বন্ধুবরেষু কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর কবর
টি এম আহমেদ কায়সার।।
বন্ধুবরেষু কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর কবর খুঁজে খুঁজে দু'বছর আগে এপ্রিলের এক বিষন্ন দিন ...।
হ্যান্ডসওয়ার্থ সিমেট্রির বিস্তীর্ণ মাঠে তাঁর সমাধি ফলক খুঁজতে খুঁজতে বার বার মনে হয়েছে, আমরা কি চিরকালই জীবন্ত মানুষটি নয়, রক্ত মাংসের মানুষটি নয় গো, বরং শুধু খুঁজে চলি তাঁর কবর; আমরা কি আসলে চৈতন্যের আগোচরে একে অপরের মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা করি নিঃশব্দে; তারপর শুরু করি একে অপরের কবর খোঁজার এক রহস্যময় অভিযান?
জেদ চেপেছিল সিমেট্রির হাজারো হাজারো কবর থেকে নিজে নিজেই খুঁজে বের করব তাঁর কবর। বন্ধু নিশাত, যিনি দয়া করে প্রায় দেড়শো মাইল গাড়ি চালিয়ে আমার বন্ধুর কবর দেখাতে সানন্দে নিয়ে এসেছেন, সাথে ছিলেন তার বর, ফটোগ্রাফার বন্ধু পাবলো খালেদ আর রাধারমণ উৎসবের অন্যতম প্রধান সংগঠক মাননীয় অমর বৈদ্য! সেমেট্রির বেদনাঘন পরিবেশে কেন যেন কান্না পাচ্ছিল খুব; তবু এক ফলক থেকে আরেক ফলক এক সমাধি থেকে আরেক সমাধি খুঁজে শেষমেষ ঠিকই পেয়ে যাই সেই বিশেষ ফলক যাতে লেখা - Delower Hossain Monju /a father /husband /brother and a poet.
কত কত সফল আর আমারই মত কত কত ব্যর্থ পরাজিত জীবন এই মাটির ধুলায় কাদায় মেশে আছে হায়! কত কান্না কত বেদনা কত প্রিয়জনের হাহাকার মেশে আছে সিমেট্রির এই বিহবল বা্যু-তরঙ্গে!
কী সুন্দর কচি বৃক্ষ-চারা গজিয়েছে তাঁর কবরের দুধারে! এ যদি হত, ধরা যাক, আমার কবর, সহসাই মনে এল, -আর কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু যদি আসতেন আমার কবর দেখতে-এই বৃক্ষচারাগুলি দেখে তাঁর খুব আনন্দ হত নিশ্চয়, মৃত্যুর শিয়রে জীবনের এমন অঙ্কুরোদগম দেখে রীতিমত উৎসবের আনন্দ পেতেন মঞ্জু; এনিয়ে দু-চারখানা কবিতাও লিখে ফেলতেন অবলীলায়, কিন্তু মধ্যরাতে তা পাঠ করে কাকে শোনাতেন? কে আর ছিল এমন- ভাল-খারাপ যা-ই লিখেছেন, রাত্রি নিশিথেও তা ফোনে পাঠ করে শোনাবেন?
আমি তো শুধুই এক কবর খুঁজে বেড়ানো মানুষ; এক কবর থেকে আরেক কবর ঘুরতে ঘুরতে একদিন নিশ্চয়ই হাজির হব আমার নিজের কবরের পাশেও; সমাধি ফলকে লেখা থাকবেঃ
Ahmed Kaysher / a looser and a grave-yard hunter
সাম্প্রতিক মন্তব্য