logo
news image

নাটোরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
নাটোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি কিছুতেই দূর হচ্ছেনা। অফিসেরই কর্মকর্তা কর্মচারী এমনকি পরিচ্ছন্নকর্মীও জড়িয়ে পড়েছে ঘুষ বাণিজ্যে। এখানে বাইরের দালালচক্র নয়, অফিসেরই কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সেবা গ্রহিতারা। অলিখিতভাবেই পাসপোর্ট প্রতি ১২শ টাকা ঘুষ নির্ধারণ করা হয়েছে। বারবার গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দুর্নীতির চিত্র উঠে এলেও কর্মকর্তারা বরাবরের মতোই তা অস্বীকার করেছেন। তবে অনিয়ম প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সম্প্রতি অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসের গেটে ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতি এবং দালালমুক্ত’ এই সাইনবোর্ডের নিচেই আনসার সদস্য জাহিদ হাসানের অবৈধ কর্মকান্ডের চিত্র। নিজ দায়িত্ব পালন না করে অন্যের ফরম পুরণে ব্যস্ত তিনি।
জানা গেল ১২’শ টাকা হাতিয়ে নিতেই এতো তোড়জোড় তার। এ যেন প্রদীপের নিচেই অন্ধকার! পাসপোর্ট করতে আসা ভুক্তভোগী নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার রামশার কাজিপুরের বাসিন্দা সামাদ আলী জানান, হয়রানি থেকে মুক্ত হতেই তিনি আনসার সদস্যের হাতে ১২’শ টাকা দিয়েছেন। তবে আনসার সদস্য জাহিদ হাসান তা অস্বীকার করেন।
এরপরে হয়বতপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের ফরম হাতে দেখা মেলে পাসপোর্ট অফিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাখালের। এখানেও ১২’শ টাকায় দফারফা। রাখালকে নিয়ে বায়োএনরোলমেন্ট (ফিঙ্গার ও ছবি তোলার) রুমে গিয়ে প্রশ্ন করা হয়, কেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর হাতে ফরম? এমন প্রশ্নের কোনই সদুত্তর দিতে পারেননি হিসাব রক্ষক সাইফুল ইসলাম ও উচ্চমান সহকারী শরিফুল ইসলাম। তবে ঘুষের টাকা ভাগাভাগির সরল স্বীকারোক্তি দেয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাখাল। সে জানায়, ঘুষের টাকা সে আর আনসার সদস্য জাহিদ হাসান ভাগাভাগি করে নিয়েছে।
সুযোগ পেয়ে অনিয়ম ও হয়রানির নানা ফিরিস্তি তুলে ধরেন ভুক্তভোগি অনেকেই। মোস্তাফিজুর রহমান সৈকত নামে এক ভুক্তভোগি জানান, নাটোর পাসপোর্ট অফিসে উচ্চমান সহকারী শরিফুল ইসলাম সবচেয়ে বেশী হয়রানি করেন। যার কারেণে অসহায় হয়ে মানুষ ঘুষ দিতে বাধ্য হয়। একটা ফরম পুরণ করতে কতো সমস্যা তিনি বের করেন তা বলার মতো নয়। তবে টাকা দিলে সব ঠিক হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, পাসপোর্ট করতে গেলে প্রথমেই আনসার সদস্যরা গেটে আটকে দেন। তারপর ১২’শ টাকার কথা বলেন। টাকা না দিলে ফিঙ্গার হয়না। ঘুষ দিলে সবার আগে ফিঙ্গার নেন হিসাব রক্ষক সাইফুল ইসলাম। অফিসের সবাই ঘুষের টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। এর মধ্যে রয়েছে আনসার সদস্য সাইফুল ও জাহিদ হাসান, উচ্চমান সহকারী শরিফুল ইসলাম, হিসাব রক্ষক সাইফুল ইসলাম।
মামুনুর রশীদ নামে এক যুবক জানান, পাসপোর্ট অফিসে আমার সাথে যে অন্যায় হয়েছে তা জীবনেও ভুলবোনা। নাটোরের ছেলে হয়েও আমার পাসপোর্ট এখনো হয়নি। রাগে দুঃখে আমি পাসপোর্ট পাবার হাল অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছি। ওদের চেয়ে বেঈমান, দুর্নীতিবাজ ও খারাপ লোক আমি খুব কমই দেখেছি।
রনক হাসান নামে এক ভুক্তভোগি জানান, অনিয়মের প্রতিবাদ করায় শরিফুল ইসলাম বলেছে, কিভাবে পাসপোর্ট পাই তা দেখবে। অনিয়ম বন্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ চান সেবাগ্রহিতারা।
বরাবরের মতোই সব অভিযোগ অস্বীকার করে নাটোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আলী আশরাফ জানান, এখানে কেউ টাকা নেয়না। টাকার সাথে কোন সম্পর্ক নাই। সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলছে। কেউ ঘুষ নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কি ধরনের ব্যবস্থা নেবেন, এমন প্রশ্নে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, কি ব্যবস্থা নেবো তা আপনাকে বলতে হবে নাকি?
নাটোর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক জানান, জনগনের দোরগোড়ায় দ্রুত সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৪ সালের আগষ্ট মাসে শহরের চকরামপুর এলাকায় নাটোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম শুরু হয় । জরুরী পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ৬ হাজার ৯শ’ টাকা আর সাধারণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ফি ৩ হাজার ৪৫০ টাকা। এর বাইরে পাসপোর্ট প্রতি যে ১২’শ টাকা ঘুষ নেয়া হয় তা খুবই দুঃখজনক। এর প্রতিকার হওয়া জরুরী। কর্র্তৃপক্ষেও কাছে অনুরোধ থাকবে দ্রুত যেন কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হয়।
জনগনের হয়রানি বন্ধে নাটোর পাসপোর্ট অফিসের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ। তিনি বলেন, জনগণের হয়রানি বন্ধে দ্রুত কার্যকরি প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।
নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেছেন, বিগত সময়ে পাসপোর্ট অফিসে অনিয়মের বিষয়ে কথা উঠেছিল। তা জানার পর আমি জেলা প্রশাসক ও পুলিশের মাধ্যমে তা তদন্ত করে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। সে সময় অনিয়ম বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে শুনলাম আবারো ঘুষ নেয়া শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে অবশ্যই আমি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেবো। নাটোরে কোন অন্যায় দুর্নীতিকে প্রশ্চয় দেয়া হবেনা। পাসপোর্ট অফিসের ঘুষ বানিজ্য কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top