logo
news image

ঘোড়সওয়ার তাসমিনা

আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ।  ।  
নতুন ঘোড়া পেয়ে তাসমিনা ভীষণ খুশি। নতুন বছরে নতুন ঘোড়া ছুটিয়ে বেড়াবে এই বালিকা ঘোড়সওয়ার। প্রিয় ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাসমিনার খুব মন খারাপ হয়। ঘোড়া নিয়ে আর খেলার মাঠে নামা হয় না। ঘোড়া ছুটিয়ে পুরস্কার জিতে নেওয়া মেয়েটির কিছুই ভালো লাগে না। মেয়ের মন ভালো করার জন্য বাবা আবার নতুন ঘোড়া কিনে দিতে চান। পছন্দের ঘোড়া দাম করেন। কিন্তু টাকা জোগাড় করতে পারেন না। এবারও তাসমিনার পাশে এসে দাঁড়ায় প্রথম আলো। তাকে কিনে দেওয়া হয় একটি টগবগে ঘোড়া।
তাসমিনার বাবা ওবায়দুর রহমান জানান, অসুস্থ ঘোড়াটি মাত্র ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। একটি ভালো ঘোড়া কিনতে লাগবে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। মেয়েটার মন ভালো করার জন্য তিনি টাকা জোগাড় করার সব রকম চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো কিনারা করতে পারেন না। কেউ তাঁকে ধারও দেন না। ঋণ করার চেষ্টা করেও পারেন না। বাধ্য হয়ে তিনি প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হককে ফোন করেন। ভালো ঘোড়া হঠাৎ অসুস্থ হওয়া নিয়ে তাঁদের দুর্ভাগ্যের কথা জানান। মেয়ের মন খারাপের কথা বলেন। সব শুনে আনিসুল হক তাসমিনার বাবাকে নতুন ঘোড়া কেনার বাকি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকাই পাঠানোর আশ্বাস দেন। তিনি এই সহযোগিতা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটুকে। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে নতুন ঘোড়া কেনার টাকাও দিয়ে দেন বালিকা ঘোড়সওয়ারের জন্য।
এরই মধ্যে তাসমিনার বাবা নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার উমর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুজ্জামানের ঘোড়াটি পছন্দ করে রেখেছিলেন। ৫ ডিসেম্বর তাঁদের কাছে এই টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই সব টাকা দিয়ে ওবায়দুর রহমান মেয়েকে চেয়ারম্যানের ঘোড়াটি কিনে দেন।
পছন্দের ঘোড়া নিজের হাতে পেয়ে তাসমিনা এবার ভীষণ খুশি। এবার সে নিজের ভালো ঘোড়া নিয়েই মাঠে নামবে—তার চোখেমুখে এই আনন্দ ফুটে ওঠে। অনুভূতির কথা জানতে চাইলে তাসমিনা বলে, ‘প্রথম আলোর আর্থিক সহযোগিতায় কেনা আগের ঘোড়াটিও ভালো ছিল। এবারের ঘোড়াটি তার চেয়েও ভালো।’
ছোটবেলা থেকেই তাসমিনার শখ ঘোড়া ছোটানো। প্রতিযোগিতায় খেলার মতো ঘোড়া নিজের ছিল না। তবু যেখানেই ঘোড়দৌড়ের আয়োজন হয়, তাসমিনা বাবার সঙ্গে সেখানেই যায়। অন্যের ঘোড়া জিতিয়ে দেয়। পুরস্কার যা পায়, ঘোড়ার মালিককে দিয়ে দিতে হয়। সহৃদয়বান কোনো মালিক তাঁদের যাতায়াত ভাড়াটা দেন। তবু মেয়ের শখের কারণে বাবা চুপ থাকতে পারেন না। কোথাও প্রতিযোগিতার কথা শুনলেই মেয়েকে নিয়ে ছোটেন।
২০১৫ সালের ১৭ জুন প্রথম আলোর বুধবারের ক্রোড়পত্র অধুনায় ‘এক দুঃখিনী ঘোড়সওয়ারের গল্প’ শিরোনামে তাসমিনার ঘোড়দৌড়ে জেতার কাহিনি ছাপা হয়। ওই বছর ২০ নভেম্বর ঢাকার একজন ব্যবসায়ী তাসমিনাকে একটি ঘোড়া কিনে দেন। কিন্তু ঘোড়াটির এক চোখ অন্ধ ছিল। সেই ঘোড়াটি তার কোনো কাজে আসেনি। পরে অল্প কিছু দামে বাবা ওবায়দুর রহমান ঘোড়াটি বিক্রি করে দেন।
নিভৃত গ্রামের এই বালিকা ঘোড়সওয়ারের অদম্য প্রতিভার গল্প নিয়ে ২০১৬ সালে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা হয়। আনিসুল হকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন তানহা জাফরীন। বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত, লেখিকা ও শিক্ষাব্রতী বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিবস সামনে রেখে তার আগের দিন ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয়ে এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে তথ্যচিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী হয়। পছন্দমতো একটি ঘোড়া কিনে দেওয়ার জন্য প্রথম আলো থেকে তাঁদের দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। সেই ঘোড়াটিই সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাসমিনার বাবা ঘোড়াটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
নতুন ঘোড়া পাওয়ার পর ওবায়দুর রহমান বলেন, এবারের ঘোড়াটি মেয়ের মনের মতো হয়েছে। ঘোড়াটির বয়স কম। আরও বাড়বে। ঘোড়াটি যেমন লম্বা-চওড়া, তেমনি তেজি। দৌড়াবে ভালো।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top