logo
news image

৯৯৯–এ ফোনে জানানো হয় মেয়েটি খুন হয়েছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
নাটোরে কলেজছাত্রী জেয়াসমিন আক্তারের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় তাঁর নিজের শয়নকক্ষ থেকে। আত্মহত্যা বা হত্যার কোনো আলামতই তাঁর শরীরে ছিল না। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন—এমনটাই মনে করেছিলেন সবাই। তবে জেয়াসমিনের দাফনের প্রস্তুতির সময় নাটকীয়ভাবে ফোন আসে পুলিশের কাছে। কেউ একজন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানান, ওই কলেজছাত্রী খুন হয়েছেন। পুলিশের দাবি, ফোনের ওই খবরের ওপর ভিত্তি করে তদন্তে নেমে পুলিশ এর সত্যতা পেয়েছে এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে জেয়াসমিনের কথিত প্রেমিক আলম হোসেনকে (২৭)।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার কথা শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা।
জানা গেছে, সদর উপজেলার হালসা গ্রামের আবদুল হাকিমের মেয়ে জেয়াসমিনকে (২৩) গত বুধবার তাঁর নিজ শয়নকক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি স্থানীয় আবুল খায়ের কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।
গ্রেপ্তার আলম হোসেন একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও তিন মাসের সন্তান রয়েছে। জেয়াসমিনেরও আগে দুবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, গত মঙ্গলবার রাতে জেয়াসমিন আক্তার তাঁর পালক বাবা একই গ্রামের জমসেদ আলীর বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। পরের দিন বুধবার সকালে তাঁর শয়নকক্ষ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করেন পরিবারের লোকজন। হত্যা বা আত্মহত্যার কোনো আলামত না থাকায় জেয়াসমিন হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন—এমন ধারণার ভিত্তিতে তাঁকে দাফনের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এমন সময় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানান, জেয়াসমিনকে খুন করা হয়েছে। ৯৯৯ নম্বর থেকে খবর পেয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। লাশ দাফন করতে না দিয়ে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। ময়নাতদন্তে চিকিৎসক শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে পুলিশ আলম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল শুক্রবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান মাহমুদের কাছে তাঁকে হাজির করে জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়। জবানবন্দির বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাইনুল হক জানান, আলম হোসেন জেয়াসমিনকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, জেয়াসমিন তাঁর প্রেমিকা ছিলেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে তিনি জেয়াসমিনের শয়নকক্ষে ঢোকেন এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু জেয়াসমিন বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় তিনি রাগে তাঁকে তিনি গলা টিপে হত্যা করেছেন।
এ ঘটনায় জেয়াসমিনের পালক বাবা জমসেদ আলী বাদী হয়ে সদর থানায় আলম হোসেনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘দাফনের আগমুহূর্তে ৯৯৯ নম্বরে ফোন না এলে জেয়াসমিন হত্যার কথা কেউ জানতেই পারত না। খবর পাওয়ার পর আমরা নিহত ছাত্রীর মুঠোফোনের কল লিস্ট থেকে তাঁর প্রেমিকের সন্ধান পাই। তাৎক্ষণিকভাবে প্রেমিককে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করি। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার হিসেবে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আকরামুল ইসলাম, সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদুল ইসলাম ও গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সৈকত হোসেন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top