logo
news image

নাটোরে সমৃদ্ধ বোরো মৌসুম

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর।  ।  
নতুন জাতের বোরো ধান আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত ও রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নাটোরের কৃষকরা। পুরনো অভিজ্ঞতার পাশাপাশি নতুন নতুন বীজ আর প্রযুক্তির পরিকল্পনায় সমৃদ্ধ বোরো মৌসুমের প্রত্যাশা তাদের। গত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে শুরু হওয়া বোরো আবাদের কার্যক্রম চলবে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত।
নাটোরের শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল ও হালতিবিল জুড়ে এখন বিশাল কর্মযজ্ঞ। বোরো চাষে পুরনোর পাশাপাশি নতুন জাতের বীজ নিয়ে নতুন আশায় বসতি গড়ছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কৃষকরা ইতোমধ্যে নতুন জাতের বীজ যথাক্রমে ব্রি-৮১, ব্রি-৮২, ্িব্র-৮৪ ও ব্রি-৫৮ রোপণ শুরু করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে অন্যান্য জাতের তুলনায় একটু আগেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন এমন আশা করছেন তাঁরা। আর কৃষি বিভাগ মনে করছে, এসব নতুন জাতের বোরো ধানের উৎপাদন আশানুরূপ হলে বীজের উৎপাদন ও ব্যবহারে কৃষকরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ বোরো মৌসুমে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে চারা রোপণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে সদর উপজেলায় ২ হাজার ৭০৮ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ৭ হাজার ৮৬০, সিংড়ায় ৩৪ হাজার ৫৬৩, গুরুদাসপুরে ৪ হাজার ৮২, বড়াইগ্রামে ৪ হাজার ৯৯৫, লালপুরে ১ হাজার ১০৮ ও বাগাতিপাড়ায় ৬৮৪ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলনবিল এলাকার কৃষক আব্দুল বারি, সোলেমান মিয়া ও ইদ্রিস আলী জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা এবার নতুন জাতের বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা প্রস্তুত করেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তা রোপণ করা হবে। নতুন জাতে নতুন কিছু পাওয়ার আশা করছেন তারা। তবে তারা পরীক্ষামূলকভাবে দুই-তিন বিঘা করে নতুন জাতের বীজ আবাদ করবেন বলে জানান। হালতিবিলের কৃষক কাউসার রহমান, বেলাল হোসেন ও আব্দুল গফুর জানান, তারাও পরীক্ষামূলকভাবে নতুন জাতের ধানের বীজ ইতোমধ্যে জমিতে রোপণ করেছেন। আশানুরূপ ফলন হলে আগামীতে আরো বেশি করে এসব জাতের ধান চাষ করবেন এবং বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবেন।
এবার এলাকার কৃষদের মধ্যে নতুন নতুন জাতের বীজ সংগ্রহের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে জিরাশাইলের বিপরীতে ব্রি ধান-৮১ , ব্রি-২৮ ও ২৯ এর বিপরীতে ব্রি ধান-৫৮, ৮১ ও ৮৪, ব্রি ধান-২৯ এর বিপরীতে ব্রি ধান-৫৮ এবং স্বর্ণার বিপরীতে ব্রি ধান-৮২। এরপরেও কৃষকরা সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ধান বীজ রোপণ করছেন ব্রি ধান-২৮ ও ২৯।
এদিকে কৃষি বিভাগ বোরো মৌসুমকে সমৃদ্ধ করতে আবাদি জমিকে বিভিন্ন প্রযুক্তির আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে। এরমধ্যে শতভাগ জমিতে পার্চিং ব্যবহার করা হবে। ৬০ শতাংশ জমিতে সঠিক বয়সের চারা রোপণ, সারিতে চারা রোপণ, সুষম সার ব্যবহার ও এলসিসি ব্যবহার করা হবে। ৩০ শতাংশ জমিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। জৈব সার ব্যবহার করা হবে ১০ ভাগ জমিতে। আর এক হাজার ৬৪০টি আলোক ফাঁদ স্থাপন করে ক্ষতিকর পোঁকামাকড় দমনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ নতুন জাতের বীজ ব্যবহার ও বিভিন্ন প্রযুক্তি গ্রহণের জন্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। এজন্যে মাঠ কর্মীরা নিরলসভাবে কৃষকদের কাছাকাছি থেকে তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকদের উদ্যোগ ও কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টা সফলতা লাভ করবে, আবাদি জমি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ফলন হবে আশাতীত।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top