logo
news image

হিজরী সন শুরুর ইতিহাস

এএসএম মোকাররেবুর রহমান নাসিম।।
পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেশ, জাতি, গোষ্ঠি, ভাষা যেমন ভিন্ন ভিন্ন, তেমনি বর্ষপঞ্জিও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে বাংলা সন বা বাংলা বর্ষপঞ্জি, যার মাসের সংখ্যা ১২ টি, বৈশাখ দিয়ে শুরু চৈত্র মাস দিয়ে শেষ। তেমনি ইংরেজদের জন্য বর্ষপঞ্জি হলো খ্রীষ্টাব্দ। যার মাস ১২ টি, জানুয়ারী দিয়ে শুরু ডিসেম্বর দিয়ে শেষ। তদ্রুপ মুসলিমদের জন্য বর্ষপঞ্জি হলো হিজরী সন। যার মাসের সংখ্যা ১২টি, মহররম দিয়ে শুরু আর জিলহজ মাস দিয়ে শেষ।
বাংলা সন, ইংরেজী খ্রীষ্টাব্দ বা আরবী হিজরী সন ছাড়াও পৃথিবীতে আরো অনেক বর্ষপঞ্জি স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইংরেজী খ্রীষ্টাব্দ গোটা দুনিয়া দখল করে নিয়েছে এবং আরবী হিজরী সন ও মুসলিম বিশ্ব ছাড়িয়ে গোটা দুনিয়া দখল করে নিয়েছে।
মুসলিমদের জীবন, সংস্কৃতি এমনকি ইবাদত সমূহ নির্ধারিত হয় হিজরী বর্ষপঞ্জি ধরে। যেমন রমজানের রোজা/সাওম, হজ্ব, কুরবানী ইত্যাদি। ইংরেজী, বাংলা সহ সকল বর্ষ, মাস, দিন, তারিখ মধ্য রাত ১২ টায় পরিবর্তন হলেও আরবী হিজরী বর্ষ মাস, দিন তারিখ পরিবর্তন হয় সূর্য ডোবার সময়ে বা মাগরিবের সময়। এ সবই হিজরী আরবী বর্ষ পঞ্জিকে অন্য সকল বর্ষপঞ্জি হতে পৃথক করে নিজস্ব স্বকীয়তা তৈরী করেছে। বংলা বা ইংরেজী বর্ষ ৩৬৫ দিনে হলেও হিজরী আরবী সন ১০/১১ দিন কমে ৩৫৪/৩৫৫ দিনে হয়, বিধায় আরবী মাস সমূহ ঘুরে ফিরে শীত, বর্ষা, হেমন্ত সহ সকল ঋতুতেই দেখতে পাওয়া যায়। অথ্যাৎ প্রায় ৩০/৩৩ বছর পর পর রমজান মাস গরমেও আসে, শীতেও আসে, বর্ষাতেও আসে। অর্থ্যাৎ ইংরেজী বর্ষের মতো এইক তারিখ একই ঋতুতে থাকে না। মাস সিলেক্ট করে সামার বা স্প্রীং কাল, বা বর্ষা বা শীত কাল আরবী হিজরীতে মিলেনা। যা বাংলা ইংরেজীতে নির্ধারিত।
এমন বৈচিত্রময় আরবী হিজরী সনের প্রবর্তন নিয়ে তেমন কোন বিতর্ক নাই। মানুষের নবী বা সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত স্বরূপ মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ৬২২ খ্রী. সৌদী আরবের মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করলে, নবী (সাঃ) এর হিজরতকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে যে বর্ষ পঞ্জি চালু করা হয় তাই হিজরী সন হিসাবে পরিচিত। নবী (সাঃ) এর হিজরতের প্রায় ১৬/১৭ বছর পর  ইসলামের ২য় খলিফা বা অর্ধ পৃথিবীর শাসক হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) রাষ্ট্রীয় কাজে সন/তারিখের প্রয়োজন অনুভব করলে হযরত আবু মুসা আশআরি (রাঃ) কর্তৃক প্রস্তাবিত হলে সাহাবা কেরামদের মজলিসে শুরায় (আধুনিক পরিভাষায় সংসদে) উপস্থাপিত হয় এবং বিস্তারিত আলোচনা শেষে মহানবী (সাঃ) এর হিজরতকে সামনে রেখে হিজরী সন গগণা শুরুর সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এ হিজরী সনের প্রথম মাস হলো মর্হরম এবং শেষ মাস হলো জিলহজ্ব। মাসের সংখ্যা ১২ টি এবং ইহা চন্দ্র মাসের সাথে সম্পৃক্ত। চন্দ্রের জন্ম দিন আরবী মাস সমূহের ১ম তারিখ হিসাবে গগণা শুরু হয়। সুতরাং এ মাসের দিন সংখ্যা চন্দ্রের কারণে ২৯/৩০ দিন হয়ে থাকে। যা পূর্ব নির্ধারিত নয়। চন্দ্রকে নিয়ে বর্ষ পঞ্জি তৈরীই যে সঠিক সিদ্ধান্ত তা প্রমাণিত হয় আল কোরআনে। আল্লাহপাক বলেন “তিনি সেই সত্ত্বা যিনি সূর্যকে করেছেন দ্বীপ্তিমান তেজস্বী এবং চন্দ্রকে জ্যোর্তিময় আলোকোজ্জল করেছেন। আর চন্দ্রে গতি নির্ধারিত যাতে তোমরা বছর সমূহের সংখ্যা গনণা ও সময়ের হিসাব জানতে পারে”। (সূরা ইউনুস-০৫)
সর্বশেষ বলা যায় রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মক্কা হতে মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরতের দিন তথা ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর (২৭ সফর) হিজরী সনের গোড়া পত্তন হয়। ১৫ দিন সফর শেষে ২৭ সেপ্টেম্বর মহানবী (সাঃ) মদিনায় পৌছেন। তখন থেকেই হিজরী সনের গগণা শুরু হলেও তা হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) হিজরতের ১৬/১৭ বছর পর বাস্তবায়ন শুরু করেন।

* এএসএম মোকাররেবুর রহমান নাসিম: স্বত্ত্বাধিকারী, নাসিম হজ কাফেলা, লেখক।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top