logo
news image

ত্রাণ চাওয়ায় কৃষককে মারপিটকারী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সরকারি সহায়তার হটলাইন নম্বর ৩৩৩ এ ফোন করে ত্রাণ চাওয়ায় নাটোরের লালপুরে এক কৃষককে মারপিটকারী ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে নাটোরের লালপুর থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার (১৫ এপ্রিল ২০২০) মোঃ শহিদুল ইসলাম তাদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে এজাহার দাখিল করলে তাৎক্ষণিকভাবে লালপুর থানার মামলা নং-০৯, তারিখ-১৫/০৪/২০২০ খ্রি., ধারা-৩৬৫/৩৪২/৩২৫/৫০৬ পেনাল কোড রুজু করা হয় ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় ত্রাণ সহায়তার জন্য হটলাইন “৩৩৩” নম্বরে ফোন করে ত্রাণ সহায়তা চাইলে নাটোরের লালপুর উপজেলার ৯ নং অর্জুনপুর-বরমহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সাত্তার, ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ রেজা (৩৫) এবং মোঃ রুবেল (৩০), পিতা-মোঃ হযরত আলী প্রাং, সাং-আঙ্গারীপাড়া, থানা-লালপুর, জেলা-নাটোরগণ শহিদুল ইসলামকে ইউনিয়ন পরিষদে গত ১২-০৪-২০২০ খ্রি. সময় ১৪.৩০ ঘটিকায় মারপিট করেন । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে। 
লালপুরের ৯ নং অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়নের আঙ্গারিপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলামসহ গ্রামের প্রায় ৩০০জন করোনা ভাইরাসের এ সময়ে বেকার হয়ে পড়েন। একদিন গণমাধ্যমে কৃষক শহিদুল জানতে পারেন ৩৩৩ নাম্বারে ফোন করলে খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায়। এরপর গত ১০ এপ্রিল ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে গ্রামের সবার জন্য খাদ্য সহায়তা চান তিনি। সেখান থেকে খাদ্য সহায়তার আশ্বাস মেলে। ৩৩৩ এর মাধ্যমে অবগত হয়ে ইউএনও চেয়ারম্যানকে ওই এলাকায় ত্রাণ সহায়তার নির্দেশ দেন। এর দুইদিন পর গত ১২ এপ্রিল স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার তাকে চৌকিদার দিয়ে ডেকে এনে নিজেই মারধর করেন। ৩৩৩ নম্বরে ফোন করায় এলাকার সম্মান গেছে বলে ওই কৃষককে ধমক দিয়ে বিষয়টি কাউকে না বলার হুশিয়ারি দেন। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
ভুক্তভোগী কৃষক মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, টিভির বিজ্ঞাপনে সরকারি সহায়তার হটলাইন নাম্বার ৩৩৩ দেখে আমিসহ এলাকাবাসীর ত্রাণ সামগ্রী না পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি, এরপরে চেয়ারম্যান আমাকে ডেকে মারধর করে। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের লোকজনের হুমকির মুখে আছি। এই মুহুর্তে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
শহিদুল ইসলামের পুত্র শাহিন আলী জানান, মারপিটের কারণে তার পিতা শহিদুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যান।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ত্রাণ চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে একটু উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। কৃষককে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
লালপুর থানার ওসি সেলিম রেজা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেছেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কৃষককে মারধরের অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়ায় চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ)করা হয়েছে। ঘটনার জন্য চেয়াম্যানকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এটা একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। চেয়ারম্যান বিষয়টি নিস্পতির কথা বললে তা তিনি মিথ্যা বলেছেন।
৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, দেশের এই ক্রান্তিকালে দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সরকার এদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারী এসব ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ। ত্রাণ না দিলেও মারপিট করার অধিকার কারো নেই।
তিনি আরো বলেন, লালপুর-বাগাতিপাড়ার কোন মানুষ না খেয়ে থাকবে তা হতে পারে না। ক্ষুধা নিবারনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রান বিতরণ কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top