logo
news image

আমগাছে মিলল কণ্ঠশিল্পী রেজাউলের ঝুলন্ত মরদেহ

ইমাম হাসান মুক্তি, প্রতিনিধি, লালপুর (নাটোর)
নাটোরের লালপুরে বাগানের একটি আমগাছে বাদ্যযন্ত্র বাদক ও কণ্ঠশিল্পী রেজাউল করিমের ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া গেছে। শনিবার (১৪ আগস্ট ২০২১) বেলা ৩ টার দিকে উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের ঢুষপাড়া কৃষ্ণরামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রেজাউল করিমের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামে। তাঁকে নিয়ে গত রোববার (৮ আগস্ট) ‘আজকের পত্রিকা’র শেষ পাতায় ‘কণ্ঠে মানবেন্দ্র, জীবন মানবেতর’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
স্থানীয় মিঠুন কুমার সরকার জানান, উপজেলার কৃষ্ণরামপুর গ্রামের নিখিল সরকারের মেয়ে চৈতালী রানী সরকারের বিয়েতে বাদ্যযন্ত্র (ক্যাসিও) বাজানোর জন্য গতকাল শুক্রবার আসেন রেজাউল করিম। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে শরীর খারাপ লাগার কথা বলে ঘুমাতে যান। বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেলে তিনি ফিরে না আসায় সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। বেলা ৩ টার দিকে বাড়ির পেছনের আমবাগানে একটি আমগাছের ডালের সাথে ঝুলানো অবস্থায় তাঁর মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়। কাঁচা পাটের দড়িতে ঝুলানো মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয়।
রেজাউল সকাল শুরু হয় মাঠের ঘাস কাটেন। একটু বেলা হলেই নিজের রিকশাভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পথে। কখনো মানুষ, কখনো মালপত্র টানেন। মেঠো পথ ধরে যখন ভ্যান চলে, যাত্রীকে গলা ছেড়ে গান শোনান, মানবেন্দ্রর গান-‘কেন কাঁদে পরান কী বেদনায় কারে কহি’। সবাই মুগ্ধ হয়ে গান শোনেন। নীরবে চোখের জল ফেলেন।
রেজাউল তিন সন্তানের বাবা। সম্পদ বলতে শুধু বাড়ির ভিটে আর গানের গলা। দারিদ্র্য তাঁকে লেখাপড়া শিখতে দেয়নি। কারও কাছে গান শিখবেন, তাও ভাগ্যে জোটেনি। যা শিখেছেন নিজের চেষ্টায়। ১৩ বছর বয়সে তিনি সংসারের হাল ধরেন। বাবা মৃত বাদল প্রামানিক গ্রামে যাত্রাপালা করতেন। সেই সুবাদে তিনিও একআনির (শিশুশিল্পী) চরিত্রে অভিনয় করতেন। কখনো বাবার সঙ্গে, কখনো একাই গলা মিলিয়ে যাত্রাপালার গান ধরতেন। নায়ক না, নায়িকার গান। বাবার মৃত্যুর পর সেই গাওয়ার নেশাটাকে পেশা করে পরিবারকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হয়নি। যাত্রাপালার সেই ‘একআনি’ হয়েই থেকে গেলেন এই কণ্ঠশিল্পী। আর ছোটবেলায় যেসব যাত্রাপালায় গানের সুযোগ পেতেন না, সেখানে যন্ত্র সংগত-হারমোনিয়াম।
আধুনিক গান করেন রেজাউল। বেশির ভাগই মানবেন্দ্রর। নজরুল ও রবীন্দ্রসংগীতও গান। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রে নজরুলসংগীতের শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। টেলিভিশনসহ বড় বড় মঞ্চে নজরুলসংগীত গেয়ে প্রশংসায় ভেসেছেন, অনেকেই বলেছেন তিনি একালের মানবেন্দ্র। সৌভাগ্যের খাতায় এটুকুই শেষ।
তাঁর স্ত্রী ছাফিয়া বেগম বলেন, অভাবের সংসার, নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাঁর বউ স্বপ্ন দেখেতেন স্বামী একদিন বড় গায়ক হয়ে নাম কুড়াবেন। সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যায় যখন ঘরে ফেরেন রেজাউল ক্লান্ত পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে, তার পরও হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়েন ঘরের কোনাকাঞ্চিতে। হারমোনিয়ামটাকে পরম যত্নে পরিষ্কার করতেন। মন চাইলে একটু গলাও সাধতেন। অনকে সময় হারমোনিয়ামে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তেন। তাঁর তো ‘সম্পদ ওই গলাটুকুই’।
আব্দুলপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক হিরেন্দ্র নাথ বলেন, মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো প্রস্তুতি চলছে।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলুর রহমান বলেন, তিনি সন্ধ্যা ৬.৪০ মিনিটের দিকে নিহতের খবর পেয়েছে। তিনি ও সহকারী পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) খায়রুল আলম ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য