logo
news image

ভাষাসৈনিক মতি মিয়াকে খোলা চিঠি

ভাষাসৈনিক মতি মিয়াকে খোলা চিঠি
আশরাফুজ্জামান স্বাধীন।  ।  
প্রিয় বাবা আখতারুজ্জামান (মতি মিয়া)।  কেমন আছ বাবা? কত বছর ধরে তোমার চিঠি পাই না। সেই ২/৯/১৯৯০ সালে টাঙ্গাইল থেকে শেষ চিঠি লিখেছিলে আমাকে। এর পর ঢাকা গেলে। ১৯৯১ সালে ১১ ফেব্রুয়ারিতে আমাদের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে কোথায় গেলে আর ফিরে এলে না। চিঠিও দিলে না আর । চিঠির লেখায় তোমার খুব ঝোক ছিল। কোথায় আছ, কেমন আছ জানিয়ে একটা চিঠিতো অন্তত: দিতে পারতে। জানো বাবা তুমি চলে যাওয়ার এক মাস পরেই ছিল আমার এস.এস.সি পরীক্ষা । তোমার প্রতীক্ষায় ও চিন্তায় কিভাবে যে পরীক্ষা দিয়েছি তা মহান আল্লাহই জানেন। তোমার জন্য আমরা পাঁচ ভাইবোন ও আম্মা এখনও প্রতীক্ষায় আছি। হঠাৎ আচমকা একদিন তুমি চলে আসবে আমাদের সবাইকে বলবে দেখলি তোদের কেমন সারপ্রাইজ দিলাম। আমি না থাকলে তোরা আমাকে কতটুকু মনে করিস তা দেখতেই ক’দিন তোদের না জানিয়ে একটু ঘুরে আসলাম। মাঝে মাঝে রাতের বেলা ঘুম ভেঙে যায় তোমার কথা মনে পড়ে, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। বুকফাটা আর্তনাদ করি ভেতরটা গুমরে গুমরে ওঠে, সারারাত ঘুমাতে পারি না। সব সময় তোমার কথা মনে পড়ে। বাবা তোমার একটি নাতি ও একটি নাতনি হয়েছে। জারা ও জাইফ । ওরা তোমার ছবি দেখে আর বলে দাদা ভাই কোথায় বাবা? কবে আসবে দাদা ভাই? আমি ওদের সঠিক জবাব দিতে পারি না । সঠিক জবাব যে আমারও জানা নাই বাবা। তুমি কি আদৌ আসবে? নাকি আর আসবে না? আমি যখন ক্লাস টু কি থ্রিতে পড়ি ঈদের দিন সকাল বেলা চেইনওয়ালা জুতা কেনার জন্য তোমাকে ঈদের নামাজ পড়তে না দিয়ে সকাল বেলাতেই তোমাকে নিয়ে দোকানে গিয়ে জুতা কিনিয়ে ছেড়েছি। এখন বাবা তুমি নাই তাই কারও কাছে বায়না ধরতে পারি না। বাবা তুমি চলে এসো আর কোনদিন বায়না ধরবো না । কথা দিচ্ছি তোমার কথার অবাধ্য হবো না। জানো বাবা তোমরা যে ভাষার জন্যে লড়াই করেছিলে । আন্দোলন করার জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছিলে, জেল খেটেছিলে সেই দিবসকে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছে। তোমাদের আত্মত্যাগ বিশ্বব্যাপী আজ স্বীকৃত। তোমাদের ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলেই দেশ আজ স্বাধীন। আমরা আজ স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করার সুযোগ পেয়েছি। তবে তোমরা যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতার আন্দোলন করেছিলে সে শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানীরা চলে যেতে বাধ্য হয়েছে কিন্তু তাদের প্রেতাত্মারা আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে বাধার সৃষ্টি করছে। তবে আমরা আশাবাদী আজ না হোক আগামী ৪০/৫০ বছর পর হলেও দেশ হবে অসাম্প্রদায়িক, শোষণহীন ও মানবকল্যাণমুখী।
বি: দ্র: মা খুবই অসুস্থ গত ৩ বছর যাবৎ ক্যান্সারে ভুগছে। মার খুব কষ্ট হচ্ছে । দোয়া করো মা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। সম্ভব হলে মা’কে শেষ দেখা দেখে যাও। যেখানেই থাকো ভাল থেকো।তোমার প্রতীক্ষায় -
* আশরাফুজ্জামান স্বাধীন: ভাষাসৈনিক মতি মিয়ার ছেলে ও প্রভাষক, কম্পিউটার, সরিষাবাড়ী মহিলা কলেজ, জামালপুর।  ১১/০২/১৯

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top