logo
news image

মুক্তিযোদ্ধার গ্রামে হত্যা

ইমাম হাসান মুক্তি, প্রতিনিধি, নাটোর (লালপুর):
১৯৭১ সালের ২০ জুলাই। নাটোরের লালপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধার গ্রাম রামকৃষ্ণপুরে অতর্কিত ঢুকে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। সেই সব শহীদদের আজো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মেলেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ বক্স মন্ডলের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা জমসেদ আলম (৬৭) আজকের পত্রিকাকে সোমবার (১৯ জুলাই ২০২১) বলেন, পদ্মা নদীর বন্যায় রাস্তায় হাঁটু পানি থই থই করছে। কৃষকের ধান কাটার মৌসুম। রামকৃষ্ণপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হালের গরু দিয়ে ধান মলনে (মাড়াই) ব্যস্ত। মলন শেষ হলে কামলাদের অংশ দেওয়ার পর নতুন ধান উঠবে গোলায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা।
২০ জুলাই মঙ্গলবার আনুমানিক বিকেল ৪টা। পাকসেনারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রামকৃষ্ণপুর গ্রামে ঢুকে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে যায়। তাদের সাথে ছিল বিহারী, রাজাকার ও লালপুর থানার তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা জাফর আলম। থানার নিকটবর্তী মুক্তিযোদ্ধাদের এই গ্রামে ‘গেরিলা আক্রমণের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে’ এমন তথ্যের ভিত্তিতে পাকসেনারা অতর্কিত হানা দেয়।
গ্রামে ঢুকেই বক্স মণ্ডলকে বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার সামনে গুলি করে হত্যা করে। এই খবরে আব্দুল মণ্ডল ও মোজাম্মেল হক দক্ষিণে পদ্মা নদীর দিকে পালানোর সময় পিছু ধাওয়া করে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান। হানাদারদের আরেক দল আছের মিস্ত্রী ও কোকিল খামারুর ছেলে ওলি খামারুকে চিনিবটতলার পূর্বদিকে রাস্তার ধারে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় বাড়ি লুটপাট ও আগুনে পুড়িয়ে দেয়। সেনারা অস্ত্রের মুখে নারী ধর্ষণেও মেতে ওঠে। সেনারা চলে গেলে ওই দিন সন্ধ্যায় লাশগুলো পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রামকৃষ্ণপুর গ্রামে গণহত্যার কোনো চিহ্ন বা নামফলক স্থাপন এখনো হয়নি। সেই সব শহীদদের আজো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মেলেনি।
রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গণহত্যায় শহীদরা হলেন: আব্দুল মণ্ডল, বক্স মণ্ডল, আছের উদ্দিন মিস্ত্রী, ওলি খামারু ও মোজাম্মেল হক।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top