logo
news image

গুরুদাসপুরে ৪ মাসে ৪০টি বাল্য বিয়ে বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, গুরুদাসপুর।  ।  
বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধে এক অনন্য উদ্যোগ করেছেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার তমাল হোসেন। এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকে সামাজিক আন্দোলন বাল্য বিবাহ এবং ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
তার এই আন্দোলনে কখনও নিজে, আবার কখনও গনমাধ্যম কর্মীদের, কখনও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃত্ত করেছেন। এরই মাঝে সফলতাও পেতে শুরু করেছেন তিনি। গত ৪মাসে অন্তত ৪০টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছেন ইউএনও তমাল হোসেন। তার কাজকর্ম বেশ ভাল চোখেই দেখছেন গুরুদাসপুরবাসী।
চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর উপজেলা। এই উপজেলার জন গুরুত্বপূর্ন স্থান নয়াবাজার। এই বাজারে গেলেই চোখে পড়বে বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধ করণে একটি বিলবোর্ড।
বিল বোর্ডে বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং কি এবং এর ফলে কি শাস্তির বিধান আছে তা উল্লেখ রয়েছে এই বিল বোর্ডে। এছাড়াও ০১৩১৫-১৭১৩৫ ৪ নম্বরটি যেন খুব বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছে উপজেলার সর্বসাধারনের কাছে। বিশেষ এই নম্বরটি বাল্য বিবাহ এবং ইভটিজিং প্রতিরোধ নম্বর হিসেবে ব্যাপক প্রচারনা করেছেন।
শুধু নয়াবাজার নয়, উপজেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সম্প্রতি বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধে ইউএনও তমাল হোসেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিল বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, কখনও বর যাত্রী, কখনও কনে যাত্রী, কখনও আবার শিক্ষার্থী এবং কখনও সাধারণ মানুষ সেজে হানা দিচ্ছেন বাল্য বিবাহের অনুষ্টানে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গত ৪ মাসে প্রায় ৪০টি বাল্য বিয়ে বন্ধ করেছেন তিনি।
বখাটেদের ধরে আইনের আওতায় নিয়ে এসে কারাদন্ড ও জরিমানা করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন। বাল্য বিবাহ থেকে রক্ষা পাওয়া প্রত্যেকটি মেয়েই এখন নিয়মিত স্কুলে যায়। বখাটেদের উৎপাত আর দেখা যায় না। এমনকি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাল্য বিবাহ থেকে রক্ষা পাওয়া মেয়েদের এবং রাস্তা ঘাটে বখাটেদের দ্বারা কেউ হয়রানির শিকার হচ্ছে কিনা সার্বক্ষনিক তা খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি চাপিলা ইউনিয়নের ধানুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী বিউটি খাতুন। নিজের অমতে এবং বয়স না হওয়ার কারনে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ নম্বরে ফোন দিয়ে নিজের বাল্য বিয়ে নিজেই বন্ধ করেন। পরে তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে সাহসীকতার পুরুস্কার।
সূত্র জানায়, প্রশাসন ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের ইউএনও তমাল হোসেন চলতি বছরের ১১ জুন গুরুদাসপুর উপজেলায় যোগদান করেন। যোগদানের এক সপ্তাহ পরেই উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় বাল্য বিবাহ এবং ইভটিজিং বিষয়ে জনগনকে সচেতন করার লক্ষে মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণ করেন।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেইজে বাল্য বিবাহ ও ফেসবুক গ্রুপ খোলা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে করেছেন সচেতনতামূলক সমাবেশ। এই অনন্য উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে থেকে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ইউএনও স্যারের অনন্য উদ্যোগে তিনি সারথী হিসেবে আছেন। বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিহত করতে ইউএনও স্যারের নির্দেশে তাংক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। সর্বপরি বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং সহ সকল অন্যায়কে ইউএনও স্যারের নেতৃত্বে দমন করতে সবাই প্রস্তুত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তমাল হোসেন বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত উপজেলায় বাল্যবিবাহ এবং ইভটিজিংয়ের পরিমানটা অনেক বেশি। যেহেতু ইভটিজিং থেকেই বাল্য বিয়ের উৎপত্তি হয়। সেকারনে প্রথমে আমি বাল্য বিবাহ এবং ইভটিজিং নিয়ে কাজ শুরু করি। সামাজিক এই আন্দোলনে বেশ সাড়াও পাচ্ছি। সবার সহযোগিতায় একদিন গুরুদাসপুর উপজেলা বাল্য বিবাহ এবং ইভটিজিং মুক্ত হবে।
ইউএনও আরো বলেন, নতুন প্রজম্মের মাঝে দেশ প্রেম ছড়িয়ে দিতে এবং মাদক মুক্ত রাখতে তাদের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখার জন্য ইতোমধ্যে ৪২টি স্কুলের ৩’শ শিক্ষার্থী নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী দিনে তরুণ প্রজম্মকে সম্পৃত্ত করে বেশি বেশি খেলা-ধুলার আয়োজন করার ইচ্ছা রয়েছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top