logo
news image

বিকাশে নব্য-জ্বিনের বাদশার অপতৎপরতা

প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম।।
ঈদের আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকী। কিছু দোকান-পাট খোলা হলেও মানুষ ভয়ে বাইরে যেতে চাচ্ছেন না। তাই ঘরে বসে কেনাকাট, লেনদেনের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। করোনা সংক্রমণের আগের তুলনায় অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে ই-ব্যাংকিং, বিকাশ, রকেট ইত্যাদির ব্যবহার বেড়ে গেছে। সথে শুরু হয়েছে সাইবার ক্রাইমের নতুন সংযোজন। মোবাইল লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশেষত: বিকাশের মাধ্যমে অর্থ লেন-দেনের ক্ষেত্রে নব্য-জি¦নের বাদশাদের ভয়ংকর অপতৎপরতা শুরু হয়েছে।
আশেপাশের ভুক্তভোগীরা প্রায়শ:ই এ বিষয়ে অভিযোগ করছেন। টিভিতে বিকাশ কর্তৃপক্ষের সতর্কতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। প্রায় প্রতিদিনই ভূয়া বিকাশ কর্পোরেট কর্মীদের ফোন কলে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে কারো কারো। তাদের কথা বলার স্মার্টনেস ও স্টাইল রীতিমত ভীতিকর। তারা একদিকে বিকাশ গ্রাহকদেরকে ভয় দেখায়, অন্যদিকে অপরাধী সাব্যস্থ্য করে-কেন এটা করেননি, কেন এটা এখনও দেননি, ইত্যাদি। নিরীহ, অল্পশিক্ষিত মানুষ ওদের বেশী টার্গেট। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য তারা হরদম ফোনকল করে ইনিয়ে-বিনিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে জেনে নেয় ও প্রয়োজন মতো ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
এই অপরাধমূলক কাজে তারা বহু ভূয়া ফোন নম্বর ব্যবহার করে থাকে। ফোন নম্বর ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা নিত্য-নতুন কৌশলের আশ্রয় নেয়। একই ফোনে কন্ঠ বদল করে বস সেজে কথা পরিবর্তন করে। কিছুদিন আগে জি¦নের বাদশাহ্দের মত ভণিতা করে, ভয় দেখায়। এটা একদিকে গ্রাহকদের আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা ও ক্ষতি তৈরী করছে, অন্যদিকে অনেকের মধ্যে মানসিক ভীতিও ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাই এই অপতৎপরতা অচিরেই বন্ধ করা দরকার। আমি সরাসরি তাদের কথা বলার ধরণ শুনেছি। গত দুদিনে কল আসা দু’টো নম্বর সংগ্রহ করেছি। সেগুলো হলো- ০১৮৭৪০-১৮৩২০; ০১৩০৯-৩৪২৪৯।
তারা কিভাবে গ্রাহকগণকে প্রতারিত করে তার কিছু ধরণ জনস্বার্থে তুলে ধরা হলো:
বিকাশের ভূয়া কর্মচারী: হ্যালো, আচ্ছালামু আলাইকুম/আদাব। আমি বিকাশের মহাখালী কর্পোরেট শাখা থেকে বলছি।
আপনাকে ক’দিন আগে বিকাশের গ্রাাহক সেবা থেকে একটা মেসেজ পাঠানো হয়েছে।
আপনাকে বিকাশের প্রয়োজনীয় তথ্য আপডেট করতে বলা হয়েছে। আপনি সেটা আপডেট করেছেন কী?
আপডেট করে না থাকলে আজই আপডেট করুন। তা না হলে আপনার একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হবে। আপনি আর কখনো টাকা পাঠাতে বা উত্তোলন করতে পারবেন না।
এত আপনি যদি ওদের কলের উত্তর দিতে জড়তা প্রকাশ করে তাহলে ওরা আপনার দুর্বলতা বুঝে ফেলে নানা প্রশ্ন করতে থাকবে। জিজ্ঞাসা করবে-
আপনার নাম কি?
বাড়ি কোথায়? কি করেন? এই বিকাশ একাউন্টটি নিজের না অন্য কারো মোবাইলে করা, জাতীয় পরিচয় পত্রের আইডি নম্বরটি কার?
আপনি বিকাশ একাউন্ট দিয়ে শুধু ফোন রিচার্জ করেন নাকি অন্যকে টাকা পাঠান? দৈনিক কত টাকা লেন-দেন করেন, লাস্ট কোথায় টাকা পাঠিছেন? কত টাকা পাঠিয়েছেন? ইত্যাদি।
এরপর বলবে আমরা একটা মেসেজ পাঠিয়েছি। সেখানে যে পিন নাম্বারটি আছে সেটি বলুন। এভাবে তারা গ্রাহকের নিজস্ব পিন নাম্বার পরিবর্তন করে ফেলে। তখন আইডি তাদের দখলে চলে যায়।
আপনি দেরী ইতস্তত: করলে বা দেরী করলে বলবে- আমি ফোন ধরেই আছি, এক্ষুনি মোবাইলে মেসেজ করে আপনার পিনটি পাঠন। তা না হলে আপনার বিকাশ নম্বরটি বন্ধ করে দিব।
আপনি হয়তো নতুন গ্রাহক। আর নতুন নতুন গ্রাহকরাই ওদের বেশী টার্গেট। বিষয়টি কারো সাথে শেয়ার না করেই হয়তো আপনি পিন নম্বরটি মেসেজ করে পাটিয়ে দিলেন। আর ওতেই আপনার সর্বনাশ আপনি নিজেই করে ফেললেন!
তারপর আপনি দেখলেন- আপনার একাউন্ট শুণ্য হয়েছে। এরপর শতবার কল দিলেও ঐ ভূয়া নম্বরটিতে আর ঢুকতে পারবেন বলে মনে হয় না। কারণ, ভুক্তভোগীরা এমনটিই জানিয়েছেন।
এছাড়া বিকাশের আসল অফিসে টেলিফোনে পৌঁছানো ও এই ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাড়াতাড়ি কোন সেবা বা সমাধান পাওয়া দুষ্কর। সবাই গা এড়িয়ে চলে। বিকাশ অফিসের লোকেরা বলেন- আমরা টিভিতে সতর্কতামূলক বিজ্ঞাপন দিয়েছি। আপনি জানেন না কেন? ইত্যাদি। সুতরাং, অর্থ আপনার, নিজ অর্থের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রধান দায়িত্বও আপনার।
আজকাল অনলাইনে আর্থিক লেনদেন বেড়ে গেলেও আর্থিক ক্ষেত্রে সাইবার দুর্নীতি ভয়ংকর সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সেজন্য সবাই সাবধান থাকুন। সতর্কতার সাথে লেন-দেন করুন। সন্দেহমূলক ফোন কল পেলে সংগে সংগে সেটা টুকে রেখে পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখায় ফোনে, ইমেইলে অভিযোগ পেশ করুন।
করোনার সমষ্টি সংক্রমেণর মাত্রা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এসময় বিভিন্ন অপরাধীরাও সুযোগ বুঝে গাঝাড়া দিয়ে উঠে অঙ্গুলীচাড়া দিয়ে অপতৎপরতায় নেমে পড়েছে। বিশেষ করে সাইবার অপরাধীরা ঘরে বসে অনলাইনে অর্থ লুটতে বেশী বেশী হ্যাকিং করে চলেছে। আমরাও অনলাইনে বিভিন্ন কাজ করছি-হ্যাকাররা অনলাইনে কুকর্ম করছে ও আপনাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নিচ্ছে। পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে কাউকে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না। এবং অপরিচিত কোন ই-মেইল বা ছবিতে ক্লিক করবেন না। এই বিপর্যয়ের সময় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় যেভাবে নিজের সুরক্ষা নিজেকেই করতে হচ্ছে- নিজের অথ-সম্পর্দ সুরক্ষায় নিজেকে সেভাবেই সতর্ক থাকতে হবে।

* প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন, সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top