logo
news image

শাবিতে সমাবর্তনের অতিরিক্ত ফি নিয়ে গ্র্যাজুয়েটদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, শাবি।  ।  
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন পর সমাবর্তনের আয়োজন চলছে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রেজিস্ট্রেশন। তবে অতিরিক্ত ফি ধার্য করায় গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে সমাবর্তন নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় শাবিতে গ্র্যাজুয়েটদের রেজিস্ট্রেশন ফি ধার্য হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। যদিও ক্ষোভ অসন্তোষ উপেক্ষা করেই চলছে রেজিস্ট্র্রেশন যা সমাবর্তনের আয়োজনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সাবেক শিক্ষার্থীরা এটাকে স্রেফ ‘বাণিজ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। সমাবর্তনের নামে মোটা অঙ্কের টাকা বাণিজ্যের আয়োজন চলছে বলে অভিমত তাদের। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও প্রশাসনের ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ না থাকায় সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন অনেকেই। ফলে একযুগ পর আয়োজিত ওই সমাবর্তন নানা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।
৩০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কর্তৃক তারিখ নির্ধারণ সাপেক্ষে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য অক্টোবরের ১ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০১-০২ সেশন থেকে ২০১০-১১ সেশন পর্যন্ত পাস করা স্নাতক (অনার্স) ও সমমানের ২০০৫-১৪ সালে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ৫ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ সাপেক্ষে আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া ২০০২-০৩ থেকে ২০১০-১১ পর্যন্ত স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) পাস করা শিক্ষার্থীরা সাড়ে ৫ হাজার টাকা, ২০০২-০৩ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত এমবিবিএস/ বিডিএস/ এমফিল/ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা যারা ২০০৭-২০১৫ সালের মধ্যে ডিগ্রি অর্জন করেছেন তাদের ৬ হাজার টাকা ফি ধরা হয়েছে। এছাড়া সমাবর্তনের ফি’র সঙ্গে আলাদা করে সার্টিফিকেট ও অন্যান্য সনদ ফিও নেয়া হচ্ছে। এদিকে সমাবর্তনের ফি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ জানান শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিমত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে ৩ হাজার টাকার মধ্যে সমাবর্তন ফি নেয়া হচ্ছে। অথচ শাবিতে সমাবর্তন ফি ধার্য করা হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। শাবির গ্র্যাজুয়েটদের দাবি অবিলম্বে ওই অতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে সাধ্যের মধ্যে ফি নির্ধারণ। যদিও ওই দাবিকে উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়েই (১ অক্টোবর) সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশন শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ওয়েবসাইটজনিত জটিলতার কারণে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয় অক্টোবরের ৩ তারিখ থেকে।
সমাবর্তনের নামে গ্র্যাজুয়েটদের সঙ্গে বাণিজ্য করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি শরীফুল ইসলাম বুলবুল ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়াজী। তারা বলেন, সমাবর্তনের ফি নির্ধারণে সাবেক শিক্ষার্থীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন ছিল। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট শাবি শাখার সভাপতি নাযিরুল আযম বিশ্বাস বলেন, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন নামমাত্র ফি দিয়ে সমাবর্তন করে তখন এখানে উচ্চ ফি চাপিয়ে দেয়া পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক। আশা করি প্রশাসন নতুন করে নামমাত্র ফি নির্ধারণ করবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে ছাত্রফ্রন্ট। সমাজকর্ম বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাহাতুল রাফি বলেন, এই ফি অত্যধিক বেশি হয়ে গেছে। এই ফি নির্ধারণের সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সম্ভ্যাব্য ব্যয়ের খাতটাও প্রকাশ করা উচিত বলে আমি মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী অনেক হওয়াই আয়োজন বড় হবে। তবে সমাবর্তনের বেশি ফি কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফি নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দেশের বাইরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত ভিসি ও লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শামসুল হক প্রধান বলেন, শিক্ষার্থীদের অসন্তোষের বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে একাডেমিক কাউন্সিলে সবার মতামতের ভিত্তিতেই সমাবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top