logo
news image

নাটোরের বড়ভিটা বিল অভয়াশ্রম ঘোষনা

কালীদাস রায়।  ।  
পাখীর কিচির মিচির ডাক, মুক্ত আকাশে পাখীর ডানা মেলে উড়ে চলা, খাদ্যের সন্ধ্যানে যেখানে সেখানে পাখীর অবাধ বিচরণ দেখতে কার না ভাল লাগে! আর অতিথি বা পারিযায়ী পাখি হলে তো কোন কথাই নেই। এমনই লক্ষ লক্ষ অতিথি পাখির দেখা মেলে এখন বড়ভিটা বিলে। নাটোর শহরের অদূরে পিটিআই মোড় সংলগ্ন বড় হরিশপুর ইউনিয়নের বড়ভিটা বিল এখন লক্ষ লক্ষ পারিযায়ী পাখির আবাস্থল। অবাধে বিচরণ করে এসব অতিথি পাখি প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে চলেছে নীরবে। প্রতিবছর এখানে অতিথি পাখির সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। নাটোর জেলায় হাওর-বাওর না থাকলেও রয়েছে ছোট বড় বেশ অনেক বিল। এখানে অতিথি পাখীদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতের সময় প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ অতিথি পাখির দেখা মেলে এইসব বিলগুলোতে। মূলত সোল্লি, বদর, লালমোন, শামুকখোল, বক, বালিহাঁস, কাইয়ুমসহ নানা প্রজাতির পাখির কিচির মিচির ডাকে মুখরিত থাকে বড়ভিটার এই বিলের সর্বত্র। বিলের দেশী ছোট ছোট মাছই মূলত এসব পাখীর প্রধান খাদ্য। এখানে যারা পুকুর ও খালে মাছ চাষ করেন তারা এই সব অতিথি পাখীদের অবাধ বিচরনে ও সংরক্ষনে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। বিগত ৩/৪ বছর আগেও নাটোর শহরের পাদদেশে অবস্থিত বড়ভিটা বিলে এত পাখি দেখা যায়নি। বর্তমানে বড়ভিটা বিলে বিচরণ করা পারিযায়ী পাখির সংখ্যা ৫-৬ লক্ষ হবে বলে ধারনা স্থানীয় পাখী প্রেমীদের। চলতি বছর হঠাৎ করে এখানে বেড়েছে এসব অতিথি পাখীর সংখ্যা। আর এখানে প্রতিদিনই সকাল-বিকাল অনেক দর্শনার্থীই আসেন এই পারিযায়ী পাখীর কলতান, মুক্ত নীলাকাশে রাশি রাশি পাখির ডানা মেলে উড়ে চলা, আবার বিলের পানিতে নামা, খাবার সন্ধানের মোহময় দৃশ্য উপভোগ করতে। মনের অজান্তেই কিংবা অতি উৎসাহ আর ভাল লাগায় পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে অতিথি পাখীর অবাধ বিচরণের মনোমুগ্ধকর, মোহময় দৃশ্য ধারনের লোভ সম্বরণ করতে পারেন না দর্শনার্থীরা। বিকালে এখানে এসে অনেককেই কোলাহল মুক্ত, প্রাকৃতিক মুক্ত পরিবেশে অতিথি পাখীর প্রেমে হাবুডুবু খেতে দেখা যায়। সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে খোদ জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বড়ভিটার এই বিলের অতিথি পাখী পরিদর্শনে যান। এ সময় এক সঙ্গে লক্ষ লক্ষ পাখী একসাথে দেখে উচ্ছসিত, রোমাঞ্চিত হয়েছেন তিনি। তিনি নিজে মোবাইল ফোনে নীলাকাশে পাখীর অবাধ বিচরনের দৃশ্য ধারন করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেই ভিডিও ও ছবি আপলোড করেন। সেখানে অবস্থানকালেই সাংবাদিকদের সামনে তিনি বড়ভিটা বিলকে অতিথি পাখীর অভয়াশ্রম ঘোষণা করেন। সেই সাথে এখানে পাখীর অভয়ারণ্য তৈরী ও সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন।
একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের সফরঙ্গী অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজ্জাকুল ইসলাম আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে জানান, তিনি একসঙ্গে এত পাখী কখনও দেখেননি। নিজের ফেসবুক পেজে এ্যামাইজিং বলে অভিহিত করে একটি ভিডিও পোস্ট দিয়েছেন।
সামাদ নামে এখানকার এক মাছ চাষী জানান, এখানে এইসব পারিযায়ী পাখি সকাল বিকাল এখানে বিচরণ করে। এই পাখীরা মূলত দেশী প্রজাতীর ছোট ছোট মাছ খায়। আমাদের মাছ চাষে লোকসান হলেও আমরা এইসব পাখীরা যাতে এখানে অবাধে বিচরণ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখি। এর আগে অনেক শিকারীরা বন্দুক, জাল, ফাঁদ দিয়ে এইসব অতিথি পাখী শিকার করতে এসেছে। কিন্তু আমরা পাখীর শিকার করতে দেয়নি। এজন্য শিকারীদের সাথে আমাদের ঝামেলা হয়েছে, অনেক হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসন যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এই অতিথি পাখী সংরক্ষনে আর কোন সমস্যা থাকতো না।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top