logo
news image

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক।  ।  
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও দলটির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়ে বিএনপি-জামাত ঘাপটি মেরে আছে। নিজেদের কুকর্ম ঢাকতে তারা আওয়ামী লীগে জায়গা করে নিয়েছে। সময় এসেছে, বাছাই করে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামাতকে দল থেকে ছাঁটাই করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে এনে জায়গা করে দেয়া। তিনি নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, ‘বিগত ১০ বছরে দেশব্যপী দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। এতো উন্নয়ন সত্বেও কেনো দলে বিএনপি-জামাতকে নিতে হবে?’
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ নেতা।
নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ অডিটোরিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপির সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক নৌ পরিবহনের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-নওগাঁ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রত্না আহমেদসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
বর্ধিত সভায় সঞ্চালনা করেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল।
বিএনপি-জামাতকে ‘অশুভ শক্তি’ মন্তব্য করে নাসিম বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে তারা। কোনদিন তারা আবারো রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিনাশ হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে তা যেন না হয়, সেজন্য দলকে ঠিক করতে হবে।
আওয়ামী লীগ করে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে যাওয়া নেতাদের উদ্দেশ্যে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মানুষ আজ প্রশ্ন তুলছে আওয়ামী লীগে কারা জন্ম নিচ্ছে আর কারা লালিত-পালিত হচ্ছে। নিজেদের ভুল ত্রুটি শুধরে মানুষের কাছে ফিরে যেতে হবে। মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাদের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে আওয়ামী লীগের প্রিয়ভাজন হওয়া যাবে না।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘গর্বের যুবলীগও এখন ক্যাসিনো আক্রান্ত। দল ক্ষমতায় থাকলে নেতারা অহংকারী আর কর্মীরা অসহায় হয়ে যায়। ক্ষমতার দম্ভ থাকে না। মনে রাখতে হবে, অনেক বেদনা ধারণ করেই আজকের আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন শেখ হাসিনা। এই আওয়ামী লীগের ভিত্তি ওই নির্যাতিত কর্মীরাই যারা দুর্দিনে জীবন দেন দলের জন্য। দলের জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দের পারস্পরিক রেষারেষি ও অশুভ প্রতিযোগিতা পরিহার করে গঠনতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা করতে হবে।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক রাজনীতিকে ‘সমঝোতা শিল্প’ মন্তব্য করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিএনপিকে সহ্য করে দলে আনতে পারলে, তাকে মেনে নিতে পারলে, কেন দলের কর্মীরা পরস্পরকে সহ্য করতে পারছেন না?’ বিএনপির অবস্থা খারাপ নয়। তাদের খারাপটা দেখা যায় না, যায় আমাদেরটা, কারণ আমরা ক্ষমতায়। দলের দুঃসময় ভুললে চলবে না। দলের শক্তি পুলিশ-র্যাব নয়, দুঃসময়ের কর্মীরা। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিচ্ছেন। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সক্রিয় ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে স্বয়ং দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তথ্য নিচ্ছেন। দলের পক্ষ থেকে তাদের নির্দেশনা দেয়া হবে। দলের পক্ষে প্রচার সৃষ্টি ও দলের বিপক্ষে অপপ্রচার প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকতে হবে।
রশ্নবিদ্ধ ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত ও কোন টেন্ডারবাজ ব্যক্তিকে আগামীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংযুক্ত হতে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনো কোনো অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয়নি দেবেও না, তাই আগামীতে আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের সময় প্রশ্নবিদ্ধ কোন ব্যক্তিকে দলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে না শেখ হাসিনা। আসছে সম্মেলনের বিষয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলে স্বজনপ্রীতি বাদ দিয়ে ত্যাগী ও ফোর খাওয়া নেতাকর্মীদের দলে সুযোগ করে দিন, তা না হলে আওয়ামী লীগ যেভাবে সুসংগঠিত দল তা আর থাকবে না।
আওয়ামী লীগের ভূমিকা কতদূর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি-জামাতকে সহ করতে পারবেন কিন্তু যিনি সারাজীবন আওয়ামী লীগের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা দিয়েছে তাকে সহ্য করতে পারবেন না এটা তো হতে পারে না। আসুন আমরা সবাই সবাই মিলে শপথ গ্রহণ করি, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোন কমিটিতে যেন কোন প্রকারের স্বাধীনতা বিরোধী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কেউ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ প্রবেশ করতে না পারে।
দেশে বিরোধী দলের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলাদেশের বিরোধী দলের অবস্থা খুবই ভালো, তা না হলে ওরা রাজপথে কথাই বলতে পারতো না, যেটা আমাদের সাথে হয়েছিল। কিন্তু ওদের তা দেখা যায়না আর আমাদেরটা দেখা যায়। বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন পেয়েছে বলেই ক্ষমতায় এনেছে কারণ বাংলাদেশে এখন সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। জনগণের কাছে শেখ হাসিনার আস্থা রয়েছে বলেই কোন নির্বাচনকে তারা বানচাল করতে পারেনি। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি নমিনেশন না পেয়ে একটিবারের জন্য নেত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম না আমাকে কেন নমিনেশন দেওয়া হয়নি, বরং সাথে সাথে ঐ দিন বিকেলে আমি নেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে নির্বাচন পরিচালনার জন্য কাজ করে গিয়েছি, একটিবারের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি, এ হচ্ছে আমাদের রাজনীতি। নতুন নেতৃত্ব যারাই আসবেন দেশ ও মানুষের পাশাপাশি দলের জন্য কাজ করে যাবেন।
এ সময় তিনি আরো জানান, আমরা একটি ডাটাবেজ তৈরি করব যেখানে তৃণমূল আওয়ামী লীগ থেকে পর্যায়ের নেতাকর্মী সংযুক্ত থাকবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেকটির দিকনির্দেশনা খুব দ্রুত চলে আসবে নেতাকর্মীদের মাঝে, কোথায় কখন কাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে লড়াই করতে হবে, দেশ ও জাতির কল্যাণে কি এখন দেশের প্রচার করতে এই সবকিছু ডাটাবেজের মাধ্যমে দ্রুত নেতাকর্মীদের মাঝে পৌছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি সেখানে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মত প্রকাশের ব্যবস্থাও থাকবে।
রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে দলকেন্দ্রিক রাজনীতির ধারা চালু করতে হবে। এজন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ নেতাকর্মীদের দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে চলতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে। দল শক্তিশালী থাকলে কেনো আঘাত আসতে পারবে না।
কেন্দ্রিয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রোকেয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করেছি যা এখন থামানো উচিত। শুদ্ধি অভিযান দলের জন্য চরম লজ্জাজনক। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর শেখ হাসিনার আশা শেষ হতে দেবেন না।’
কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জামাত-শিবিরের ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। আবরার হত্যাকান্ডকে ইস্যু করে জামাত-শিবির আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে বিবৃতি আদায় করেছে। তারা আরেকটি লাশের অপেক্ষায় থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় তাদের সে প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি। তাই ত্যাগীরা অভিমান করে ঘরে বসে থাকবেন না। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখুন।
কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু সাংসদদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিগত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের ভিত্তি কি তা সম্পর্কে অবগত হবার পরও যারা নিজেদের সংশোধন করছেন না, তাদের জন্য দু”সংবাদ অপেক্ষা করছে। নাটোর-১ আসনের সাবেক সাংসদ আবুল কালামকে ছোট্ট একটা ভুলের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়নি। বর্তমান সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুল সতর্ক হয়ে যান, হয়তো আপনার জন্য এর চেয়ে খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপির সঞ্চালনায় জেলায় দলের ৭টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভার সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে একজন করে বক্তব্য রাখেন।
সভায় তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অন্তভূক্ত করে প্রয়োজনে গোপন ব্যালটে প্রতিটি ইউনিয়নে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচনের নির্দেশ দেন কেন্দ্রিয় নেতারা।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top