logo
news image

নাজমুন নাহার ভ্রমণ জগতের নারী আইকন

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
নাজমুন নাহার সোহাগী ভ্রমণ জগতের নারী আইকন। সর্বাধিক রাষ্ট্র ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশি নাজমুন নাহার ভ্রমণ করেছেন বিশে^র ১৪০ দেশ। পৃথিবীর অনেক দেশের নারীদেরই অগ্রযাত্রার আইকন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন দুর্দান্ত সাহসী এ নারী।
মহাপর্বত, মহাপ্রলয়, মহাসমুদ্রের সব বাধা অতিক্রম করে বিগত ২০ বছর অভিযাত্রা করছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হাতে। ২০২০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ভ্রমণ করেন এশিয়ার পাঁচটি দেশ‌। নাজমুন নাহার ১৪০তম দেশ ভ্রমণের ঐতিহাসিক রেকর্ড অর্জন করেন ব্রুনাইতে। নাজমুন নাহারের ভ্রমণের তালিকায় রয়েছেÑ পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিটি দেশ। তিনি সড়কপথে ভ্রমণ করেছেন ইউরোপ ও এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে টানা ঘুরেছেন ৩৫টি দেশ। এরপর ২০১৮ সালে ভ্রমণ করেন ৩২টি দেশ। আর ২০১৮ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ঘুরেছেন পশ্চিম আফ্রিকার ১৫টি দেশ। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘুরেছেন ১৫টি দেশ। সর্বশেষ ভ্রমণ করেছেন ব্রুনাই। নাজমুন নাহারে স্বপ্ন জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত বিশে^র প্রতিটি দেশসহ সব টেরিটোরি দেশে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানো।
এবারের অভিযাত্রায় নাজমুন মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনসহ অন্যান্য শহরে অভিযাত্রা করেন, তারপর জাপানের হিরোশিমা থেকে শুরু করে তিনি দক্ষিণ জাপানের বিভিন্ন শহর ওতাকে, ইয়ামাগুচি, হফু, শিমনোসেকি, কোগা হয়ে ফুকুওকা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন বাংলাদেশের পতাকা হাতে।
এশিয়ার পাঁচটি দেশের ভ্রমণের আগে তিনি ২০১৯ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ভ্রমণ করেন সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, এল সালভাদর, নিকারাগুয়া ও কোস্টারিকা।
পাঁচবার মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার মতো বিপন্ন দশায় পড়েন নাজমুন নাহার। পৃথিবীর যেখানেই যান নাজমুন নাহার, সঙ্গে থাকে বাংলাদেশের পতাকা। লাল-সবুজের পতাকা বহনের জন্য জাম্বিয়া সরকারের একজন গভর্নর তাকে ‘ফ্ল্যাগ গার্ল’ খেতাব দিয়েছেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খবরের শিরোনাম থেকে শুরু করে তিনি পেয়েছেন বহু সম্মাননা। ২০১৯ যুক্তরাষ্ট্রে তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পিস টর্চ বিয়ারার আওয়ার্ড। নাসাউ কলোসিয়ামের ফোবানা সম্মেলনে নাজমুনকে সম্মানিত করা হয়েছিল ‘মিস আর্থ কুইন অ্যাওয়ার্ড’ ও ইয়ুথ কনফারেন্সে ‘গ্লোব অ্যাওয়ার্ড’ দিয়ে। এ ছাড়া ২০১৯ সালে পেয়েছেন অনন্যা শীর্ষ দশ অ্যাওয়ার্ড, অতীশ দীপঙ্কর গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড, জন্টা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, রেড ক্রিসেন্ট মোটিভেশনাল অ্যাওয়ার্ড, উইমেন এম্পাওয়ার্মেন্ট সফল নারী সম্মাননা। নাজমুন নাহার পরবর্তী অভিযাত্রার ম্যাপ করেছেন আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং কিরগিজস্তান পর্যন্ত। খুব দ্রুতই তিনি সৃষ্টি করবেন ১৫০তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক।
নাজমুন নাহারের ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি ছিল অকৃত্রিম নেশা। তার জীবনে দেশ ভ্রমণের অনুপ্রেরণার উৎস তার পরিবার। বাবা মোহাম্মদ আমিন সবসময় তার পাশে থাকতেন। কোনো বিষয়ে নাজমুন নাহার এক পা এগোলে বাবা এগিয়ে দিতেন আরও পাঁচ পা।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করার কারণে স্কুল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ানোর সুযোগ হয়েছে। তবে বিদেশ ভ্রমণের প্রথম সুযোগ আসে তার ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশ নিতে ভারত যাওয়ার সুযোগ হয় তার। তার নেতৃত্বেই বিশ^বিদ্যালয়ের একটি দল ভারতে যায়।
দেশটির মধ্যপ্রদেশের পাঁচ মারিতে অনুষ্ঠিত এ গার্লস গাইড আর স্কাউট সম্মেলনে বিশে^র ৮০টি দেশের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এভাবেই বিশ^ ভ্রমণের ফলে অনেক দেশের মানুষের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। তাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
বেশিরভাগ দেশ নাজমুন নাহার একা ভ্রমণ করলেও চৌদ্দটি দেশ ভ্রমণ করেছেন নিজের মাকে নিয়ে। মাকে নিয়ে ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালা থেকে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়ান তিনি।
একজন বাংলাদেশি নারী হিসেবে দীর্ঘ ভ্রমণে নাজমুন নাহার কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হননি। তার মতে, নারীর প্রতিবন্ধকতা মূলত একটা মানসিক সংগ্রাম, একটা সামাজিক ভীতি। এ ভয়কে জয় করতে পারলে সবকিছুই সহজ হয়ে যায়।
দেশকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন নাজমুন নাহার। এত দেশ ঘুরেও বাংলাদেশেই ফিরে আসেন বারবার। বাংলাদেশের বাইরের দেশগুলোর মধ্যে আইসল্যান্ডই সেরা তার চোখে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, জাপানের হিরোশিমা শহর ও মিয়াজীমি আইল্যান্ড, জাম্বিয়ার ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত, দক্ষিণ ইথিওপিয়ার কনসো, কেনিয়ার লেক নাকুরু, রুয়ান্ডার কিগালি শহর, দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়াইল্ড নেচার, কিউবার হাভানা শহরের দেওয়ালে দেওয়ালে চমৎকার সব গ্রাফিতি, আর্জেন্টিনার আন্দেস মাউন্টেন, ব্রাজিলের ফোজ ডু ইগুয়াচু জলপ্রপাত, পেরুর মাচ্চুপিচ্চু, সুইজারল্যান্ডের আলপ্স পর্বতমালা, অস্ট্রেলিয়ার হ্যাভেন বিচ, নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট কুক, গ্রিসের সান্তোরিনি আইল্যান্ড, স্পেনের পালমা থেকে ভ্যালেন্সিয়া যাত্রা, ইতালির রোম শহরের সৌন্দর্য, আবুধাবির শেখ জায়েদ মসজিদ আমাকে টানে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top