logo
news image

উৎসব মুখর আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা।  ।  
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সব দল নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনকে অর্থবহ করেছে। ভোটে আসা দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জয়-পরাজয় একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি বলতে চাই আওয়ামী লীগ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে এটা সত্য।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করায় শনিবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘বিজয় সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ও মহাজোটকে বিজয়ী করেছে। তিনি বলেন, এই বিজয় কেবল আওয়ামী লীগের নয়, এ বিজয় স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির, এ বিজয় সকল জনগণের। বিজয় উৎসবে আসার জন্য তিনি সেখানে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে পুলিশ বিজিবি আনসারসহ সকল সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি ভোটার ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। নিশ্চয়ই একটি কথা উপলব্ধি করেছে, ঐক্যবদ্ধ শক্তি সব সময় বিজয় অর্জন করে এটা প্রমাণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সকল রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনকে অর্থবহ করায় তাদেরও ধন্যবাদ জানান। তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, জয় পরাজয় স্বাভাবিক ব্যাপার। যখন দায়িত্ব পেয়েছে জনগণের সেবা করার, দল মত নির্বিশেষে সবার জন্য আমাদের সরকার কাজ করে যাবে। প্রত্যেকের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে। রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নাগরিক আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সকলের তরে, সকলের জন্য আমরা কাজ করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপুল বিজয়ের পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে তখন এই সরকার সবার জন্য কাজ করবে। সেখানে কোনো দল-মত দেখা হবে না। তিনি বলেন, যাঁরা ভোট দিয়েছেন বা যাঁরা ভোট দেননি তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ সবার জন্য কাজ করবে। উন্নয়নে জন্য কাজ করবে, রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, সকলের তরে, সকলের জন্য কাজ করে যাব।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারের পক্ষে জনগণ রায় দিয়েছে। জনগণ ভোট দিয়েছে, সে ভোটের সম্মান যাতে থাকে অবশ্যই আমরা মাথায় রেখে সার্বিকভাবে সুষম উন্নয়ন করে যাব। এ রায় সন্ত্রাসের, জঙ্গিবাদের, মাদকের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায়। নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা তাদের এটা মনে রাখতে হবে। দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা আমাদের কর্তব্য। বিজয় পাওয়া যত কঠিন, তা বিজয় রক্ষা করে জনগণের জন্য কাজ করা আরও কঠিন। সে কঠিন কাজের দায়িত্ব পেয়েছি, তা পালন করতে হবে, সেটাই আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণ জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। শান্তি ও উন্নয়নের স্বপক্ষে রায় দিয়েছে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার জন্য রায় দিয়েছে। তিনি বলেন, তরুণদের জন্য সুন্দর বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে রায় দিয়েছে জনগণ। মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশ গড়ে তোলার রায় দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যে অঙ্গীকার করেছি, সেই অঙ্গীকার আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পক্ষে রায় দিয়েছে দেশের মানুষ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে সবার সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এটাই মূল লক্ষ্য যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের চেতনা নিয়ে দেশ শাসন করে যাব। একটি উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। যেখানে দেশের মানুষের সকলের সহযোগিতা চাই। ছাত্র-শিক্ষকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহ্বান জানাই, ‘আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। যাতে তারা একটি উন্নত ও সুন্দর সমাজ পায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন যেমন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবং যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেভাবে আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে চাই। সে জন্য যা যা করা দরকার করব। প্রতিটি গ্রাম শহরের সকল নাগরিক সুবিধা পাবে। তৃণমূলে মানুষের জীবন উন্নত করব। শিক্ষার আলো প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে, প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।’
২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে বাংলাদেশ এগুলো উদযাপন করবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সেটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে দেশ থেকে যেমন দুর্নীতি দূর করতে হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সঙ্গে মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত দেশ করতে হবে যেখানে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে অঙ্গীকার করেছি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। ৪র্থ বারের মতো মানুষ আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, খুনিরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর কোনো রক্ত বেঁচে থাকবে না, যাতে করে বাংলাদেশ আবার উঠে দাঁড়াতে না পারে। আমি আর আমার ছোট বোন ছয় বছর বিদেশে ছিলাম। সে সময় দেখেছি বাংলাদেশের সেই চিত্র। ছিন্নবস্ত্র, দেখেছি মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, পেটে ক্ষুধার জ্বালা। তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে স্বপ্ন নিয়ে আদর্শ নিয়ে বাবা স্বাধীন করেছেন, সেটা পূরণ করে যেতে পারেননি, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নিয়ে যখন উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেন তখনই সেই ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েও প্রতিজ্ঞা করেছি এ দেশকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছি। যে বাংলাদেশে একটি মানুষও ক্ষুধার্ত থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, সবাই চিকিৎসা পাবে, তরুণেরা কর্মসংস্থান পাবে। বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, লক্ষ্য।’
এর আগে জয়বাংলা শ্লোগান আর ঢাক-ঢোলের বাদ্যে শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, রাজধানী ঢাকার সব পথেই ছিল আজ উৎসবের আমেজ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় উদযাপনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় আজ এ উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। শনিবার বিকালের এই জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেন দলটির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। অনুষ্ঠানের অনেক আগেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠান স্থল।
রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলো থেকেও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। লাল-সবুজ টি-শার্ট ও মাথায় ক্যাপ, সামনে বড় ব্যানার হাতে নিয়ে কেউ পায়ে হেঁটে বা পিকআপভ্যান, ট্রাক ও বাসে চড়ে জয়বাংলা স্লোগানে অলি থেকে গলিপথ পাড়ি দিতে থাকে মানুষ আর মানুষ। আর সবার গন্তব্যস্থল ছিল একটিই । ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
ভিতরে যারা ছিলেন বিশেষ করে সঙ্গীতশিল্পীরা , সকালে অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দিয়েই গানে গানে আর স্লোগানে স্লোগানে রাঙিয়ে তোলেন মূলপর্ব বক্তৃতা অনুষ্ঠান শুরুর আগ পর্যন্ত। শাহবাগ থেকে কাটাবন, এদিকে মৎস্যভবনের আগ পর্যন্ত ধনিত হতে থাকে সব সূরের মূর্ছনা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলম, ফকির আলমগীর, জানে আলম, সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, পথিক নবী, আঁখি আলমগীর, সালমাসহ অন্যান্য জনপ্রিয় সব সঙ্গীত শিল্পী এবং ব্যান্ড দল জলের গান তাদের পরিবেশনা দিয়ে মাতিয়ে রাখেন অনুষ্ঠানস্থলে আসা লোকজনদের।
তারা গানে গানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা এবং গত এক দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথাও তুলে ধরেন।
এই গান শেষ হওয়ার পর শুরু হয় জনসভা। অনুষ্ঠানের মধ্যমনি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ৩টার পরপরই অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন।এ সময় মুহুর্মুহু স্লোগানে আর জযবাংলা ধ্বনিতে তাকে স্বাগত জানান নেতা-কর্মী সমর্থকরা। প্রধানমন্ত্রী আসন গ্রহণের পরেই সরোয়ার এবং জিএম আশরাফের গাওয়া এবারের নির্বাচনি থিম সংগীত ‘জয়বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’, শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মর্াায় ভোট দিন এবং ‘জয় বাংলা জিতলো আমার নৌকা’ গানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো অনুষ্ঠান স্থল।
উদ্যানের ভেতরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয় বিশাল মঞ্চ। মূল মঞ্চটি সাজানো হয় দলের এবারের ইশতেহারের মলাটের রঙে।
বৈঠাসহ ছোট বড় বেশ কয়েকটি নৌকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ফেস্টুনে সাজানো হয় সমাবেশ মাঠ। একই দৃশ্য ছিল উদ্যানের বাইরে বিভিন্ন সড়কে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে লেখা রং বেরংএর ব্যানার ফেস্টুন মূল অনুষ্ঠানে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫৭টি আসনে জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। ভোটের ১৯ দিন পর আজ বিজয় উৎসব পালন করে আওয়ামী লীগ।
মঞ্চে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ফারুক খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, দীপু মনি প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের বেশিরভাগ সদস্য এ সময় মঞ্চে ছিলেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মূল অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন দলটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top