শাবিতে জাফর স্যারের ২৫ বছরের স্মৃতি চারণ
নিজস্ব প্রতিবেদক, শাবি। ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক ও কথা সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের শাবিতে ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘সাস্টে ২৫ বছর’ অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক।
শাহজাদী নওরিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে স্যারকে নিয়ে শৈশব ও জাফর ইকবালের সাথে ক্যাম্পাস লাইফের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। এরপর শাবিপ্রবিতে আগমন ও নিজের শিক্ষকতা জীবনের শুরু নিয়ে কথা বলেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর সহধর্মিণী ড. ইয়াসমিন হক ।
তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের এই ক্যাম্পাসে ২৫টি বছর পূর্ণ হলো, আমি কখনও এই ক্যা¤পাসে আসতে চাই নি, জাফর এইখানে আসতে চেয়েছিলো বলেই ১৯৯৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করি, এই ক্যাম্পাসে আমার অভিজ্ঞতা কম নয় । শাবির প্রায় প্রতিটি প্রশাসনিক পদে থেকেছি । তাই ক্যাম্পাসের সকল নাড়ি নক্ষত্র মুখস্থ হয়ে গেছে। অদ্ভুত এক মায়া জন্মেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি, যা ভুলবার নয় ।
জাফর ইকবাল সম্পর্কে ড. ইয়াসমিন হক ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, ‘খুব অগোছালো মানুষ সে, চরম অগোছালো ছিল বলে একবার এক স্টুডিও তে ছবি তুলতে গেলে তারা পাগল ভেবে তারা বের করে দেয় । সেই আমাকে বই লেখা শুরু করতে উৎসহ যুগিয়েছে, শিক্ষক থেকে লেখকের কাতারে নিয়ে গেছে।’
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমেরিকা ছেড়ে আমি দেশে চলে এসেছি, কারণ হিসেবে সবাই বলে আমি নাকি দেশ সেবা করতে এসেছি, কিন্তু না, আমি এসেছি কারণ আর কিছুদিন আমেরিকা থাকলে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম। এদেশ আমাকে পাগলের মত টানে।
কিন্তু সাস্টে আমার ২৫ বছর চলার পথটা সুখকর ছিলো না, সকলের পক্ষে কথা বলতাম বলে প্রশাসন আমাকে দেখতে পারে না । ছাত্রদের পক্ষ নিতাম বলে আমি সবার চক্ষুশূল।’
সাস্টে কোন মজার ঘটনা আছে কিনা জানতে চাইলে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘শাবিপ্রবির শুরুর সময় একবার কিছু ছাত্ররা আমাকে আর প্রক্টরকে এসে বললো যে, স্যার, আমরা রাত্রে মাছ রান্না করছি, আপনি আর প্রক্টর স্যার এসে আমাদের সাথে খাবেন, আমি আর তৎকালীন প্রক্টর তাদের সাথে গিয়ে মজা করে খেলাম, পরদিন সকালে শুনলাম তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, তারা নাকি সেই মাছ পাশের এলাকা চুরি করে এনেছে, আর আমাদেরকেও খাইয়েছে যাতে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা না নিতে পারি। এসব ঘটনা এখনও আমাকে হাসায় ।
ইয়াসমিন ম্যাডামের সাথে পরিচিত হওয়ার ঘটনাটি জানতে চাইলে স্যার বলেন, ‘তোমাদের বললে বিশ্বাস করবে না, মাত্র একটি শার্ট দিয়ে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করেছি, তখন আমার পরিবারের অবস্থা ভালো ছিল না, আমেরিকাতে যখন পিএইচডি করতে যাই তখন আমার কাছে টাকা ছিল না, তাই খরচ চালাতে ইয়াসমিনের কাছ থেকে ২০০ ডলার ধার করি, কিন্তু ধার নিলাম ঠিক, আর তো শোধ করতে পারি না, তাই চিন্তা করলাম বিয়ে করে ফেলি, ২০০ ডলার শোধ করার চেয়ে বিয়ে করা ভালো।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি বিদেশে যাচ্ছি না আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়েও যোগদান করছি না, কারণ আমি চাই সবাই বলুক, জাফর স্যার শুধুই সাস্টের স্যার ছিলেন। আর কয়েকদিন পর আমি একটি সুন্দর নৌকা বানাবো, আমি আর ইয়াসমিন সারাজীবন নদ-নদী, হাওর-বাওড় ঘুরে বেড়াবো।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের সাথে তিনি নিজের জীবন ও লেখালেখির হাতে খড়ি সম্পর্কে আলোচনা করেন, তিনি ও ইয়াসমিসন হক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
উল্লেখ্য, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক এর শিক্ষকতা জীবন ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে, আর কয়েকদিন পরেই তারা শাবিপ্রবির ক্যা¤পাস ছেড়ে চলে যাবেন ।
সাম্প্রতিক মন্তব্য