logo
news image

প্রকৃতির প্রকৌশলী বাবুই ও চড়ুই

সাব্বির আহম্মেদ রুমন।  ।  
“বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই,
কুড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহা সুখে অট্টালিকা পড়ে,
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে”।
“স্বাধীনতার সুখ” কবিতার কবি রজনী কান্ত সেন’র চির চেনা সেই বাবুই ও চড়ুই পাখি আমাদের সকলের পরিচিত একটি পাখি হলেও এখন শুধু পাঠ্য বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাবুই পাখি গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। গ্রামের তালগাছের পাতায় পাতায় বাবুই পাখির বাসা ঝুলে না থাকলে যেন গ্রামের সৌন্দর্যই থাকে না।
অসচেতনতা, পাখি শিকার এবং আবাসনব্যবস্থার কারণে গাছ কেটে ফেলার কারণে গ্রামবাংলার এই নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই ও চড়ুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। বিরূপ প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্রের তারতম্যের কারণে আগের মত এখন আর অহরহ বাবুই পাখির মুখরিত কিচিরমিচির ডাক শোনা যায় না। ঘুম ভাঙে না ঘরের কোণের টিনের নীচে বাসা বাধা চড়–ই পাখির ডাকে। এর পেছনের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ফসলি জমিতে বিষ প্রয়োগ। কারণ বাবুই পাখি সাধারণত বিভিন্ন ফসলের বীজ, ধান, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু, রেণু প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে। ফসলি জমিতে অতিরিক্ত বিষ প্রয়োগের কারণে বিপণ্ন পাখির তালিকায় উঠে এসেছে বাবুইয়ের নাম।
বাবুই পাখিকে মূলত শিল্পী পাখি বলা হয়। এরা পরিশ্রমী পাখি হিসেবেও সমধিক পরিচিত। এরা আকারে ছোট হলেও খুব চতুর ও বুদ্ধিমত্তার সাথে বাসা তৈরি করে। গ্রামীণ জনপদে খড় কুটো সংগ্রহ করে তাল গাছে শত শত বাসা বুনতে দেখা যেত প্রকৃতির প্রকৌশলী, সুনিপূণ কারিগর বাবুই পাখিদের। আশ্চর্য শৈল্পিক দক্ষতায় বাসা বুনত সুদক্ষ কারিগর এই পাখিরা। লম্বা ঘাস, শক্ত পাতার চেরা ফালি দিয়ে পা ও ঠোঁটের সাহায্যে গিঁঠ দিয়ে মানুষের হাতের নাগালের বাইরে ছেলে বাবুইরা বাসা বোনার পর মেয়ে বাবুই এসে সেই বাসা টেনেটুনে পছন্দ করলে তখনই তাদের বাসা বোনা শেষ হয়। প্রবল ঝড় বাতাসেও টিকে থাকে তাদের বাসা। অত্যন্ত সুরতি এই বাসা ঝড়ে উল্টে না গেলে বৃষ্টিতেও পানি ঢুকবে না, ডিমও পড়বে না। খড়ের টুকরো, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার বাসা তৈরি করতো বাবুই পাখিরা। সে বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত।
বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা আজ আর চোখে পড়ে না। চোখে পড়বেই বা কেন এখন অনেক এলাকা থেকে তালগাছ প্রায় বিলিন হয়ে গেছে। তালগাছ কেটে আবাদি জমি প্রশার বা ঘর বাড়ি দালান কোঠা তৈরি করছে এই মানব জাতি। তাই এখন এক গবেষনায় দেখা যাচ্ছে, জমিনে পাহাড়ি উঁচু উঁচু কোন গাছপালা না থাকায় বিজলী চমকিয়ে আকষ্মিক বজ্রপাত বা ডাক এই জমিনে পতিত হচ্ছে যার ফলে মানুষের উপরে পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে তালগাছ না থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে না বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্পী, কারিগর, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা। প্রবল ঝড়ে বাতাসে দোল খেতে খেতে টিকে থাকে তাদের বাসা। বাবুই পাখি শক্তবুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন। গ্রামাঞ্চলের তাল গাছ ও খেজুর গাছ বিলুপ্তির কারণে বাবুই পাখির আবাসস্থল এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এত বিপর্যয়ের পরেও লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বিলশলিয়া গ্রামের কিছু কিছু খড়ের বাড়িতে দেখা মিলে চড়ুই পাখির নৈপূণ্যে তৈরী বাসার।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top