভাবে উভয় পক্ষের মধ্যেকার বিরোধ মিমাংসার উদ্যোগ নেয়। উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) স্থানীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ওইদিন পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ বিরোধীয় একটি পক্ষ বৈঠকে উপস্থিত হলেও অপর একটি পক্ষ বৈঠকে হাজির না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি বাতিল হয়। এর পর থেকে পুলিশ প্রতি রাতে গ্রামে টহল দিয়ে আসছিল।
শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার (ফজরের নামাজের সময়) দিকে সাহাবুল পক্ষের সমর্থক মখলেছুর রহমান (৪০) গ্রামের মসজিদের শৌচাগারে প্রাকৃতিক কাজ শেষ করে বের হওয়া মাত্র বাদশা প্রামাণিক পক্ষের লোকজন তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা করে। হামলাকারিরা তাঁকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে তারা ঈশ্বরপাড়া বাজারে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে ছাপাত মন্ডলের ওপর হামলায় গুরুতর জখম করে।
এ সময় টহলরত পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশের সহযোগীতায় গুরুতর আহত মখলেছুর রহমান ও ছাপাত মন্ডলকে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে মখলেছুরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের সময় পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। মখলেছুর ওই গ্রামের ছইমুদ্দিন মন্ডলের ছেলে। ময়না তদন্তের লাশ নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গ্রামে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামে ঢুকতেই হযরত আলীর বাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। বাড়িতে নারী-পুরুষ কেউ নেই। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে আগুন নেভাচ্ছেন। বাবলুর বাড়িতে ভাংচুর করা হয়েছে। হামলাকারী পক্ষের বাড়িগুলো পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। অনেক বাড়িতে নারীরাও নেই।
এই গ্রামে গত ৩০ জুলাই ২০২১ দুই পক্ষের সংঘর্ষে নারীসহ তিনজন আহত হন। বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১২জনকে আটক করে।
লালপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাড়ির কয়েকটি ঘর পুড়ে গেছে। তারা আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের স্ত্রী মোছা. মরিয়ম বেগম (৪৩) বলেন, ফজরের নামাযের সময় অতর্কিতভাবে তাঁর স্বামীর ওপর হামলা করে। চাইনিজ কুড়াল দিয়ে পায়ে ও হাসুয়া দিয়ে পিঠে আঘাত করে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ঘটনায়। এখন ১৮ বছরর ছেলে মো. মাহফুজ মন্ডল ও ১২ বছরের মেয়ে মুন্নি খাতুনকে নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন?
নিহতের ভাই মন্টু মন্ডল (৪৬) বলেন, প্রতিপক্ষরা এর আগে তাঁদের লোকজনের হাত, পা কেটে নিয়ে পঙ্গু করেছে। প্রশাসন প্রতিপক্ষকে কঠোর শাস্তি না দিলে তাঁদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুঠোফোনে বাদশা প্রামাণিকের এক সমর্থক বলেন, তাঁদেরকে বেকায়দায় ফেলতে কে বা কারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
নিহতের মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মুন্নি খাতুন (১২) বলে, বাবার মৃত্যুতে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। সে সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি করে।
সাইফুল ইসলাম (৪৫) বলেন, ২০১৯ সালে তাঁর এক হাত কেটে ফেলেছে প্রতিপক্ষ। আরেকজন সাইদুর রহমান (৬০) বলেন, ৮/৯ মাস আগে তার হাত ও পা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কোন বিচার পাননি।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলুর রহমান বলেন, গ্রামের সরকারি জলাশয়ের ইজারা ও ভোগদখল নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধের জন্ম হয়। এর আগেও অনেকবার মারামারি হয়েছে। বহু মামলা মোকর্দ্দমা হয়েছে। এবার পুলিশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিরোধ মিমাংসার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য বসার ব্যবস্থাও হয়েছিল। কিন্তু এক পক্ষের অনিহার কারণে বসা হয়নি। হঠাৎ ভোরে হামলার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশের বাধার মুখে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য