logo
news image

লালপুর শ্রী সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্ধশতবর্ষ উৎসব: প্রবীণদের হৃদয়ে কৈশোরের চেনা মুখ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুয়াশা ঢাকা পৌষের সকাল। ভোর থেকে বয়ে যাওয়া উত্তরের বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। তবে এসব উপেক্ষা করে নানা বয়সের, নানা পেশার মানুষ দলে দলে যোগ দিয়েছেন নাটোরের লালপুর উপজেলার প্রাচীনতম লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সবুজ মাঠে।  সর্বশেষ কবে কার সঙ্গে দেখা হয়েছে, অনেকেই তা মনে করতে পারলেন না। দুরন্তপনার সেই কৈশোর ডিঙিয়ে যখনই জীবিকার ভার পড়েছে, তখনই সবাই ছুটেছেন যে যাঁর মতো। সময় পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে মানুষগুলোও। কিন্তু স্মৃতিচারণায় কৈশোরের যে কথাগুলো উঠে এল, সেগুলো বড্ড চেনা। চোখে ভেসে ওঠে কৈশোরের চেনা মুখটিও।
১৫০ বছর পূর্তিতে শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) নাটোরের লালপুর শ্রী সুন্দরী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় পুনর্মিলনী। সেখানে আসা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিচ্ছিন্নভাবে বলা স্মৃতিগুলোর অনুভূতি মেলালে এমন আবহই তৈরি হয়।
সকাল সাড়ে নয়টায় বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কনকনে শীত উপেক্ষা  করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছেন প্রাক্তণ শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সাথে যোগ দিয়েছে বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। মাঠের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আড্ডা, সেলফি আর কুশল বিনিময়। অনেক দিন পরে দেখা । কথা যেন ফুরোতেই চায় না। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা ও উৎসব সম্মিলনি পতাকা। এরপর পায়রা ওড়ানোর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন, নাটোর-১ আসনের সাংসদ শহিদুল ইসলাম। একই সময় উদ্বোধন করা হয় এই বিদ্যালয় থেকে যে ৬৪ জন শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভের। অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ২৫ জন মারা গেলেও ৩৯ জন বেঁচে আছেন। তাঁরাও এসেছিলেন পুনর্মিলনীতে। তাঁদেরকে অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংবর্ধনা জানানো হয়।
পুনমিলনীতে আসা সোলায়মান হোসেন বলেন, আমি ১৯৫৩ সালে এই বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেছি। পরে দীর্ঘদিন শিক্ষকতাও করেছি এখানে। আমার ছেলে ও তাদের ছেলেরাও এখানে পড়ালেখা করেছে। এ কারণে বিদ্যালয়ের সাথে আমার জীবন মিশে আছে। তিনি জানান, অনুষ্ঠানে তাঁর ব্যাচের কাউকে দেখছি না। তবে সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের দেখে মুগ্ধ হচ্ছি।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে গিয়ে বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, সততার বিরল দৃষ্টান্ত আছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। আমার আগের প্রধান শিক্ষক আ ন ম সোলায়মান স্যারকে দেখেছি তিনি বিদ্যালয়ের গাছের একটা ডাব খেলেও তাঁর মূল্য ক্যাশিয়ারের কাছে জমা দিয়ে বাড়ি যেতেন। বিদ্যালয়ের  কাজে রাজশাহীতে গিয়ে সারাদিন কাটালেও খাবার খরচ হিসাবে এক টাকাও বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে নিতেন না। বিদ্যালয়ের একটি চকও ভুলে পকেটে করে বাড়িতে নিয়ে গেলে তা পরের দিন বিদ্যালয়ে এনে জমা দিতেন। এছাড়াও উদ্বোধনী সভায় বক্তব্য রাখেন, সাবেক সচিব এনামুল হক সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ তোহা মোল্লা , মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সমরেন্দ্র নাথ চৌধরী, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক অমল কুমার চৌধুরী ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সরকার প্রমুখ। 
দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির পর শুরু হয় বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণা। বিকেলে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। এরপর সন্ধায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন ঢাকা থেকে আসা শিল্পীরা। 
প্রধান অতিথির বক্ত্যবে নাটোর-১ আসনের সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, উত্তর বঙ্গের শিক্ষার সুতিকাগার প্রাচীনতম এই বিদ্যালয়ের অনেকেই এখন দেশের বড় বড় স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাঁদেরকে অনুসরণ করে বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি ।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top