মায়ের কবরের পাশেই চির নিদ্রায় শায়িত হলেন কামাল লোহানী
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
মায়ের কবরের পাশেই চির নিদ্রায় শায়িত হলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক,
বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল লোহানী। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সিরাজগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে তার দাফন
সম্পন্ন হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ফিরোজ মাহমুদ বাসসকে জানান, রাত সোয়া
৯টার দিকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় কামাল লোহানীর গ্রামের বাড়ি সনতলায় তার
মরদেহবাহী গাড়ি পৌঁছায়। এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজে জানাজা শেষে তাকে
দাফন করা হয়।
দাফনের আগে কামাল লোহানীর মরদেহ জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় এবং
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করা
হয়। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমামসহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রেসক্লাব
ও উপজেলা প্রশাসন তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। পরে মা রোকেয়া খান লোহানীর
কবরের পাশে, স্ত্রী দীপ্তি লোহানীর কবরে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে তাকে সমাহিত
করা হয় বলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানান। তার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের
অনুপ্রেরণাদাত্রী স্ত্রী দীপ্তি লোহানী ২০০৭ সালের ২৪ নভেম্বরে মৃত্যুবরণ
করেন।
কামাল লোহানীর ছেলে সাগর লোহানী বাসসকে জানান, দুপুরে তার বাবার মরদেহ
হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ২টায় তোপখানা রোডে উদীচী কেন্দ্রীয়
কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
উদীচীর প্রচার ও তথ্য বিভাগের সম্পাদক আরিফ নূর বাসসকে জানান, কামাল
লোহানীর মরদেহ উদীচী কার্যালয়ে নেয়া হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার দীর্ঘদিনের
সাংস্কৃতিক সহকর্মীরা তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
আজ সকাল ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার
ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের
অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কামাল লোহানী ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহী রাজিউন)।
তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি এক ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। কামাল লোহানী দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা ছাড়াও হৃদরোগ ও
ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। কামাল লোহানীর কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে বলে
শুক্রবার তার মেয়ে বন্যা লোহানী জানিয়েছেন।
তিনি জানান, কামাল লোহানীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় ১৭ জুন সকালে তাকে
হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল কোভিড টেস্টের ফলাফল হাতে
পান তারা। রিপোর্টে কামাল লোহানীর কোভিড-১৯ পজিটিভ উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর
তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা
কেন্দ্রে তিনি চিকিসাধীন ছিলেন।
বন্যা লোহানী জানান, কামাল লোহানী অনেক দিন ধরেই ফুসফুস ও কিডনি সমস্যায়
ভুগছিলেন। শুরুতে টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা করানো
হচ্ছিল। কিন্তু অবস্থা বেশ গুরুতর হয়ে পড়লে গত ১৮ মে তাকে রাজধানীর
পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে বেশ
কিছুদিন চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলে ২ জুন তাকে বাসায় নেয়া হয়েছিল।
কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন
শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ কামাল লোহানীর মৃত্যুতে শোক
জানিয়েছেন ।
কামাল লোহানী হিসেবে পরিচিত হলেও, তার পুরো নাম আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা
কামাল খান লোহানী। ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার খান
সনতলা গ্রামে তার জন্ম। বাবা আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী, মা
রোকেয়া খান লোহানী।
কর্মজীবনে কামাল লোহানী দৈনিক মিল্লাত পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু করেন।
এরপর আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন
করেছেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
দুইবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন এই
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তিনি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ও ছায়ানটের সাধারণ
সম্পাদক ছিলেন। কামাল লোহানী ২০১৫ সালে সাংবাদিকতায় একুশে পদক লাভ করেন।
সাম্প্রতিক মন্তব্য