কৃষিতে বাজেট বৃদ্ধি এ সময়ের অগ্রগন্য দাবি
ড. মো. ওমর আলী।।
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহসহ নানা সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য কৃষিতে বাজেট বৃদ্ধি এ সময়ের অগ্রগন্য দাবি।
বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। তাইতো কৃষির মাঝেই লুকিয়ে আছে জাতীর সুখ -দুখ। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পরবর্তী অনুধাবন করেছিলেন এদেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে হলে দেশের খাদ্য দেশেই পয়দা করতে হবে। এজন্য তিনি কৃষি উন্নয়নের স্বার্থে কৃষিতে বাজেট বৃদ্ধি, কৃষিবিদদের মর্যদা বৃদ্ধিসহ নানা সুবিধা সৃষ্টির লক্ষে কৃষির বিভিন্ন সেক্টরে ভৌত অবকাঠামো স্হাপন ও দক্ষ জনবল বৃদ্ধির উপর জোর দেন। তারই ধারাবাহিকতায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই ধারায় এগিয়ে যাচ্ছেন।
এটা বলাবাহুল্য যে দেশ যদি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকে তাহলে মানুষ যেমন শান্তিতে থাকবে সরকার তারও চেয়ে বেশী স্বস্তিতে থাকবে। কারন দেশে খাদ্য ঘাটতি থাকলে একদিকে যেমন জনগনের চাপ থাকে অন্যদিকে সেই ঘাটতি খাদ্য আমদানি করতে গিয়ে সরকারকে পড়তে হয় নানা জটিলতায়। এসব বিষয় মাথায় রেখেই করোনাজনিত কারণে যাতে দেশে খাদ্য ঘাটতি না হয় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ঘোষণা দিয়েছেন যে কোথাও এক ইনচি পরিমান জায়গাও যাতে ফাঁকা না থাকে। অর্থাৎ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে দেশের সব জায়গা জমি আবাদের আওতায় আনতে হবে। এছাড়াও সরকার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি এমন কি বসত বাড়ির আশেপাশের জায়গাগুলো শাক-সবজি ও ফলমূল চাষের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে করে জমির সুষ্ঠু ববহার হবে সেই সাথে বৃদ্ধি পাবে খাদ্যসহ পুষ্টি নিরাপত্তা।
দেশে সার্বিকভাবে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে মিটে যাবে খাদ্য ঘাটতি সেই সাথে সৃষ্টি হবে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার সর্বোচ্চ যোগান। খাদ্য ও পুষ্টি যোগান বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষ তার পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করতে পারবে। ফলে মানুষের শরীর মন দুটোই ভালো থাকবে। সেই সাথে বাড়বে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং বেশী বেশী সুস্হও থাকতে পারবে। যেমন-বর্তমান করোনা মহামারীতে মানুষ সুস্হ থাকতে চাইলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি একান্ত আবশ্যক। শুধু করোনা নয় সব রোগের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে শরীর সুস্হ থাকবে। আর এজন্য দরকার হবে পরিমিত পরিমান নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য।
এছাড়াও শিল্পের উন্নয়নের জন্য কাঁচামাল সরবরাহও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো কাঁচামাল থেকেই উৎপাদিত হয় ভালো পণ্য। যার অনেকটাই যোগান আসে কৃষি থেকেই। সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধিই হতে পারে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির যোগান বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিমিত খাদ্য চাহিদা পূরণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শিল্পের উন্নয়ন। সর্বোপরি, জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন।
তবে এখানে উল্লেখ্য যে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে বর্তমান পরিস্হিতিতে সরকার গৃহীত সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়াও কৃষির বিভিন্ন সেক্টরে রয়েছে চলমান গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম। তাই এমতাবস্থায়, কৃষির এসকল কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে কৃষির বিভিন্ন সেক্টরে লাগবে অতিরিক্ত দক্ষজনবল ও ভৌতিক সুবিধাসহ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ।
তাই মাননীয় কৃষি মন্ত্রীমহোদয়ের মাধ্যমে কৃষি বান্ধব সরকারের জনদরদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট নিবেদন এই যে,দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আগামী ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্হের পাশাপাশি কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৃষি সেক্টরে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ দিবেন।
* ড. মো. ওমর আলী: প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কৃষিতত্ত্ব), বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষিতত্ত্ব সমিতি
সাম্প্রতিক মন্তব্য