logo
news image

রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়

নাজমুন নাহার সোহগী।।
আমরা স্বাধীন পতাকা তলে বেড়ে উঠেছি, কিন্তু  আমরা কি আদৌ স্বাধীনভাবে উড়তে পারছি? নৈতিক অবক্ষয় কাটিয়ে এখনই রুখে দাঁড়ানোর সময়। ধর্ষণ পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধগুলির মধ্যে একটি। এই নিষ্ঠুরতম জঘন্য কাজকে রোধ করার জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
ধর্ষণ রোধ করার জন্য নির্মম শাস্তি প্রয়োজন। ইরানে ধর্ষণের বিরুদ্ধে খুব কড়া আইন রয়েছে। ইরানে ধর্ষণকারীকে ফাঁসি দেওয়া বা গুলি করে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। লক্ষ্যটি হচ্ছে জনসাধারণকে দেখানো যে ধর্ষণ কোনভাবেই অনুমোদিত নয়। এটি একটি জঘন্য অপরাধ। এই অপরাধ থেকে ধর্ষক কোন ভাবেই মুক্তি পাবে না। এতে ধর্ষণের চিন্তা বা প্রভাব যাদের মধ্যে আছে তাদের ভেতর সচেতনতা বাড়বে।
নারীকে মানুষ হিসেবে ভাবতে পারা এবং নিজস্ব শক্তির বল প্রয়োগ না করা, নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে বারবার যারা, তাদের জন্য এরকম একটা আইন মন্দ নয়।
 ধর্ষণ কঠোর হস্তে রোধ করতে না পারলে ভয়ে নারীদের বিভিন্ন ভালো কাজে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। নারী ও শিশুদের বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ পরিবেশ সরবরাহ করতে হবে।
এক বিংশ শতাব্দীর এই যুগে এখন নারীরা বিজ্ঞান চর্চা করবে, চাঁদে, মঙ্গলে যাওয়ার কথা ভাববে, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি সমতলে অংশগ্রহণ করবে আজ সেখানে  নারীর প্রতি অমর্যাদা ভয়-ভীতি, অবমাননা, ধর্ষণ, হুংকার, হুমকির, ধর্মীয় অপব্যাখ্যার রোষানলে জড়িয়ে নারীদেরকে অবদমিত করা হচ্ছে।
কেউ ধর্ষণ করবে বলে নারী যখন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকে তখন সেখানে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখে। বাহুবলের শক্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য যখন নারীর উপর কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ে, হুমকি দেয় ধর্ষণ করব বলে, কিংবা নানা অজুহাতে তাকে কাবু করা হয়। আর সেই  নারী মানুষ  ধারণ করে নিজের মাঝে দশ মাস। নারী একজন পুরুষের চেয়েও কতটা মর্যাদা সম্পন্ন এবং ক্ষমতাধর সেটা আমরা ভুলে যাই!
নারী-পুরুষের ভেদাভেদ এড়িয়ে নারীকে মানুষ হিসেবে ভাবতে পারার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে সবাইকে।
যে সকল পুরুষ রাজপথে প্লেকার্ড হাতে মুষ্টিবদ্ধ হাত ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে, সচেতনতা জাগিয়ে তুলছে মানুষের মাঝে তাদেরকে আমি শ্রদ্ধা জানাই।
যদি কেউ ভুক্তভোগীকে দোষী করে তাহলে সে অপরাধীকে সায় দিলো, যেটি আরো একটি বড় অপরাধ। আমাদের সবাইকে এখন ভাবতে হবে যখন একটি ধর্ষণ মুক্ত হয় তখন নিরাপদ সমাজ হয়।
রাত বিরাতে চলাফেরা করা, ভুল পোশাক পরার জন্য কোনও ভিকটিমকে দোষ দেওয়ার কোনও জায়গা নেই। ভালবাসলে রাজি না হলে তাকে ধর্ষণ করা এ ধরনের জঘন্য মানসিকতার সমর্থন করা, উস্কানিমূলক
কমেন্ট করা ধর্ষক সৃষ্টি করার সহায়ক। এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। ধর্ষকের কোন ক্ষমা নেই।
পৃথিবীর কোন কোন দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে অনেক আইনে বেশ আলোচিত সমালোচিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, আফগানিস্তানে ধর্ষণের ঘটনা খুব বিরল। এর দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হল শাস্তি, যা মৃত্যুদণ্ড। বিচারের চার দিনের মধ্যে ধর্ষণকারীদের মাথায় গুলি করা হয়। শাস্তি কার্যকর হয় ভুক্তভোগী দ্বারা। কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষকদের ফাঁসি দেওয়া হয়।
এছাড়াও সৌদি আরবের ধর্ষণের বিরুদ্ধে খুব কড়া নিয়ম রয়েছে। ধর্ষণকারীদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। একজন ইসলামী দেশ হিসাবে সৌদি আরব ইসলামী শরিয়া আইন অনুসারে কাজ করে। ধর্ষণকারীদের প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হয় এবং দেহ এবং মাথা পরে এক সাথে সেলাই করা হয়। ধর্ষণকারীদের পাথর নিক্ষেপ দ্বারা মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়।
পৃথিবীর অনেক দেশে অনেক রাস্তায় আমি রাতে বিরাতে একা একা হেঁটেছি লোকজনের ভিড়ে ভিনদেশী টুরিস্ট বন্ধুদের সাথে। কখনো কখনো কোন কোন দেশে পুরুষ বন্ধুদের একই সাথে পাহাড়ে অ্যাডভেঞ্চার করেছি মধ্যরাতে, কিন্তু কখনো কোনো অবমাননার শিকার হইনি। তাদের চোখে দেখেছি নারীর প্রতি মূল্যবোধের উজ্জ্বলতা। নারীকে মানুষ হিসেবে ভাবার মানসিকতা। সেখানে আমি দেখেছি নারী-পুরুষ সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার এক শ্রদ্ধাবোধের পৃথিবী।
ছোটবেলা থেকেই ঘরের ছেলেদেরকে পরিবারে, স্কুলে
যখন মানসিকভাবে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হবে নারীদের প্রতি মর্যাদাশীল হওয়ার জন্য, নারীদেরকে মানুষ হিসেবে ভাবতে পারার জন্য, একজন নারীর প্রতি অবমাননা অবজ্ঞা না করার জন্য, তখন আমাদের সমাজব্যবস্থা দিনে দিনে আরও সহনশীল হয়ে উঠবে। রেপ নয়, ভালবাসুন। সুস্থ্য সমাজে সবাইকে বসবাস করতে দিন। অবক্ষয় কাটিয়ে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময় ।

* নাজমুন নাহার সোহগী: বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী,  ১৪০ দেশ ভ্রমণকারী।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top