নন্দীকূজা আর নদী নয় ফসলী জমি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়াইগ্রাম (নাটোর)। ।
অপরিকল্পিত স্লুইসগেট নির্মাণ, দখল আর নাব্য সংকটে নন্দীকূজা নদী এখন পুরোদস্তুর ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। সময়ের বিবর্তনে এক সময়ের স্রোতস্বিনী নদী বর্তমানে বিলীন হওয়ার পথে। এতে পরিবেশ বিপর্যয় ও সেচ কাজে স্থবিরতা নেমে আসার পাশাপাশি নদীতে পানি না থাকায় জেলেরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জানা গেছে, রাজশাহীর চারঘাট থেকে উৎপত্তি হয়ে পদ্মার শাখা বড়াল নদী বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া এলাকায় এসে বনপাড়া অভিমুখে চলে গেছে। আর এখান থেকে নদীর অপর একটি ধারা নন্দীকূজা নামে আহম্মেদপুর হয়ে গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড়ে আত্রাই নদীতে গিয়ে পড়েছে। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে এক সময় ছোট-বড় নৌকায় করে মাঝিমাল্লা ও সওদাগররা ছুটে চলতেন।
জেলেরা মাছ ধরে আশপাশের বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রথমে চারঘাটে বড়ালের উৎসমুখে এবং পরে নব্বইয়ের দশকে আটঘরিয়ায় দুটি স্লুইসগেট নির্মাণ করে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পলি জমার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘদিনেও ড্রেজিং না করায় নন্দীকূজা নদী ভরাট হয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, নদীটি দৈর্ঘ্য-েপ্রস্থে কমে শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে শুকনো নদীর মাঝখানে ৬-৭ হাত প্রস্থের একটি পানির ধারা বহমান রয়েছে।
পানি সংকটে নদীতে মাছ না থাকায় দুই তীরে বসবাসকারী হাজার হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। মাঝিরাও জীবিকার প্রয়োজনে ছেড়ে দিয়েছেন বাপ-দাদার পেশা। পানির প্রবাহ না থাকায় তীরবর্তী মানুষরা নদীর বুকে ফসলের চাষ করেছেন। কেউ কেউ প্রথমে নদীর বুকে বীজতলা করেছেন, পরে সেসব বীজতলা থেকে চারা তুলে সেখানেই রোপণ করেছেন। কেউ বুনেছেন গম বা খেসারির বীজ।
স্থানীয় সমাজসেবক আলী আকবর জানান, নদীতে এক সময় সারা বছর পর্যাপ্ত পানি থাকত। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প দিয়ে নদীর পানি তুলে এলাকার পাঁচটি বিলে স্বল্পমূল্যে সেচ দেয়া হতো। কিন্তু নদী ভরাট হয়ে পানি কমে যাওয়ায় বছর দশেক আগে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে বর্তমানে নদী তীরবর্তী মানুষ চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। শনিবার উপজেলার রামাগাড়ি এলাকায় নদীতে ডিঙ্গি নৌকায় জাল নিয়ে মাছ ধরতে বের হওয়া বৃদ্ধ মৎস্যজীবী দুখু মিয়া বলেন, ‘ছোটকাল থেইকে বাপ-দাদার সাথে নদীত মাছ ধরিছি। কিন্তু এখন সে নদীও নাই, সেই মাছও নাই। জাল আর নৌকা নিয়ে ঘুরিচ্ছি, কিন্তু মাছ পাচ্ছিনে।’ জোয়াড়ী ইউপি চেয়ারম্যান চাঁদ মোহাম্মদ বলেন, নন্দীকূজা নদীর সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। কিন্তু নদী মরে যাওয়ায় তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই দ্রুত নদীটি পুনঃখনন জরুরি হয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য