logo
news image

বাগাতিপাড়ায় মাড়িয়ার তাঁতশিল্পের করুন দশা



মোঃ মামুনুর রশিদ মাহাতাবঃ
নাটোরে বাগাতিপাড়ার  তাঁত কারিগররা মহাসংকটে। সারাদিনের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের টাকায় চলছেনা সংসার। পৈতৃক পেশা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া  এখানকার তাঁতশিল্প বিলুপ্তি'র আশংকা  রয়েছে। 
জানাযায়, উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের মাড়িয়া এলাকায় একসময় অধিকাংশ বাড়িতে তাঁতের কাজ হতো। গৃহবধূরা সারাদিন বাহারি রঙ্গের গামছা,লুঙ্গি,শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকতেন । সে সময়  তাঁতশিল্প  পরিবারের  অনেক পুরুষ সদস্য গ্রামের ছোট-বড় হাট-বাজারগুলোয় পশরা সাজিয়ে তাঁতে তৈরি গামছা,লুঙ্গি,শাড়ি বিক্রয় করে স্বাচ্ছন্দে সংসার চালাতেন। তৎকালে এখানকার তাঁতে তৈরি সামগ্রী দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো।  
বর্তমানে এখানকার তাঁতশিল্পের করুন দশা। অনেকে জীবিকার তাগিদে পৈতৃক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। এখানে শুধু ছত্রিশটি পরিবার  পৈতৃক পেশা তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। শিল্পিরা আর্থিক সংকটের কারণে শুধু গামছা তৈরি করছেন। 
সরেজমিনে পাঁকার মাড়িয়া গ্রামে ঢুকতেই কানে ভেসে আসে তাঁতের খটর-খটর শব্দ।  তাঁত শিল্পিদের বাড়ির ভিতরে বারান্দায়  বসানো রয়েছে তাঁতযন্ত্র। প্রায় প্রতিটি পরিবারে মহিলারা তাঁতে গামছা বুনাতে ব্যস্ত। তাঁদের  মুখেই শোনা যায় তাঁত শিল্পের দূর্দশার  কথা। 
এ গ্রামের নিয়ামত দম্পতি তাঁতশিল্পে সংপৃক্ত। নিয়ামত আলী জানান, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী  মিলে তাঁতে গামছা তৈরি করেন। প্রতিদিন তাঁরা নয় থেকে দশটি গামছা তৈরি করতে পারেন। নিয়ামত আলী সেগুলো বাইসাইকেল যোগে  বিভিন্ন হাট-বাজারে ফেরি করে বিক্রি করেন।
কালপরিক্রমায় আধুনিক কল-কারখানার সাথে প্রতিযোগিতা করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর্থিক সংকটের মধ্যেও তিনি পৈতৃক পেশাকে
টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।
পারুল বেগম জানান,তাঁদের দাম্পত্য জীবন শুরু হয় চল্লিশ বছর আগে। দাম্পত্য জীবনের শুরু থেকেই তাঁতশিল্পে কাজ করছেন। প্রতিনিয়ত তাঁত সামগ্রীর উপকরণের দাম বাড়লেও তুলনা মূলক গামছার দাম বাড়েনি। 
তিনি আরো জানান, তাঁরা এক পুত্র ও দূ' কন্যা সন্তানের জনক-জননী। সন্তানদের বিয়ের পর আলাদা সংসার। শেষ বয়সে  বুড়ো-বুড়ি মিলে সারা দিন একটানা তাঁতে কাজ করলে আটটি গামছা তৈরি করতে পারেন। যা বিক্রয় করলে লাভ হয় আশি টাকা থেকে একশত টাকা। 
  নিত্যপণ্যের মূল্য উর্ধগতিতে  এই  টাকায় সংসার চালাতে দারুণ কষ্ট হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ শিল্পকে
টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। 
পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, গত বছর এডিবির অর্থায়নে তাদের কিছু সহায়তা করা হয়েছিল। এই বছর তাদের কিছু দেওয়া হয়নি। সামনের অর্থবছরে তাদের জন্য কিছু বরাদ্দ দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, তারা আসলে তাদের বিষয়গুলো আমাদের জানায়নি। প্রতিবছরই আমাদের এডিবির প্রকল্প থাকে। এই অর্থবছর তো শেষ হতে যাচ্ছে। তারা যদি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে লিখিত আবেদন করেন তাহলে সামনের অর্থছরে তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top