logo
news image

লালপুরের এস কে সুর ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব স্থগিত

প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক :
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী (এস কে সুর চৌধুরী) ও তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার জন্য ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বুধবার (৭ জুলাই ২০২১) এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে এ চিঠি দেয়। ফলে এস কে সুর চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী নিজেদের বা নিজেদের কোম্পানির নামে থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন না। এমনকি কোনো ধরনের সুবিধাও নিতে পারবেন না। এসব হিসাবের বিপরীতে এটিএম কার্ড থাকলেও তাও ব্যবহার করতে পরবেন না তাঁরা।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এনবিআরের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরীর নামে আপনার ব্যাংকে পরিচালিত সব হিসাব হতে অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর স্থগিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১১৬-এ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অনুরোধ করা হলো। চিঠিতে স্থগিতাদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর এবং এ সংক্রান্ত একটি পরিপালন প্রতিবেদন (হিসাবসমূহের সর্বশেষ স্থিতি উল্লেখসহ) জরুরি ভিত্তিতে অবগত করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়। এ ছাড়া গত ২০১৩ সাল থেকে তাঁদের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। এই দুজনের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম ও তাঁর দুই স্ত্রী শাহীন আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগম এবং তাদের সন্তানদের ব্যাংক লেনদেনের তথ্যও জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে এস কে সুর চৌধুরীর ঠিকানা দেওয়া হয়েছে দুইটি। এর একটি হচ্ছে-ফ্ল্যাট নম্বর ২/৬০২, ইস্টার্ন উলানিয়া, ২ সেগুনবাগিচা, ঢাকা। আরেকটি হচ্ছে-৩০/২, ওয়েস্ট রামপুরা, ঢাকা-১২১৯। যদিও সুর চৌধুরী এখন ধানমন্ডির বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এস কে সুর চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমসহ পাঁচজনের ব্যাংক হিসাব তলব করে এনবিআর। এর আগে এস কে সুরসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই কমিটি সম্প্রতি এস কে সুর চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।
জানা গেছে, বিদেশে পলাতক দুর্নীতি মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) লুণ্ঠনে সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শাহ আলমের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। কয়েক কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য চাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এ দুজনসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
গত মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে গঠিত তদন্ত কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও এস এম মুনিরুজ্জামানকে ডেকে কথা বলে। আদালতের নির্দেশে গঠিত এ কমিটি ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গেও কথা বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেই এই কমিটির কার্যালয়।
পি কে হালদারের নেতৃত্বে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ কমপক্ষে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পথে বসিয়েছে একটি চক্র। তাদের সহায়তা করার অভিযোগ আছে এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমের বিরুদ্ধে।
দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক গত ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম চাপা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের পাঁচ থেকে সাত লাখ করে টাকা দিত রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেওয়া হতো দুই লাখ টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি ‘ম্যানেজ’ করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।
রাশেদুল হকের জবানবন্দি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের বিভাগ বদল করা হয়। প্রায় সাত বছর তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।
এস কে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা করা হয়। বর্তমানে তিনি অবসরে রয়েছেন। তিনি নাটোরের লালপুর উপজেলার ধুপইল গ্রামের বাসিন্দা।

সাম্প্রতিক মন্তব্য