logo
news image

ভাঙ্গুড়ায় বাউৎ উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ভাঙ্গুড়া (পাবনা)।  ।  
কুয়াশায় মোড়ানো ভোর থেকে বিলপাড়ে জড়ো হতে থাকে মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের উপস্থিতি। সবার কাঁধে পলো বা মাঝ ধরার বিভিন্ন উপকরণ। শীতের দিনে শুকিয়ে যাওয়া খাল-বিলে মাছ শিকারের উদ্দেশে আসেন শিশু থেকে বৃদ্ধ—বিভিন্ন বয়সী শৌখিন মৎস্য শিকারি। ঘটা করে মাছ ধরার এই উৎসবের নাম বাউৎ উৎসব। আর পলো দিয়ে মাছ ধরেন যাঁরা, তাঁদের বলা হয় বাউৎ। সম্প্রতি এমনই উৎসব হয়েছে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের রুহুল বিলে।
দীর্ঘদিন ধরে পাবনার বিল এলাকায় এই বাউৎ উৎসবের রেওয়াজ রয়েছে। বিলের পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পদ্ধতিতে মাছ ধরা শুরু হয়। আগে বিলে প্রচুর মাছ ছিল। ফলে এই মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই পলো দিয়ে অসংখ্য মৎস্য শিকারি মাছ ধরত। কিন্তু এখন মাছ কমে গেছে। ফলে বিলপাড়ের ২০ থেকে ২৫টি গ্রামের মানুষ একত্র হয়ে এই উৎসবের আয়োজন করে। ঘটা করে দিন ধার্য হয়। এরপর সবাই মিলে মাছ শিকারে নামে। ধনী-গরিব ভেদাভেদ নেই এই উৎসবে। যাঁর একটি পলো আছে, সেই নামতে পারে মাছ শিকারে। বর্তমানে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার চলছে এই উৎসব। কোন এলাকায় মাছ ধরা হবে, তা সবাই মিলে ঠিক করে। মাছ না পেলেও অনেকে শখের বসে অংশ নেয় এই উৎসবে।
আব্দুল খালেক স্মৃতিচারণ করেন, ৫০ বছর আগে আমিও এভাবে খালি হাতে, পোলো ও নাফি জাল দিয়ে মাছ ধরতাম আমাদের পাশের গ্রামের বিলে প্রতি বছর শীতকালে নির্দিষ্ট দিনে কয়েক গ্রামের মানুষ মিলে একসাথে।খালি হাতে মাছ ধরাকে বলে হাসতালিয়ে মাছ ধরা। এভাবে মাছ ধরতে গিয়ে আংগুলে শিংগী মাছের বিষকাঁটা খেয়ে কত যে কেঁদেছি।নাফি জাল হলো বাঁশের বাতার হাতলযুক্ত ছোট জাল।ঝাকি জাল ছিল নিষিদ্ধ। একদিকে ঠান্ডা পানির দাঁত কাপানি হি হি শীত আর কই, ট্যাংরা, শিংগীর কাঁটার জ্বালা অন্যদিকে শত লোকের সাথে হৈ হুল্লা করে নিজের হাতে জ্যান্ত মাছ ধরা সে ছিল এক শিহরন জাগানো আনন্দ অভিযান! এখানেই শেষ না, বিল থেকে ফিরে খালুই ভর্তি মাছ যখন আংগিনায় মায়ের সামনে ঢেলে দিতাম তখন মায়ের হাসিভরা উজ্বল চোখ খুশিতে ঝিকিয়ে উঠতো। সেটা মাছ দেখে যতটা না তার চেয়ে বেশি তার বালক ছেলের মহাকৃতিত্ব দেখে ! এখন সেই বিলও নাই বিলে সেই মাছও নাই।আজ ৪৮ বছর আমি গ্রাম ছাড়া শহর বাসী।এই ৪৮ বছরে আমি বিলেও যাইনি মাছও ধরিনি।এখন আমি মাছ খাই শহরের পাকা বাজার বা সুপার শপ থেকে কিনে। তাতে টাকার শ্রাদ্ধ আছে, আনন্দের শিহরন নাই এক ফোঁটাও।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top