logo
news image

জমি নিয়ে বিরোধে বন্ধ হলো নিমতলা দধি ও মিষ্টান্ন ভান্ডার

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে বন্ধ হয়ে গেছে নাটোরের ঐতিহ্যবাহী ‘পুরাতন নিমতলা দধি ও মিষ্টান্ন ভান্ডার’। অর্ধশত বছরের পুরোনো এই মিষ্টির দোকানের জিনিসপত্র সরিয়ে গতকাল শনিবার মাঝখান দিয়ে দেয়াল তুলে দিয়েছেন মো. এরশাদ নামের এক ব্যক্তি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, জমিটির মালিক দুই ভাই। তাঁদের একজনের কাছ থেকে তিনি জমি কিনেছেন। দখল নয়, কেনা জমি গতকাল বুঝ করে নিয়েছেন। তবে আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও জমি দখলে যাওয়ার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি তিনি।
নাটোর শহরের প্রাণকেন্দ্র নিমতলা। সেখানেই অবস্থান পুরাতন নিমতলা দধি ও মিষ্টান্ন ভান্ডার নামের মিষ্টির দোকানটির। এর মালিক দুলাল পাল (৭২)। ঐতিহ্যবাহী এই দোকানটি তিনি নিজে ও নিজের এক ছেলেকে নিয়ে পরিচালনা করে আসছেন। দোকানসহ ওই দাগে মোট ১৩ শতকের কিছু বেশি জমি রয়েছে। এই জমির মালিক দুলাল পাল ও তাঁর ভাই ননি গোপাল পাল।
দুলাল পাল বলেন, অর্ধেক জমির ওপরে তাঁর দোকান ও বসতবাড়ি রয়েছে। বাকি অর্ধেক জমির ভোগদখল করতেন তাঁর ভাই। কিন্তু দখল–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অনেক আগে তাঁদের দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা বাধে। এ অবস্থায় তাঁরা আদালতে একটি বাঁটোয়ারা মামলা করেন। ওই মামলা চলমান থাকা অবস্থাতেই গতকালের ঘটনা ঘটল।
দুলালের পক্ষের অভিযোগ, বাঁটোয়ারা মামলা করার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জমিটির ওপরে স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। তারপরও ননি গোপাল পাল জমিটিতে তাঁর অংশটুকু জনৈক প্রবাসী এরশাদসহ তিনজনের কাছে বিক্রি করে দেন। সে মোতাবেক তাঁরা পূর্ব-পশ্চিম লম্বা করে জমিটির দখল নেন ক্রেতারা। পরে দুলাল পালের দোকানটিও দখল করে নেওয়ার হুমকি দেন তাঁরা। প্রায় দুই বছর আগে একবার দখল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন সরকারের একজন মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দোকানটি রক্ষা পায়। কিন্তু হঠাৎ করে গতকাল সকালে দুলালের পক্ষের লোকজনকে নাটোর পৌরসভায় ডাকা হয়। এ সময় দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাঁদের বলা হয়। তাঁরা বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির আবেদন জানান পৌরসভার মেয়রের কাছে। তবুও সেই আবেদন রাখা হয়নি।
দুলাল পালের ছেলে আইনজীবী রণজিৎ পাল বলেন, তাঁর ছোট ভাইকে পৌরসভা কার্যালয় থেকে ডেকে নিয়ে সমঝোতার কথা বলে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এরপর পরই দুপুর ১২টার কিছু পর এরশাদসহ শতাধিক লোকজন মিষ্টান্ন ভান্ডারে যান। তাঁরা দোকানের মালামাল সরিয়ে ফেলেন। তড়িঘড়ি করে ইট–বালু এনে দোকানের ভেতরে পাকা দেয়াল তুলে দেন। এতে দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারটি বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের আশা ছিল, যেহেতু মামলা হয়েছে, সেহেতু আদালতের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ একটা সমাধান হবে। আদালতে যে রায় হবে, সেটা তারা মেনে নেবে। রায় তাদের বিপক্ষে গেলেও তার বিরুদ্ধে আপিলও করবে না। কিন্তু আদালতের রায় পর্যন্ত দূরের কথা, স্থিতাবস্থার আদেশ থাকা অবস্থাতেই প্রতিপক্ষ জমিটির দখল নিল।
৫০ বছর ধরে দোকানটি চলায় এর সঙ্গে এলাকার অনেকের সখ্য গড়ে উঠেছে। দোকানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরাও মনঃকষ্ট পাচ্ছেন। নিমতলা এলাকারই এক মিষ্টি বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অর্ধশত বছর ধরে এই মিষ্টির দোকানটি চলেছে। এটি বন্ধ হওয়াতে তাঁরাও মনঃকষ্ট পেয়েছেন। কারণ, ব্যবসায়িক প্রতিযোগী হলেও প্রতিষ্ঠানটি নাটোরের মিষ্টি ব্যবসার ইতিহাসের একটি অংশ।
ঘটনাস্থলে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের একজন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মর্তুজা আলী। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি এসেছেন বিষয়টি জানার জন্য। এ ব্যাপারে তাঁর বা তাঁর দলের কোনো আগ্রহ নেই।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী বলেন, এরশাদ টাকা দিয়ে ১০ বছর আগে জমি কিনেছেন। তিনি পৌরসভার কাছে দখল বুঝে নেওয়ার আবেদন করেন। মানবিক কারণে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top