logo
news image

ভিক্ষার জমানো টাকার জন্যই ঈশ্বরদীতে প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক মিলন হত্যা

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ

ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া গ্রামে প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক মিলন হোসেন (৩০)কে ভিক্ষার জমানো টাকার জন্যই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে । সোমবার (২৮ জুন) দুপুরে ঈশ্বরদী থানা মিলনায়তনে পাবনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান এক প্রেস ব্রিফিং-এ হত্যারহস্য উদঘাটন ও ৪ আসামী গ্রেফতারের তথ্য উপস্থাপন করেন।

এসপি জানান, ২৪ জুন রাতে আওতাপাড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম প্রামানিকের শয়ন কক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক মিলনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তার হাত, অন্ডকোষ ও গলায়সহ বিভিন স্থানে রক্তাক্ত জখম দেখা যায়। এতে প্রতিয়মান হয় এটি একটি হত্যাকান্ড। ঈশ্বরদী থানা পুলিশ হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে।



হত্যা রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সুপারের নের্তৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  ফিরোজ কবির, অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান আসাদ, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলাম ও এসআই (নিঃ)/মোঃ রবিউল ইসলাম ও এসআই (নিঃ)/মোঃ নাসির উদ্দিন সহ ঈশ্বরদী থানার অন্যান্য অফিসার ফোর্সের সমন্বয়ে পুলিশের একটি চৌকশ টিম কাজ শুরু করেন।

এসসি হত্যার বর্ণনা দিয়ে জানান, নিহত মিলন ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা গ্রামের কানফরদী গ্রামের আবু বক্কার মাতুব্বরের ছেলে। সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্বাভাবিকভাবে হাটাচলা করতে পারে না। চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার দর্শনায় কার্পাসডাঙ্গার ভূমিহীন পাড়ায় তাহার শ্বশুড় বাড়ীতে থেকে ভিক্ষা করত। ৫/৬ বছর আগে ভিকটিম মিলনের সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা এলাকায় ভিক্ষা করা অবস্থায় জাহিদুলের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে কয়েক বছর মিলনকে আসামী জাহিদুল ইসলাম তার ভ্যানে করো দর্শনা এলাকায় ভিক্ষার সুযোগ করে দেয়। একপর্যায়ে আসামী জাহিদুল ইসলাম দর্শনা হইতে তার নিজ বাড়ীতে ফিরে আসে। পরবর্তীতে জাহিদুল ভিকটিম মিলনকে মাসিক ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে পাবনা জেলার চাটমোহর থানার রেল বাজার এলাকায় তার ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে আসে। এই বাসায় নিরঞ্জন নামে আরো একজন ভাড়া থাকত। জাহিদুল তার ভ্যানে মিলনকে নিয়ে তার দ্বারা ভিক্ষা করাতো এবং মাঝে মাঝে নিরঞ্জনও ভিকটিম মিলনকে দিয়ে একই কাজ করাতো। দুই মাস ভিক্ষার পর ভিকটিম মিলন ২০ হাজার টাকা পাওনা হলে আসামী জাহিদুল ভিকটিম মিলনকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বাঁকি টাকা না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এতে আসামী জাহিদুল ও ভিকটিম মিলন এর ঝগড়া হয়।

এঘটনার পর আসামী জাহিদুল ও তার স্ত্রী সামেলা, ছেলে শাকিল ও নিরঞ্জন ভিকটিম মিলনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৪ জুন রাত ১ টার সময় তারা জাহিদুলের ছেলে শাকিলের রুমে ঘুমিয়ে থাকা ভিকটিম মিলনকে ঘুম থেকে উঠায়। হত্যার উদ্দেশ্যে আসামী নিরঞ্জন ভিকটিম মিলনের বুকের উপর চেপে বসে এবং ভিকটিমের দুই হাত চেপে ধরে। আসামী শাকিল ভিকটিমের গলা চেপে ধরে এবং আসামী জাহিদুল ইসলাম ভিকটিমের অন্ডকোষে চাপ দেয় ও ব্লেড দিয়ে ভিকটিমের লিঙ্গের মাথায় পোচ দেয়। এ অবস্থায় মিলন নিস্তেজ হলে আসামীরা ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ভিকটিম মিলনকে তাহাদের ভাড়া বাসায় থাকা ভ্যানের উপর শোয়ায়। তাদের কথা মতো আসামী সামেলা চার্জার ভ্যানের বৈদ্যুতিক তার সংযোগ দিয়ে ভ্যানসহ মিলনকে বিদ্যুতায়িত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

পরে মিলন ভ্যানের চার্জার খুলতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে বলে প্রচার করে এবং লাশ বাড়ীতে পৌছে দেওয়ার কথা বলে লাশ নিয়ে বের হয়। আসামী জাহিদুল তাহার ভ্যানে লাশ উঠিয়ে মাথার নিচে বালিশ ও চাদর দিয়ে ঢেকে আসামী নিরঞ্জন একপাশে ও সামেলাকে একপাশে বসিয়ে চাটমোহর রেলবাজার হতে ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া রহিমপুর গ্রামে আসামী জাহিদুলের বাবা মানিক এর বাড়ী নিয়ে আসে। রাতে আশেপাশের কোন এক স্থানে পুঁতে ফেলার উদ্দেশ্যে মানিকের শয়ন ঘরের মধ্যে লাশটি লুকিয়ে রাখে।

খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মোট ৪ জন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামীরা হলো জাহিদুল ইসলাম, তার স্ত্রী সামেলা, ছেলে শাকিল ও নিরঞ্জন চন্দ্র দাস। জাহিদুল ও নিরঞ্জন গত ২৭ জুন ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top