logo
news image

মানসিক ভারসাম্যহীনকে নির্যাতন করে জখম

নিজস্ব প্রতিবেদক।  ।  
বাড়ির দরজা খুলে না দেওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন ভাবীকে লোহার রড় দিয়ে নির্যাতন করে গুরুত্বর জখমের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক দেবরের বিরুদ্ধে। হাতে-পায়ে এবং দু’চোখে রক্তাক্ত অবস্থায় স্বামীর সাথে চিকিৎসা নিতে নাটোরের বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন ওই গৃহবধু। নির্যাতনের শিকার গৃহবধুর নাম বাসরী সাহা। তিনি লালপুরের চংধুপইল বাজার এলাকার গীরী ধারা সাহার স্ত্রী।
বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কথা হয় বাসরী সাহার সাথে। নির্যাতনের শিকার হওয়ার ভয়াবহ বর্ণনা দেন বাসরী সাহা। তিনি জানান, তিনি মানসিক সমস্যায় পঙ্গু হয়ে গেছেন। মাঝে মধ্যে এরকম সমস্যা হলে তিনি অদ্ভুত আচরণ করেন। শুক্রবার সকালে স্বামীর সাথে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু না নিয়ে যাওয়ায় বাড়ির দরজা বন্ধ করে ভেতরে ছিলেন। এসময় তার দেবর মনোজ সাহা দরজা খুলতে বললেও
তিনি খুলেননি। স্বামী না আসা পর্যন্ত খুলবেন না জানালে ঘরের জানালা ভেঙ্গে তার দেবর ঘরে ঢুকে তাকে লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। চোখের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে চোখ নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন,‘ দেখেন দেখেন কিভাবে আমার দুই চোখ নষ্ট করে দিয়েছে, কিভাবে আমার হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে । এভাবে কি কোন মানুষ মানুষকে মারে? আমাকে সবাই বাঁচান, আমি বাঁচতে চাই’। বাসরী সাহার স্বামী গীরী ধারা সাহা জানান, ২৮ বছর পূর্বে তিনি বাসরী সাহাকে বিয়ে করেছেন। তখন থেকেই তার মানসিক সমস্যা ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও ভারতে তার চিকিৎসা করা হয়েছে। গত ১৮ বছর ধরে পার্শ্ববর্তী পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রীসহ সেখানে থাকতেন।
গত বছর তিনি নিজেদের বাড়ি লালপুরের চংধুপইল এসেছেন। শুক্রবার (১৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে মাকে বাইরে রেখে তার স্ত্রী বাসরী ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘরের টিভিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করছিল। এসব দেখে তার ছোট ভাই মনোজ ঘরের জানালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে তার স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে মারধোর করেছে। বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রাসেল বলেন, শুক্রবার দুপুরে গৃহবধু বাসরী সাহা তার স্বামীর সাথে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। বাসরী সাহাকে দেখে মনে হয়েছে তাকে পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তবে বাসরি সাহা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন জানিয়ে চিকিৎসক রাসেল বলেন, তার (বাসরী সাহার) ডান হাত ভেঙ্গে গেছে, তাছাড়াও দুই পা ক্ষত-বিক্ষত ছিল। দুই চোখও আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দেবর মনোজ সাহা মোবাইল ফোনে জানান, তিনি তেমন কোন মারধোর করেননি। তার ভাইয়ের সাথে তার ভাবির একটু হাতাহাতি হয়েছে। মনোজ বলেন, তিনি পাবনা জেলার একটি বয়লার ফিডে পাওয়ার অপারেটিংয়ে কাজ করেন। একারনে তিনি চংধুপইলের বাড়িতেই থাকেন না।
এ ব্যাপারে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) স্বপন কুমার চৌধূরী জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানাকে জানিয়েছিল। আহতকে রাজশাহী মেডিকেলে স্থানান্তর করায় তিনি লালপুরের আব্দুলপুর তদন্ত কেন্দ্রকে জানিয়েছেন। সেখানকার পুলিশ চংধুপইলের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top