logo
news image

খালেদার আইনজীবী সানাহউল্লাহ মিয়া আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাত সোয়া আটটার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
সানাউল্লাহ মিয়ার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি জানান, অসুস্থ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের সিসিউতে সানাউল্লাহ মিয়াকে ভর্তি করা হয়। আজ সেখানে তিনি মা রা যান।
রিজভী আরও জানান, তার কিডনির সমস্যা ছিল এবং প্রচণ্ড খিঁচুনির কারণে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আজ শুক্রবার সকাল থেকেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়ে নিউমোনিয়াতে আক্রা ন্ত হন তিনি।
সানাউল্লাহ মিয়ার বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রচণ্ড শ রীর খারাপ হলে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে বাবাকে ভর্তি করানো হয়। তিনি গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালের সিসিউতে ছিলেন। প্রচণ্ড খিঁচুনি ওঠায় তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আজ ডাক্তাররা জানান, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রা ন্ত হন।’
অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ার মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শোক জানিয়েছেন।
সানাউল্লাহ মিয়া গত বছরের ৩ জানুয়ারি মস্তিষ্কের র ক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় (স্ট্রোক) আক্রা ন্ত হয়ে রাজধানীর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপরে তিনি বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যান। সর্বশেষ তার মুখের বাঁ পাশ বেঁকে যায়।
জরুরি অবস্থার সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ দলের নেতা-কর্মীদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে দলের মধ্যে আস্থার স্থান করে নিয়েছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া। তখন তিনি সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন।
কয়েক বছর আগে ব্রেইন স্ট্রো’কের পর অসুস্থতার মধ্যেও দলীয় কর্মকাণ্ড ও আইনি পেশায় সক্রিয় ছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া।
সানাউল্লাহ মিয়ার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, “কিডনি জটিলতায় একোয়েট নিউমোনিয়ায় আক্রা ন্ত হয়ে আজকে রাতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে তিনি (সানাউল্লাহ মিয়া) মারা গেছেন।”
নরসিংদীর শিবপুরে জন্মগ্রহণকারী সানাউল্লাহ মিয়া স্ত্রী ২ ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। সানাউল্লাহ মিয়ার মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে তার বিদেহি আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
সানাউল্লাহ মিয়ার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আইনজীবীসহ নেতা-কর্মীরা ছুটে যান। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তার মরহে শিবপুরে নিয়ে দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত, সানাউল্লাহ মিয়া ৩৩ বছর ধরে আইনপেশায় যুক্ত। এ ছাড়া তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন।
প্রায় তিনযুগ ধরে আইনপেশার পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সানাউল্লাহ মিয়া। ১৯৭৯ সালে ঢাকা সিটি কলেজে ল’ পড়ার সময়ে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এরপর ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক, ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন। ১৯৮২ সালে ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে তাকে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য করা হয়। ১৯৮৫ সালের ৩ মার্চ আইনজীবী হওয়ার পর ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের সহ-আইন সম্পাদক ছিলেন তিনি।
১৯৯৩ সালে মহানগরের আইন সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালে তিন মাসের জন্য ঢাকা জজকোর্টে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) করা হয় তাকে। তখন তার দায়িত্ব ছিলো সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করা। দলের জন্য আইন অঙ্গণে ও রাজপথে সক্রিয় সানাউল্লাহ মিয়া নিজ এলাকা নরসিংদী-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্যও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় থেকে মনোনয়ন নেয়ার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়নের দেখা পাননি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পাবেন এটা অনেকটা নিশ্চিত ছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া এবং তার অনুসারীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন বঞ্চিত হন তিনি। গুঞ্জন আছে, দলের এই সিদ্ধান্তে বেশ আহত হন তিনি। এর কিছুদিন পরেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top