logo
news image

মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত উপাচার্য ছাদেকুল আরেফিন

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
মানুষ মানুষের জন্য। যখন কোনো মানুষ বিপদাপন্ন হয় তখন যিনি বিপন্নের পাশে দাঁড়ায় সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে উষ্ণতার পরশ ছড়িয়ে দেন তারাই প্রকৃত মানুষ। করোনায় দেশের এই ক্রান্তিকালে প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে উদারনৈতিক মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন।
করোনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হতদরিদ্র, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জন্য নিয়েছেন বহুমুখী পদক্ষেপ। অনেকেই মনে করেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের জন্যও তিনি অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন।
লকডাউনের কারণে সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট শিক্ষার্থী ও অস্বচ্ছল পরিবারের যেসব শিক্ষার্থীরা বরিশালে আটকে পড়েছে, বাড়িতেও যেতে পারছে না আবার টিউশনি বন্ধ থাকায় অর্থাভাবে কষ্টে দিনযাপন করছে, পরিবারের নেই সঞ্চয় এমন অস্বচ্ছল শিক্ষার্থী ও বেকার কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ববি উপাচার্য।
গত মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে কাজ নাই মজুরি নাই (কানামনা) শর্তে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত দৈনিক বেতন ভিত্তিক  ৭১ জন কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় রোজগারও বন্ধ তাই অর্থাভাবে কষ্টে দিন যাপন করছিল কর্মচারীরা। সেই ৭১ কর্মচারীকে ১ মাসের বেতন সমপরিমাণ ৭ লাখ ২ হাজার ৯ শ টাকার আর্থিক অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগে দেড় শতাধিক অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের ৩ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এখনো চলমান আছে শিক্ষার্থীদের এই আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম। এর আগে করোনার এই দুর্যোগে সবার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান উপাচার্য। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বেকার কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির ইফতার মাহফিলের বাৎসরিক বাজেটের ৩০ হাজার টাকা এবং কর্মকর্তা পরিষদ নিজস্ব উদ্যোগে ৬০ হাজার টাকার ফান্ড গঠন করা হয়। এছাড়াও শিক্ষকরা ব্যক্তিগতভাবে তাদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন বলে জানান শিক্ষক সমিতির নেতারা।
উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৩ জন শিক্ষক ও  ৭৪ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়েছেন একদিনের বেতন।
করোনা মহামারিতে ছোটখাটো উপসর্গ থাকলেও  ভয়ে, আতঙ্কে অনেকেই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয় না। তাই বিশ্ববিদ্যায়ের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের এই উদ্বেগ উৎকন্ঠা থেকে রেহাই দিতে জরুরি টেলি স্বাস্থ্য সেবা চালুর উদ্যোগ নেন উপাচার্য। সর্দি, জ্বর, কাশি, বুকে ব্যাথা উপসর্গ নিয়ে মুঠোফোনে ৬০ জনের স্বাস্থ্য সেবা নেয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ড. তানজীন হোসেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা নেয়া সবাই এখন সম্পূর্ণ স্বুস্থ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের বাইরে থেকে ফোন করেও অনেকেই এই স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রেহেনা পারভিন জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ায় উপাচার্য মহোদয় মুঠোফোনে শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর রাখছেন। কোনো শিক্ষার্থী আর্থিক অনটনে থাকলে বা অসুস্থ হলে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করার নির্দেশনা রয়েছে। তার অংশ হিসেবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা অব্যাহত আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে মিললো একই চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস জানান, উপাচার্যের নির্দেশনা, লকডাউনে শিক্ষার্থীরা শারীরিক, আর্থিক যেকোন সমস্যায় নিজ বিভাগে যোগাযোগ করবে। বিভাগের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছি এবং সামনে সংকট বাড়লে সেই সময়ে সহযোগিতা জোরদার করার জন্যও আমরা প্রস্তুত।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কোনো ব্যক্তি যেনে না খেয়ে থাকে, মানবিক দিক থেকে আমরা প্রশাসনিকভাবে বেকার কর্মচারীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সাহায্য করার জন্য বিভাগীয় প্রধানদের নির্দেশনা দিয়েছি। কোনো শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হলেও তার পাশে থাকবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষার্থীদের ঘরে থেকে সরকারি নির্দেশনা, স্বাস্থ্য বিধি মেনে আতঙ্ক না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন উপাচার্য। করোনার দুর্যোগে সংকটকালীন সময়ে সার্বক্ষণিক  শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top