logo
news image

নাটোরে সরিষা চাষে মধু আহরণ বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর।  ।  
চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। শুধু বাড়তি আবাদি জমিতে সরিষার চাষই নয়, সাথে পাওয়া গেছে মধু। সরিষা ফুলের জমি থেকে মৌ চাষিরা চার টনেরও অধিক মধু আহরণ করেছেন। আশাকরা হচ্ছে, সরিষার উৎপাদন প্রায় ছয় টনে পৌঁছবে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে জেলায় চার হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এক হাজার ৭০৯ হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে অর্থাৎ মোট ছয় হাজার ২২৯ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সিংড়া উপজেলায় সর্বাধিক তিন হাজার হেক্টর, নাটোর সদরে এক হাজার ৫০ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৭৫৫ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ৫৪৪ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ৩৮৫ হেক্টর, লালপুরে ২৫৫ হেক্টর এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় ২৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়।
রোপণ থেকে কর্তন পর্যন্ত ৭৫ থেকে ৮০ দিনের এ তেল জাতীয় শস্যটির কর্তন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রচলিত স্থানীয় টোরি-৭ জাতের সরিষার আবাদ সর্বাধিক। এই জাতের সরিষার জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। তাই কৃষকরা এ সরিষা আবাদ করে এ জমিতে খুব সহজেই বোরো ধান আবাদ করতে পারেন। পাশাপাশি চলতি মৌসুমে নতুন ও উন্নত বারি সরিষা-১৪ ও ১৫ এবং বিনা-৯ জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। এসব সরিষার জীবনকাল একটু বেশি হলেও ফলন বিঘাপ্রতি সাড়ে ছয় থেকে সাত মণ পর্যন্ত।
গুরুদাসপুর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম ২০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলেন। এরমধ্যে ১৮ বিঘাতে টোরি-৭ এবং দুই বিঘাতে বারি সরিষা-১৪ এর প্রদর্শনী খামার স্থাপন করেছিলেন। ইতোমধ্যে উভয় জাতের কর্তন ও শুকানো কার্যক্রম শেষ করেছেন তিনি। ফলন পেয়েছেন টোরি-৭ জাতের বিঘাপ্রতি সাড়ে পাঁচ মণ এবং বারি সরিষা-১৪ সাড়ে ছয় মণ করে।
জমিতে উৎপন্ন সরিষার বিক্রয় কার্যক্রমও শেষ করেছেন শফিকুল ইসলাম। এক হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে উৎফুল্ল শফিক বলেন, লাভজনক বলে গত ১২ বছর ধরে সরিষা আবাদ করছি। বিঘাপ্রতি চার হাজার টাকা উৎপাদন ব্যয় বাদ দিলে বিঘাপ্রতি মুনাফা হয়েছে চার হাজার ২০০ টাকা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় জেলায় আড়াই হাজার কৃষকের জমিতে সরিষার প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে তাদেরকে বীজ, সার ও সেচ সুবিধা দেওয়া হয়। গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় রাজস্ব খাতে এক বিঘার ৬০টি প্রদর্শনী এবং ডাল তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এক একর জমির নয়টি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়।
প্রদর্শনী খামারগুলোতে বর্তমানে মাঠ দিবস কার্যক্রম চলছে। মাঠ দিবসে এলাকার কৃষক সমাবেশে নতুন বীজের সুফল, সরিষা কর্তন শেষে ফলন এবং এর চাষাবাদ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল করিম।
বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে গুরুদাসপুরের বিলসা গ্রামের কৃষক মজিবর রহমানের সরিষার জমিতে মাঠ দিবস উপলক্ষে বিলচলন বহুমুখী স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনে আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনির হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
শুধু সরিষাই নয়, সরিষার জমি থেকে মধু আহরণও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এরফলে মধু আহরণই নয়, সরিষা ফুল থেকে মৌমাছির মধু সংগ্রহকালে পরাগায়নের হার বাড়ে। তাই সরিষার ফলন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
গুরুদাসপুর উপজেলার মৌচাষিীআব্দুল করিম এবার সরিষার জমিতে ১৭০টি মৌবাক্স স্থাপন করেছিলেন। মধু পেয়েছেন ৩৫ মণ। এ মধু খুচরা ২০০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে তিনটি উপজেলার ১০৭ হেক্টর সরিষার জমিতে মোট ৫২০টি মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছিল। এসব মৌবাক্স থেকে সোয়া চার টন মধু পাওয়া গেছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, অল্প খরচে অনায়াসলব্ধ সরিষা উৎপাদনে মুনাফার পরিমাণ বেশি। অন্যদিকে এ জমিতে মৌবাক্স স্থাপনের ফলে মধু আহরণ ছাড়াও ফুলের পরাগায়নে ফলন বৃদ্ধি পায়। কৃষি বিভাগের প্রণোদনা এবং প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের তৎপরতার কারণে জেলার কৃষকরা সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হয়েছেন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top