logo
news image

৫ মে লালপুরে নবেসুমি শহীদ সাগরসহ তিন স্থানে গণহত্যা দিবস

ইমাম হাসান মুক্তি, প্রতিনিধি, নাটোর (লালপুর)
১৯৭১ সালের ৫ মে একই দিনে নাটোরের লালপুরে তিনটি স্থানে গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী। সবচেয়ে মর্মান্তিক হলো নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেড ‘শহীদ সাগর’ হত্যাকান্ডে অর্ধশতাধিক শহীদ হন। এ ছাড়াও গোপালপুর বাজারে সাতজন ও লালপুর-গোপালপুর সড়কের শিমুল তলা নামক স্থানে ছয়জনকে হত্যা করে।


নবেসুমি শহীদ সাগর গণহত্যা

৫ মে নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেড শহীদ সাগর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনী অবরুদ্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অর্ধশতাধিক লোককে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।
মিলের ভেতরে একটি ছোট পুকুরের নাম এখন শহীদ সাগর। সেদিন এই ছোট পুকুরটি রক্তের সাগরে পরিণত হয়েছিল। এই পুকুরের সিঁড়িতে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুকুরটির নামকরণ হয় ‘শহীদ সাগর’।
সরেজমি মঙ্গলবার (৪ মে ২০২১) শহীদ সাগর চত্ত্বরে দেখা মেলে নিরাপত্তা কর্মী আব্দুর রশিদের (৫৫) সাথে। ঘুরে দেখান তিনি। একাত্তরের নির্মমতার সাক্ষী এই শহীদ সাগরের সিঁড়ির যেসব জায়গায় বুলেট বিদ্ধ হয়েছিল, সেসব জায়গায় লাল রং দিয়ে চিহ্নিত রাখা হয়েছে। এই সিঁড়িতে পা রাখলে এখনো গা শিউরে ওঠে, ছমছম করে। এই সিঁড়িতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে অর্ধশতাধিক স্বাধীনতাকামী মানুষ লুটিয়ে পড়েছিলেন। জনশ্রুতি আছে, স্বাধীনতার অনেক বছর পরেও এই পুকুরের পানি রক্তের মতোই লাল ছিল।
এই গণহত্যায় প্রত্যক্ষ জড়িত ছিলেন নাটোরের মেজন শেরওয়ানী ও ক্যাপ্টেন মোখতার এবং ঈশ্বরদীর মেজর উইলিয়াম।
শহীদ সাগরের লাশের স্তূপের ভেতর থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় কয়েকজন মানুষ উঠে আসতে পেরেছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন খন্দকার জালাল আহাম্মেদ। একই সঙ্গে তাঁর ছোট ভাই আব্দুল মান্নান ও বাবা খন্দকার এমাজ উদ্দিন সুগার মিলে চাকরি করতেন। জালাল জানান, পাকিস্তানি সেনাদের নাটোর ক্যাম্পের মেজর শেরওয়ানী খান এসে তাঁদের মিলে বলে গিয়েছিল, ‘তোমরা যদি ঠিকমতো মিল চালাও, তাহলে তোমাদের আমরা কিছু বলব না।’ সেই ভরসায় তাঁরা ছিলেন। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন তাঁদের ধোঁকা দেওয়া হয়েছে।
১৯৭১ সালের ৫ মে সকালে গোপালপুর বাজারে গোলাগুলি হয়। অনেক মানুষ মারা যায়। মিলের মধ্যে থাকার কারণে তাঁরা কিছুই বুঝতে পারেননি। বেলা ১১টার দিকে মিলের ভেতরে মিলিটারি দেখে তিনি তাঁর সহকর্মী কালাম ডাক্তারকে বললেন, ‘চলেন ভাই, পালাই।’ কালাম ভাই বললেন, ‘ওরা তো কথা দিয়েছে আমাদের কিছু বলবে না। অন্য কোনো মিটিং করতে এসেছে হয়তো।’ জালাল জানান, তাঁর কথায় আশস্ত হয়ে তাঁরা আবার কাজে মন দিয়েছেন। তিনি পাওয়ার হাউসে ডিউটি করছিলেন। পাশেই ছিলেন তাঁর বাবা ও ছোট ভাই। পাকিস্তানি সেনারা এসে তাঁদের সবাইকে মিলের জেনারেল অফিসের সামনে নিয়ে বসিয়ে গণনা করল।
তারপর বাঙালি মেসের সামনে মাটিতে সবাইকে উপুড় করে শোয়াল। কেউ মাথা উঁচু করে কিছু দেখার চেষ্টা করলেই রাইফেলের বাঁট দিয়ে বাড়ি দিচ্ছে। মিলের হিসাবরক্ষক আবদুল মান্নানের গলায় সব সময় ছোট একটা কোরআন শরিফ ঝোলানো থাকত। তিনি মাথা উঁচু করে কোরআন শরিফ পড়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় একজন সেনা তাঁর দিকে বন্দুকের বাঁট তাক করে তেড়ে আসছিল। কোরআন শরিফ পড়তে দেখে সে আবদুল মান্নানকে চলে যেতে বলল, কিন্তু তিনি সবাইকে ফেলে একা কিছুতে গেলেন না। এবার একজন সেনা চেঁচিয়ে বলল, ‘মেজর আসলামকো কোন মারা হায়, বাতাও’ (মেজর আসলামকে কে মেরেছ বলো)। বোঝা গেল, স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে ৩০ মার্চ লালপুর উপজেলার ময়না গ্রামে গ্রামবাসীর সঙ্গে এক প্রতিরোধ যুদ্ধে পাকিস্তানিদের ২৫নং রেজিমেন্ট পর্যুদস্ত-ধ্বংশ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সেখান থেকে পাকিস্তানি মেজর আসলামকে ধরে এনে গুলি করে মেরেছিলেন। আর পাকিস্তানি সেনাদের সেদিন সুগার মিলের ওয়াগন দিয়ে রেলগেটে প্রতিরোধ করা হয়েছিল। এই ক্ষোভে তারা সুগার মিলকে টার্গেট করেছে। মিলের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক লে. এম এ আজিম বললেন, ‘মেজর আসলামকে সুগার মিলের কেউ মারেনি।’
এরপর তারা মিলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম), হিসাবরক্ষক, কোষাধ্যক্ষসহ আরেকজনকে নাম ধরে ডাকল। তাঁদের ধরে নিয়ে জেনারেল অফিসে গেল। এবার নিজেদের ভেতরে কাউকে জিজ্ঞেস করল, পাশে কোথাও পুকুর আছে কি না। একজন পুকুরের খবর নিশ্চিত করল। এবার তাঁদের সবাইকে তুলে নিয়ে পুকুরের সিঁড়িতে সার করে দাঁড় করিয়ে দিল। চারদিক থেকে ১২ জন বন্দুক তাক করল।
পানিতে চোখ ভাসিয়ে জালাল আহাম্মেদ একটু থেমে বললেন, ‘বাবা কোথায় যেন দাঁড়ালেন। ছোট ভাই মান্নান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘ভাই, তারা কি আমাদের মেরে ফেলবে?’’ তখন তার কথার কোনো উত্তর দিতে পারিনি। আস্তে করে তাকে পেছনে নিলাম।’
এর ভেতর থেকে এক যুবক উঠে দৌড়ে পালালেন। তাঁকে এক পাকিস্তানি সেনা ধাওয়া করল, কিন্তু তখনো নির্দেশ না পাওয়ায় তাঁকে গুলি করতে পারল না। এরপরেই গুলি করার নির্দেশ এল। সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো গুলি শুরু হলো। তিনিও পড়ে যান লাশের স্তূপের ভেতরে। পরক্ষণেই চেতনা ফিরে পেলেন। মনে হলো তিনি বেঁচে আছেন। সঙ্গে সঙ্গে ‘জিন্দা হে’ বলে এক সেনা এসে তাঁকে লাশের ভেতর থেকে টেনে বের করে বুকে-পিঠে বেয়নেট চার্জ করে পুকুরে ফেলে দেয়। এর পরপরই জিএমসহ অন্যদের এনে গুলি করে তারা চলে যায়।
চেতনা ফিরে পেয়ে জালাল দেখলেন লালপুর ভূমি অফিসের কর্মচারী মেহমান আলী তাঁর মুখটা পানির ভেতর থেকে তুলে সিঁড়ির ওপরে রেখে চলে গেলেন। এতে তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারলেন। মেহমান আলী কোনোভাবে বেঁচে যান।
জালালের এক পা ও এক হাতে শক্তি ছিল। তিনি টানা পাঁচ ঘণ্টায় শরীরটাকে টেনে মিলের পূর্ব পাশের দেয়ালের কাছে আসেন। সেখানে নওশের আলী নামের একজন গার্ড ছিলেন। তাঁরা তাঁকে উঁচু করে দেয়ালের ওপাশে ফেলে দেন। সেখান থেকে এলাকার লোকজন অর্ধমৃত অবস্থায় তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় পৌঁছে দেন। তাঁর ছোট ভাই মান্নান আর ফিরে আসেননি। বাবা এসেছিলেন। অর্ধ উন্মাদ অবস্থায় অল্প কিছুদিন বেঁচেছিলেন। এদিন কোন অবাঙ্গালি যাতে মারা না পড়ে, তাই তাদের মাথায় সাদা রুমাল বাঁধা ছিল।
১৯৭৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গোপালপুর স্টেশনের নাম রাখা হয় আজিমনগর। শহীদ সাগরের পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। ১৯৭৩ সালের ৫ মে মিলের জিএম শহীদ লে. এম এ আজিমের স্ত্রী শামসুন্নাহার আজিম এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর গায়ে আজিমসহ ৪২ জন শহীদের নাম খোদাই করা রয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভের সামনে সুন্দর ছিমছাম একটি চত্বর। পূর্ব পাশে পরিপাটি একটি ফুল-বাগান। পাশেই তৈরি করা হয়েছে একটি শহীদ স্মৃতি জাদুঘর। ২০০০ সালের ৫ মে এটি উদ্বোধন করা হয়েছে। এর ভেতরে এম এ আজিমের ব্যবহৃত পোশাকসহ অন্য জিনিসপত্র রাখা আছে। দেয়ালে রয়েছে তিন ছেলেমেয়ের সঙ্গে একটি ছবি। তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিট। রয়েছে আরও কয়েকজন শহীদের ছবি। রাখা আছে একখানা পরিদর্শন বই। উদ্বোধনের সময় শামসুন্নাহার আজিম লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার জন্য নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের যে অবদান, বুকচিরে এক পুকুর রক্তদানের স্বীকৃতি এই জাদুঘরের মাধ্যমে দেওয়া হলো। এর শুভ উদ্বোধন করতে পেরে আজ আমি গর্বিত।’
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের এক নম্বর ফটক দিয়ে পাকিস্তানি সেনারা ঢুকেছিল। এর পর থেকে এই ফটকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছরের ৫ মে দিনটিতে শুধু এই ফটক খুলে দেওয়া হয়। শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২০০০ সাল থেকে দিনটিকে বাংলাদেশের চিনিকল সমুহের শহীদ দিবস হিসাবে দেশের সবকটি চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারিরা পালন করছে। নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল কর্তৃপক্ষ শহীদদের স্মরনে ফাতেহা পাঠ, পুস্পস্তবক অর্পন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল, কাঙালী ভোজ ও খতমে কোরআনের আয়োজন করে।
এই গণহত্যায় মহান শহীদরা হলেন, লে. (অব.)  আনোয়ারুল আজিম (প্রশাসক), সহিদুল্লাহ (প্রশাসনিক কর্মকর্তা), গোলজার হোসেন তালুকদার (কেইন সুপারেনটেনডেন্ট), সাইফুদ্দিন আহমদ (একাউন্টটেন্ট ইনচার্জ), আবুল হোসেন (এসডিও), আবদুর রউফ (স্টেনোগ্রাফার), খন্দকার আব্দুল মান্নান ভূইয়া (সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা), গোলাম কিবরিয়া (কৃষি কর্মকর্তা), মো. নূরুল হক (হেড ক্যাশিয়ার), আজহার আলী (ক্যাশিয়ার), মকবুল হোসেন (হিসাব সহকারী), আবুল বাসার খান (একাউন্টস ক্লার্ক), মনসুর রহমান (একাউন্টস ক্লার্ক), সাজেদুর রহমান (একাউন্টস ক্লার্ক), খন্দকার ইসমাইল হোসেন (করনীক), হাবিবুর রহমান (পেট্রল পাম্প করনীক), মোসাদ্দারুল হক (ক্লার্ক), মোকসেদুল আলম (ক্লার্ক), আব্দুর রহমান আমিন (সিআইসি), মোহাম্মদ আলী-১ (নিরাপত্তা প্রহরী), মোহাম্মদ আলী-২, মোজাম্মেল হক (বাওড়া), আব্দুল মান্নান তালুকদার (নিরাপত্তা প্রহরী), ফিরোজ মিয়া, আকতার উদ্দিন (নিরাপত্তা প্রহরী), সোহরাব আলী (নিরাপত্তা প্রহরী), আনোয়ারুল ইসলাম (পিয়ন), পরেশ উল্লাহ (পিয়ন), আ. মান্নান, কামাল উদ্দিন (মেশিনম্যান), আবুল কাসেম (খালাসী), আব্দুর রব (খালাসী), শামসুল হুদা (হেড মিস্ত্রি), আব্দুল মজিদ, আবুল কালাম, এস এম নজরুল ইসলাম (বৈদ্যুতিক ফিটার), আয়েজ উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক (শ্রমিক), তোফায়েল প্রামানিক (শ্রমিক), মোসলেম উদ্দিন (শ্রমিক), জহির উদ্দিন, শহীদুল্লাহ (কুক) প্রমুখ। এছাড়া আরো শহীদদের নাম পাওয়া যায়নি।
সেদিন গুলিবিদ্ধ লাশের স্তুপের মাঝে যারা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন হলেন, খন্দকার জালাল আহাম্মেদ,  মেহমান আলী, নওসাদ আলী, খোরশেদ আলম, খন্দকার ইমাদ উদ্দিন আহম্মেদ, ইঞ্জিন সরদার, আব্দুল জলিল সিকদার, তোফাজ্জল হোসেন, আজের উদ্দিন মাল প্রমুখ।

শিমুল তলায় গণহত্যা:
ওইদিন (৫ মে ১৯৭১) লালপুর-গোপালপুর সড়কের শিমুল তলা নামক স্থানে পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞে শহীদ হন ছয়জন।
উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান (২০) মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভারতে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। বাবা হায়াত মালিথার ঘোড়ার গাড়িতে (টমটম) করে গোপালপুর (বর্তমান আজিমনগর) স্টেশনের অ্যাসিস্টেন্ট স্টেশন মাস্টার (এ এস এম) আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সহযোদ্ধা বিএসসিতে অধ্যায়নরত আনোয়ার হোসেন মনি (২০) ও নবেসুমি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আতোয়ার হোসেন মিন্টুকে (১৬) গোপালপুরে আনতে যান। ওই তিনজনের সাথে নাম না জানা আরো তিনজনসহ ছয়জনকে নিয়ে তাঁরা গোপালপুর থেকে লালপুরের দিকে রওনা দেন। মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ নিতে লালপুর হয়ে বাঘার আলাইপুর পদ্মানদীর ঘাট পর্যন্ত টমটমে গিয়ে নৌকায় নদী পার হয়ে  জলঙ্গি ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁদের।
টমটমটি শিমুল তলায় পৌঁছামাত্র একটি লাল ট্রাকে ঈশ্বরদী থেকে আসা হেলমেট পরা পাক আর্মি বাহিনীর সামনে পড়ে যায়। পাকিস্তানি সেনা ও অস্ত্র সজ্জিত ট্রাক দেখে সবাই দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। সেনারা তাদের পিছু ধাওয়া করে সবাইকে গুলি করে হত্যা করে গোপালপুরের দিকে চলে যায়।
এই হত্যাকান্ডে শহীদ তিনজন হলেন, হাবিবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন মনি ও আতোয়ার হোসেন মিন্টু। বাকি শহীদদের পরিচয় জানা যায়নি।

গোপালপুর বাজার গণহত্যা:
একই দিনে (৫ মে ১৯৭১) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গোপালপুর বাজারে এক নির্মম হত্যাকান্ড চালায়।এই হত্যাকান্ডে সাতজন শহীদ হন। তাঁদের স্মৃতিতে ২০১৯ সালের ৫ মে গোপালপুর বাজার কড়ই তলায় নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভ।
শহীদ পরিবারের সন্তান উপাধ্যক্ষ মো. বাবুল আক্তার বলেন, গোপালপুর বাজার হত্যাকান্ডে প্রথম শহীদ হন তাঁর বাবা ডা. শাহাদত হোসেন। ওয়ালিয়া বাজারে তাঁর ডিসপেনসারির পিছনে ছিল স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন বৈঠকের নিরাপদ স্থান। সে কারণে তিনি রাজাকার, আলবদর ও বিহারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন। ওইদিন সকালে তাঁর ব্যবহৃত রেলী সাইকেলটি মেরামতের জন্য গোপালপুর বাজারে যান। এদিকে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল আক্রমনের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঈশ্বরদী বিমান বন্দর থেকে বিহারী ইদুয়ার সহযোগীতায় গোপালপুর বাজারে এসে পৌঁছে প্রথমেই আমার তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল ‘তুম বাঙ্গালি না বিহারী হো?’ তিনি পরিস্কার জবাব দিয়েছিলেন তিনি বাঙ্গালি। তখনই পেছন দিক থেকে ওরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন। এরপর ওরা গোপালপুর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহীদ তোফাজ্জল হোসেনসহ সাত জনকে গুলি করে হত্যা করে।
গোপালপুর বাজার গণহত্যায় সাতজন শহীদ হলেন, ডা. শাহাদত হোসেন, ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন, সাজদার রহমান, আবুল হোসেন, আশরাফ আলী, বকস খলিফা ও কাজি রফিকুল ইসলাম চাঁদ।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top